নগরীর পাথরঘাটার জলিলগঞ্জ আবাসিক এলাকায় আনসার সদস্য দ্বারা নির্যাতনের শিকার শিশু আপন দাশ (১১) এখনো হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে। চিকিৎসকের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, পায়ুপথে লাঠি ঢুকিয়ে নির্যাতনের কারণে শিশুটির মলদ্বার ছিড়ে গেছে। এটি গ্রেড-১ ইনজুরি। অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। তবে সুস্থ হতে সময় লাগবে। এদিকে শিশুটির মা রুপনা দাশ ছেলের অবস্থা দেখে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন। তিনি ছেলের এই ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্ত আনসার সদস্যের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, নৈতিক শিক্ষার অভাব এবং মানবিক মূল্যবোধ উঠে যাওয়ায় শিশু নির্যাতনের মতো জঘন্য ঘটনাগুলো ঘটছে। দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব হলে এসব নির্যাতনে ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি হবে না।
নির্যাতনের শিকার শিশুর মা রুপনা দাশ বলেন, দুই ছেলের মধ্যে আপন সবার বড়। তিন বছর আগে ওর বাবা মারা যান। আমি একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ছোটখাটো চাকরি করি। আমার ছেলে এখন হাসপাতালের বিছানায় ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। ও তো কোনো অপরাধ করেনি। তাহলে তাকে কেন এরকম জঘন্য নির্যাতন করা হলো। ও এখনো ছোট। সামনে পুরো ভবিষ্যত পড়ে আছে। আমি ইতোমধ্যে কোতোয়ালী থানায় মামলা করেছি। আমার একটাই দাবি, ওই আনসারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এবং কোতোয়ালী থানার এসআই ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, আমি আজ (গতকাল) শিশুটিকে দেখে এসেছি। ডাক্তার বলেছে, ওর অবস্থা অতটা খারাপ নয়। এটি গ্রেড-১ ইনজুরি। ক্ষতস্থানে অপারেশন করা হয়েছে। তবে সেরে উঠতে কিছুটা সময় লাগবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ওবায়দুল করিম দৈনিক আজাদীকে বলেন, পাথরঘাটায় এলাকায় যেভাবে শিশুটি নির্যাতিত হয়েছে এটি অত্যন্ত জঘন্য, বর্বর এবং ন্যাক্কারজনক। নৈতিক শিক্ষার অভাবে এসব বারবার হচ্ছে। এছাড়া মানুষের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধেরও অভাব দেখা দিচ্ছে। মানুষ দিন দিন আগ্রাসী হয়ে যাচ্ছে। পেশাগত উৎকর্ষতার জন্য সবাই ডাক্তার হতে চায়, ইঞ্জিনিয়ার হতে চায় কিন্তু কেউ মানুষ হতে চায় না। যার ফলে মানবিক গুণাবলী দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। আবার একেকজন একেক পরিবেশ থেকে উঠে আসছে। যে যেভাবে বেড়ে উঠেছে, তার আচার আচরণেও সেটি ফুটে উঠছে। আমাদের দেশে আইন আছে, সমস্যা হচ্ছে প্রয়োগ নিয়ে। কোনো একজন অপরাধীর বিচার শেষ হতে যদি ১০-১৫ বছর লাগে তাহলে সমাজে অপরাধ তো আর কমবে না। তাই অপরাধের দ্রুত বিচার করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার কোতোয়ালী থানাধীন পাথরঘাটার জলিলগঞ্জ আবাসিক এলাকায় একটি মাঠে আপনসহ কয়েকজন শিশু খেলছিল। খেলার এক পর্যায়ে মাঠের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরা তাদের ধাওয়া দেন। এ সময় সাথের অন্য শিশুরা দৌঁড়ে পালিয়ে যেতে পারলেও আপনকে আনসার সদস্য রুবেল ধরে ফেলেন। প্রথমে লাঠি দিয়ে পেটানোর পর তার পায়ুপথে লাঠি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এসময় কান্না ও চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন জড়ো হয়ে আপনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ লোকজন আনসার সদস্য রুবেল সর্দারকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এ ঘটনায় ওই রাতে আপনের মা রুপনা দাশ কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।