নিবন্ধনহীন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলো বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের (প্রশাসন) সভাপতিত্বে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এতে বলা হয়, যেসব ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিকের লাইসেন্স নেই, তিন দিনের মধ্যে সেগুলো বন্ধ করা না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা সিভিল সার্জন ও বিভাগীয় পরিচালকদের বলা হয়েছে। এছাড়া নিবন্ধন নবায়ন না করা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও নবায়নের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিতে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। সভায় অস্ত্রোপচারের সময় অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার কাজে এবং অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) অনিবন্ধিত চিকিৎসক রাখা হলে স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রসহ জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
এরপরও হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার চলছে অবৈধভাবে। বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই সেসব প্রতিষ্ঠানে নির্বিঘ্নে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম নগরীর চারটি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালানো হয়েছে। ২১ জানুয়ারি দৈনিক আজাদী পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়, বৈধ কাগজ ও প্রশিক্ষিত ফিজিওথেরাপিস্ট না থাকায় এগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গত শনিবার এসব প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন শেষে বন্ধের নির্দেশনা দেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ। সিভিল সার্জন বলেন, নগরীর দক্ষিণ হালিশহরের নিউ চাঁদের আলো হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালানো হয়। বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় প্রতিষ্ঠানটিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই অবস্থা দক্ষিণ হালিশহরের সেবা ডেন্টাল অ্যান্ড ফিজিওথেরাপি সেন্টারের। বৈধ কাগজ দেখাতে না পারায় ও প্রশিক্ষিত ফিজিওথেরাপিস্ট না থাকায় প্রতিষ্ঠানটিকে বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বৈধ কাগজ দেখাতে না পারায় বন্দর এলাকার ন্যাশনাল চক্ষু হাসপাতালকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযান চালানো হয় অগ্রণী ল্যাব ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। বৈধ কাগজ দেখাতে না পারায় এই প্রতিষ্ঠানটিকেও বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি এবং অনিয়মের অভিযোগ নতুন নয়। কিন্তু করোনাভাইরাস সংকট শুরু হওয়ার পর স্বাস্থ্য খাতের নাজুক অবস্থার চিত্রটি প্রকাশ হয়ে পড়েছে। দরকারি উপকরণের অভাব, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে অভিযোগ, হাসপাতালে সেবার অভাব, নিয়োগ আর কেনাকাটায় একের পর এক দুর্নীতির খবর যেন এই খাতের বেহাল দশাকেই তুলে ধরেছে। ২০২০ সালের বৈশ্বিক দুর্নীতির সূচকে দুই ধাপ নিচে নেমে বাংলাদেশের অবস্থান হয়েছে ১২তম আর এই অবনমনের পেছনে করোনাভাইরাস মহামারিতে স্বাস্থ্য খাতের ব্যাপক দুর্নীতিকে অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। টিআইবি বলেছে, আমূল সংস্কারের পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম–দুর্নীতিতে জড়িতদের সঠিক শাস্তি না হওয়ার কারণেই এই খাত দুর্নীতিমুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনিয়ম দুর্নীতিকে কখনো প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। বহুদিন ধরে স্বাস্থ্য খাতে যে অনিয়ম চলে আসছে সেটি দূর করে স্বাস্থ্য খাতের উপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জিং কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহর ভিত্তিক বড় বড় হাসপাতালগুলোতেই কেবল নজরদারি বাড়ানো হলে এ খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে বলে মনে হয় না। স্বাস্থ্য খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে তৃণমূল পর্যন্ত শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে এ খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, দুর্নীতি রোধে কয়েক দফা সুপারিশ করা হলেও এর কোনোটিই বাস্তবায়ন হয় নি। তাঁরা মনে করেন, বহুদিন ধরে স্বাস্থ্যখাতে যে অনিয়ম চলে আসছে, সেটি দূর করে স্বাস্থ্যসেবায় মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নিবন্ধনহীন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলোর বন্ধের ঘোষণা খুবই সময়োপযোগী। অনেক আগেই এই পদক্ষেপ নেওয়া গেলে স্বাস্থ্য খাত সমৃদ্ধ হতো নিঃসন্দেহে। ওষুধ, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিষয়ে সরকারকে হতে হবে নির্মোহ ও কঠোর। কোনো রকমের অনিয়মের প্রশ্রয় পেলে ভয়াবহ রূপ পাবার আশংকা রয়েছে। আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই অভিযানের সফলতা প্রত্যাশা করছি।