দিনমজুর শফর মল্লুক ও খুরশিদা বেগম দম্পতির সংসারিক জীবন কেটেছে প্রায় ৪০ বছর। তাদের ঘরে কোনো সন্তান নেই। শেষ বয়সে এসে স্বামী আর কায়িক পরিশ্রমও করতে পারছেন না। শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা রোগ। এতে বাড়িতেই শয্যাশায়ী অবস্থায়ই দিন কাটছে শফর মল্লূকের।
এই অবস্থায় সংসারের ভরণ-পোষণ চালাতে পারছেন না তিনি। স্বামীর ঔষধপত্রাদিসহ প্রাত্যহিক সংসারের খরচ মেটাতে হাল ধরেন বয়োবৃদ্ধ স্ত্রী খুরশিদা। নিজেদের এক টুকরো জমিতে রোপণ করেন অর্ধশত পেঁপে গাছের চারা। বর্তমানে সেই গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছিল পেঁপে। সেগুলো বিক্রি করে বৃদ্ধ দম্পতির দিন ভালোই কাটছিল।
কিন্তু সেই দম্পতির চোখেমুখে এখন কেবলই অন্ধকার। কারণ সংসার চালানোর একমাত্র অবলম্বন সেই পেঁপে গাছগুলো ফলন্ত অবস্থায় কেটে সাবাড় করে দিয়েছে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। এতে সামনের দিনগুলো তারা কীভাবে কাটাবেন, কে তাদের অর্থ সহায়তা দেবে সেই চিন্তাতেই মশগুল তারা।
অমানবিক এই ঘটনাটি ঘটেছে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নের দুই নং ওয়ার্ডের বাক্কুম পাড়ার শফর মল্লুকের স্ত্রী খুরশিদার পেঁপে বাগানে। গত রোববার দিবাগত রাতের কোনো একসময় তার পেঁপে বাগানের ওপর এই আক্রোশ চালায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তের দল।
স্থানীয়রা জানান, এই দম্পতির কোনো সন্তান না থাকায় বৃদ্ধ বয়সে এসেও তারা বেশ বেকায়দায় রয়েছেন। ঘরে স্বামী অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় শয্যাশায়ী। সেই স্বামীর সেবা এবং নিজেদের দুই বেলা খাবার যোগাড় করা বেশ কষ্টসাধ্য। এই অবস্থায় কিছু পেঁপে গাছের চারা রোপণের পর ফল দেওয়া শুরু করলে সংসারের খরচ চালানো নিয়ে দুশ্চিন্তা দূর হয় তাদের। খুরশিদা বেগম বলেন, আমাদের কোনো সন্তান নেই। তাই বৃদ্ধ বয়সে এসে আমাদের (স্বামী-স্ত্রী) দুই বেলা খাবার যোগাড় করতে একখন্ড জমিতে শাক-সবজি এবং পেঁপে গাছের চারা রোপণ করি। কয়েকমাস আগেও আমাদের বাগানের বেশকিছু গাছ কেটে ফেলে দুর্বৃত্তরা। তখন স্থানীয়দের কাছে বিচার দিলেও কোনো কিনারা করতে পারিনি। এই অবস্থায় আবারও রোববার রাতে অর্ধশত পেঁপে গাছের মধ্যে প্রায় ৪০টি গাছ কেটে আমাদের স্বপ্ন চুরমার করে দিয়েছে। এখন আমরা কীভাবে সংসার চালাবো, অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসা কীভাবে করাবো তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি।
বিএমচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এই ঘটনার শোনার পর নিজেই পরিদর্শন করেছি। ফলজ গাছের সঙ্গে যাদের শত্রুতা তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।
এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান দৈনিক আজাদীকে বলেন, এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি ওই বৃদ্ধ দম্পতিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হবে। যাতে নতুন করে কিছু করতে পারেন।