ওয়াসার মোড়ে যুবলীগ নেতাকে মারধর ভিডিও ভাইরাল

ব্যাংকে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৪ অক্টোবর, ২০২০ at ৫:১০ পূর্বাহ্ণ

লোকজনকে ব্যাংকে চাকরি দেওয়া ও জায়গা কিনে দেওয়ার কথা বলে বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাপ্পী চৌধুরী নামে পটিয়ার এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে। এসব টাকা ফেরত পাওয়ার দাবিতে গত সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে দামপাড়া এলাকায় তাকে আটক করে মারধর ও জুতাপেটা করেন প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীরা। ঘটনার পর সোমবার রাত থেকেই মারধর ও জুতাপেটার একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ঘটনাটি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। পরে সাবেক এক কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতার মাধ্যমে সমঝোতা করে হাতিয়ে নেওয়া টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাসে রাত ৩টার দিকে ছাড়া পান তিনি।
বাপ্পী চৌধুরী পটিয়া উপজেলার খরনা ইউনিয়ন যুবলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি। ইতিমধ্যে তাকে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে চিঠি দিয়েছে পটিয়া উপজেলা যুবলীগ।
জানা গেছে, নগরীর আছদগঞ্জ এলাকার একটি শিল্প গ্রুপের অফিসে মাঝেমধ্যে যাতায়াতের সুযোগ নিয়ে বাপ্পী চৌধুরী বিভিন্ন ব্যাংকে চাকরি দেওয়া ও জায়গা কিনে বেশি দামে বিক্রি করার কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এর মধ্যে নগরীর দামপাড়া এলাকার এক মহিলার কাছ থেকে প্রায় ১৫ লাখ টাকা কৌশলে হাতিয়ে নেন। বিভিন্ন ব্যাংকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে নোয়াখালীর নাছির উদ্দিন প্লাবন, মহেশখালীর মো. কায়সার, বাঁশখালীর জাফরুল আলম, চকরিয়ার মো. মহসিন, সাতকানিয়ার আবদুর রহিম ও বাঁশখালীর মো. ফয়সালের কাছ থেকে ৯ লাখ এবং অপর এক যুবককে পুলিশের চাকরি দেওয়ার কথা বলে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।
সোমবার রাতে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, প্রতারণার শিকার কয়েকজন পুরুষ ও মহিলা বাপ্পীকে আটক করে মারধর করেন। এসময় বাপ্পী টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছিলেন বিক্ষুব্ধদের। পরে বিক্ষুব্ধরা তাকে জুতাপেটা করতে থাকেন। দিবাগত রাত ৩টার দিকে প্রতারণা করে নেওয়া টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাসে সমঝোতা করে ছাড়া পান বাপ্পী। বাপ্পীর ব্যবহৃত ব্যক্তিগত গাড়িটিও সমঝোতাকারী এক যুবলীগ নেতার জিম্মায় রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া ভুক্তভোগী ওই মহিলা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমার নাম পত্রিকায় এলে পরিবারে অশান্তি হবে। আমি যৌথ পরিবারে বসবাস করি।
প্রতারণার শিকার যুবক নাছির উদ্দিন প্লাবন বলেন, এক বন্ধুর মাধ্যমে বাপ্পীর সাথে পরিচয়। স্থানীয় রাজনৈতিক বড় বড় নেতার নাম বলেছেন। দুই মাসের মধ্যে চাকরি দেওয়া কথা বলে আমাদের ৬ জনের কাছ থেকে ৯ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। গত দুই বছর আমাদের চাকরি হয়নি। টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না। গা ঢাকা দিয়ে থাকেন। সোমবার আমরা সবাই মিলে তাকে পেয়েছি। এখন সায়েম ভাইয়ের মাধ্যমে সমঝোতা হয়েছে। টাকা ফেরত দিয়ে দেবে বলেছেন।
পটিয়া উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক হাসান উল্লাহ চৌধুরী আজাদীকে বলেন, মঙ্গলবার সকালে ফেসবুকে একটি ভিডিও দেখে সোমবার রাতের বিষয়টি জেনেছি। বেশ কয়েকদিন ধরে বাপ্পী চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ায় তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের জন্য যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন নিখিল ভাইয়ের কাছে গত সপ্তাহে চিঠি পাঠিয়েছি। এর আগে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে খরনা ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতির পদ থেকেও তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তার সঙ্গে উপজেলা যুবলীগের কোনো সম্পর্ক নেই।
মারধর ও ভিডিও ভাইরালের বিষয়ে জানতে বাপ্পী চৌধুরীর মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবস্তা ফুঁড়ে বেরিয়েছে শিকড়
পরবর্তী নিবন্ধনানিয়ারচরে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা, গোলাগুলিতে নিহত ২