নুরুল হাসান সোহান নিজেকে দুর্ভাগা ভাবতেই পারেন। সাদা বলে গত কয়েক বছর নিয়মিত ভালো পারফর্ম করেও জাতীয় দলে জায়গা পাচ্ছেন না। ধারণা করা হয়েছিল, গত দুই বছর ঘরোয়া একমাত্র ৫০ ওভারের ক্রিকেট আসর ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে দ্যুতিময় পারফরম্যান্স অন্তত ভাগ্য বদলাবে সোহানের। দীর্ঘ দিন পর এবার শ্রীলঙ্কা সফরে হয়তো ওয়ানডে স্কোয়াডে ডাক পাবেন মিডলঅর্ডার কাম উইকেটরক্ষক। কিন্তু নাহ, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৬ জনের ওয়ানডে দলে জায়গা হয়নি সোহানের। সোহানকে দলে না নেওয়ার সত্যিকার অর্থে কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। প্রধান নির্বাচক জানান, সোহানের আঙ্গুলে ব্যথা ছিল প্রায় এক বছর। ওই সময়টা সে কারণেই বাইরে ছিল। আর এবার তাকে নেওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ দলে দুই জন (লিটন দাস ও জাকের আলী অনিক) উইকেটরক্ষক রয়েছেন। তবে সোহান নির্বাচকদের চোখের বাইরে নেই। তাকে হিসেবের মধ্যেই রাখা হয়েছে। তাই সে ‘এ’ দলের ক্যাপ্টেন্সি করেছে এবং তার প্রতিও নজর আছে। তবে ঠিক কী কারণে এবার দলে বিবেচনা করা হয়নি লিপু তার যথার্থ ব্যাখ্যা দেননি।
এদিকে মাঠের লড়াকু সৈনিক সোহান কিপিংয়ে দক্ষতার পাশাপাশি সাহসী ও সংগ্রামী ব্যাটিং করে সবার নজরেই ছিলেন। এই কিছুদিন আগে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে নিউজিল্যান্ডের ‘এ’ দলের বিপক্ষে দারুণ খেলেছেন সোহান। চারদিনের ম্যাচ (১০৭) ও ওয়ানডে সিরিজেও শতরান (১১২) করে সোহান দেখিয়ে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করতে তিনি প্রস্তুত। এবারের প্রিমিয়ার লিগে ধানমন্ডি ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে ১১ ম্যাচে দুটি শতরান ও সমান অর্ধশতকসহ ৫১২ রান করেছেন সোহান। যেখানে তার গড় ৫৮ ও স্ট্রাইকরেটে ৯৩.৫৪। এছাড়া গতবারের প্রিমিয়ার লিগেও এক সেঞ্চুরি ও তিন হাফসেঞ্চুরিসহ করেছিলেন ৪৯৫ রান। অনেকেই মানছেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যে দলটি গঠন করা হয়েছে, তাতে ব্যাটার হিসেবে মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহবিহীন দলে সোহানের মতো একজন লড়াকু ক্রিকেটারের অন্তর্ভুক্তি খুব দরকার ছিল। ঘরোয়া ক্রিকেট ও ‘এ’ দলের হয়ে ৫০ ওভারের ফরম্যাটে ভালো খেলেও জাতীয় দলের হয়ে ওয়ানডে স্কোয়াডে জায়গা পাননি সোহান। স্বভাবতই বেশ হতাশ তিনি। গতকাল চট্টগ্রামে অনুশলিন ম্যাচ খেলেছে ওয়ানডে দলের ক্রিকেটাররা। সে দলে ছিলেন সোহান। তবে দল নির্বাচন নিয়ে কোনোরকম মন্তব্য করেননি সোহান। শুধু বলেছেন, সেটা নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্টের ব্যাপার। তারা যেটা মনে করেছেন সেটাই করেছেন। তা নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই। তবে সামগ্রিককভাবে চরম হতাশ সোহান। আমার জীবনের ব্রতই জাতীয় দলের হয়ে খেলা। সারা বছর জাতীয় দলের হয়ে খেলার জন্যই নিজেকে তৈরির চেষ্টা করি। কী করলে ফিটনেস লেভেলটা ভালো থাকবে, নিজেকে চাঙ্গা ও ফিট রাখতে পারবো ও কেমন পারফর্ম করলে সুযোগ পাওয়া যাবে, সে চিন্তা ও চেষ্টাই থাকে। গত এক বছর নিজের সবটা নিংড়ে দিয়ে চেষ্টা করেছি। বিপিএল, এনসিএল টি–টোয়েন্টি, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ‘এ’ দলের হয়ে খেলতে নেমে নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছি। একটাই আশা ছিল, ভালো করলে জাতীয় দলে জায়গা পাবো। কিন্তু দুর্ভাগ্য, জাতীয় দলে জায়গা পেলাম না। তারপরও জায়গা না পাওয়া নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করবো না। দল সাজানো ও ক্রিকেটার নির্বাচন করা নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্টের কাজ। তারা যা মনে করেছেন, সেটাই করেছেন। তবে আমি নিজে হতাশ। কষ্ট পেয়েছি।