ঐতিহ্যের সিআরবি ভবন সংস্কারের উদ্যোগ

ব্রিটিশ স্থাপত্য ঠিক রেখে করা হবে কাজ । আজ প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করবে কনসালটেন্সি ফার্ম

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২২ আগস্ট, ২০২৫ at ৭:১১ পূর্বাহ্ণ

ব্রিটিশ স্থাপত্য ঠিক রেখে ১৫৩ বছরের পুরোনো সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং (সিআরবি) সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতিহাসঐতিহ্যের এই ভবনটি অবিকল ঠিক রেখে সংস্কারের বিষয়টি উপস্থাপনের জন্য রেলওয়ের পক্ষ থেকে একটি কনসালটেন্সি ফার্ম নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগকৃত কনসালটেন্সি ফার্ম আজ শুক্রবার সকালে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকের (জিএম) কার্যালয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফাহিমুল ইসলামএর উপস্থিতিতে ‘সিআরবি ভবন’ সংস্কার বিষয়ে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করবে।

রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই কনসালটেন্সি ফার্মের উপস্থাপিত টেকনিক্যাল দিকগুলোর উপর ভিত্তি করেই সংস্কার করা হবে প্রাচীনতম ভবনটি। সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং (সিআরবি) চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানার অধীনে টাইগার পাস সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত। বর্তমানে এটি বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকের (জিএম) কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

সরেজমিনে সিআরবি ভবন গিয়ে দেখা গেছে, ১৮৭২ সালে নির্মিত বন্দর নগরী চট্টগ্রামের এই প্রাচীনতম ভবনটির বিভিন্ন অংশ একেবারেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বৃষ্টি হলেই এসব অংশে উপর থেকে নিচে পানিতে ভেসে যায়। ঝুঁকি এড়ানোর জন্য ভবনের দ্বিতীয় তলার অনেক অংশ দীর্ঘদিন থেকে রেল কর্মকর্তাকর্মচারীদের চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ভবনের অনেক অংশে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। ব্রিটিশ স্থাপত্যের ঐতিহ্যবাহী সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিংটি সংস্কারের মাধ্যমে রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।

এই ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী তানভীরুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং (সিআরবি) সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ব্রিটিশ স্থাপত্য ঠিক রেখে সংস্কার করা হবে; যেটা যে অবস্থায় আছে, সেই অবস্থা ঠিক রেখে সিআরবি ভবনটি সংস্কার করা হবে। এই বিষয়ে কনসালটেন্সি ফার্ম নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা টেকনিক্যাল বিষয়গুলো দেখবেন। ব্রিটিশ স্থাপত্যের সব কিছু ঠিক রেখে তারা যেভাবে পরামর্শ দেবেন সেই ভাবেই সংস্কার করা হবে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা মাহাবুব উল করিম গতকাল বলেন, সিআরবি ভবন (সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং) সংস্কার করা হবে। সচিব স্যার (রেল সচিব ফাহিমুল ইসলাম) আজকে চট্টগ্রাম এসেছেন। শুক্রবার সকালে সচিব স্যার সিআরবিতে আসবেন; জিএম অফিস পরির্দশন করবেন। এরপর সিআরবি ভবন সংস্কারে কনসালটেন্সি ফার্মের প্রেজেন্টেশন দেখবেন।

নগর বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৮৭২ সালে সম্পন্ন হওয়া ভবনটি বন্দর নগরীর প্রাচীনতম ভবন। এর পূর্বদিকে, সিআরবি সড়ক জুড়ে রয়েছে রেলওয়ে হাসপাতাল যা ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। সবুজের সমারোহে বেষ্টিত সিআরবি। এখানে আছে ১৯৭ প্রজাতির উদ্ভিদ। সিআরবির পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন অংশে রেলের জিএমসহ কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক এলাকাও গড়ে উঠেছে।

সিআরবি পাহাড়ে রয়েছে ১৩২ বছরের ঐতিহ্যবাহী হাতির বাংলো; যা ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হয়েছে।

আলাপকালে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের এক অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী জানান, আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের সদর দপ্তর ছিল চট্টগ্রামে। ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্বদিক এবং বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলসহ পুরো আসাম প্রদেশে রেললাইন স্থাপন করেছিল আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে। ১৮৯৩ সালে চট্টগ্রাম থেকে ফেনী পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণকাজ শুরু হয় বৃটিশ প্রকৌশলী ব্রাউনজারের অধীনে। ঊনিশ শতকের মাঝামাঝিতে রেলওয়ে কর্মকর্তাদের বসবাসের জন্য ডুপ্লেঙ এই বাংলোটি নিজেই নির্মাণ করেন প্রকৌশলী ব্রাউনজার।

এর নির্মাণ কাজে ফেরো সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। এমন নান্দনিক স্থাপনাটিতে কোনো লোহা ব্যবহার করা হয়নি।

এছাড়াও সিআরবি ভবনের নিচে শতবছরের বৃক্ষরাজি ঘেরা শিরীষতলা নামে একটি প্রশস্ত মাঠ রয়েছে; যেখানে প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুন ইত্যাদি ঐতিহ্যগত উৎসব আয়োজিত হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভাস্বর অপরূপ এই এলাকা সাধারণ মানুষের অবসর বিনোদন, প্রাতঃভ্রমণ ও বৈকালিক ভ্রমণের একমাত্র উপযুক্ত স্থান। তাই সিআরবি এককথায় চট্টগ্রামের ফুসফুস।

ইতিহাস গবেষকরা জানান, চট্টগ্রামে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের দু’শো বছরের ইতিহাসের একটি সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং। ১৭৬০ সালে ব্রিটিশ শাসকরা নবাব মীর কাসিমের কাছ থেকে চট্টগ্রামের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল এবং ভারত বিভাগের আগে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এটি তারা শাসন করেছিল। তাদের শাসনকালে ব্রিটিশরা তাদের প্রশাসনিক কাজের সুবিধার্থে বেশ কয়েকটি ভবন তৈরি করেছিল এবং এই বিল্ডিংগুলির মধ্যে একটি হল সিআরবি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাতিসংঘের জুলাই প্রতিবেদনকে ঐতিহাসিক দলিল ঘোষণার নির্দেশ হাই কোর্টের
পরবর্তী নিবন্ধঅস্ত্রোপচারের পর আলাদা হলো জোড়া লাগানো জুহি-রুহি