নামের আগে ‘আওয়ামী’, পরে ‘লীগ’ শব্দটি থাকলেও এতদিন ধরে আওয়ামী ওলামা লীগের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করে আসছিলেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তবে আওয়ামী লীগের সেই দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসার ইঙ্গিত মিলেছে। নানা কর্মকাণ্ডের জন্য বিতর্কিত সংগঠনটিকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি।
গতকাল ওলামা লীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ওলামা লীগকে শেখ হাসিনার পরীক্ষিত সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। ওলামা লীগ কি সহযোগী সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি পাবে? জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সেটা নেত্রী ঠিক করবেন। খবর বিডিনিউজের। ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ওলামা লীগের প্রথম এই সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের ছাড়াও আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপও ছিলেন। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে গোলাপ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে অনুমতি নিয়ে এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে।
প্রায় তিন দশক ধরে সক্রিয় ওলামা লীগ বরাবরই যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগের মতো আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের মর্যাদা চেয়ে আসছে। তা না পেলে অন্তত স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের মতো ‘সমমনা’ সংগঠনের স্বীকৃতিও তাদের চাওয়া। তবে ‘পহেলা বৈশাখকে ইসলামবিরোধী ও অনৈসলামিক আখ্যায়িত’ করে বিবৃতি দেওয়ার মতো নানা ঘটনা ঘটিয়ে অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরির কারণে সংগঠনটি থেকে দূরত্ব বজায় রাখছিল আওয়ামী লীগ। ২০১৯ সালে বিপিএল নিষিদ্ধ এবং বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন বাতিলের দাবি তোলার পর ওলামা লীগের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছিল আওয়ামী লীগ। দলের হয়ে তখন বিবৃতিটি এসেছিল তৎকালীন দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপের মাধ্যমেই। গোলাপ গতকাল ওলামা লীগের সম্মেলন বলেন, এতদিন ওলামা লীগ বিভিন্ন ধারায় চলেছে, বিতর্কিতভাবে চলেছে। আওয়ামী লীগ এক কথা বলছে, ওরা পেছন থেকে অন্য কথা বলেছেন। বিরোধী কথাবার্তা বলা যাবে না। শেখ হাসিনার সরকার যে কথা বলবে, তার সঙ্গে মিলিয়ে আপনাদের কথা বলতে হবে।
সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র ঠেকাতে ওলামা লীগকে সক্রিয় থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কীভাবে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা যায়, এটা নিয়ে বিএনপি–জামায়াত কাজ করছে। চোখ–কান খোলা রেখে রাজপথে থাকতে হবে। কোনো ষড়যন্ত্র যাতে শেখ হাসিনার সরকারকে হটাতে না পারে, সেই জন্য সতর্ক থাকতে হবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সম্মেলনে বলেন, যারা রাজপথের আন্দোলনে ছিল, পুলিশের আক্রমণের মুখেও রাজপথ ছাড়েননি এবং নেত্রীর নির্দেশ অমান্য করেননি… দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল, তারা সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠিত হবে। সময় লেগেছে, তবে তাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশে এই সম্মেলন হচ্ছে।
তিনি বলেন, দলাদলি করবেন না, বদনাম কামাবেন না। ওলামা লীগের নামে চাঁদাবাজি করবেন না। বদনাম যেন না হয়। প্রোগ্রাম করবেন, পয়সা না থাকলে আমাকে বলবেন। নেত্রীকে আমি বলব, আপনাদের খরচ যেটা প্রয়োজনীয় সেটা নেত্রীই বহন করবে। আমরা ওলামা লীগকে একটি সুশৃঙ্খল, সুসংগঠিত, নীতি–আদর্শের প্রতি অনুগত বঙ্গবন্ধুর সত্যিকারের সৈনিক সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনে কমিটির ঘোষণা সাধারণত আসে ওবায়দুল কাদেরের কাছ থেকে। ওলামা লীগের কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি বলেন, যেহেতু প্রথম সম্মেলন সেজন্য কতজনকে নিয়ে কমিটি হবে, কীভাবে কমিটি পরিচালিত হবে… আমাদের একটা রাজনীতি আছে, সেই রাজনৈতিক আদর্শের প্রতিফলন থাকবে, গঠনতন্ত্রও থাকতে হবে। নেতাকর্মীদের আশা ও বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটিয়ে একটি সুন্দর কমিটি কীভাবে আওয়ামী ওলামা লীগকে উপহার দেওয়া যায়, সেই ব্যাপারে সিনিয়র কয়েকজনের সঙ্গে আলোচনা করে একটি প্রস্তাব নিয়ে আমি নেত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে তা বাস্তবায়ন করব।