ঐতিহ্যের জলকদর খাল ধুঁকছে কেন

দখলে ভরাটে বিপর্যস্ত, শীঘ্রই উচ্ছেদ অভিযান ও সংস্কার দাবি

বাঁশখালী প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ

বাঁশখালীর বুক ছিড়ে যে খালটি প্রবাহিত সেটা হলো জলকদর খাল। এই খালটি সুদূর কাল থেকে সাগর পথে বাঁশখালীর যাতায়াত ও ব্যবসায়ীদের মালামাল আনা-নেওয়ার অন্যতম যোগাযোগ ব্যবস্থায় ভূমিকা রেখে আসছিল। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে খালটি দুই পাশের অবৈধ দখলদারদের দখল এবং সংস্কার না করায় সরু হয়ে পড়েছে। দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে লবণ ব্যবসায়ীরা ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ লবণ সরবরাহ করতে গিয়ে ইঞ্জিলচালিত বোটগুলো চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
বাঁশখালীর পূর্বাঞ্চলের ৮টি পাহাড়ি ছড়ার ঢল ও বন্যার পানি নিষ্কাশন হতে না পারায় সর্বত্র বন্যার সৃষ্টি হয়। সাধারণ জনগণের মালামালের ক্ষতিসাধন হয়।
একসময় বাঁশখালীর ব্যবসায়ীগণ নৌকা ও সাম্পানের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে জলকদর খাল হয়ে মালামাল নিয়ে আসতেন শঙ্খ নদী হয়ে। এখনো সেই ধারা অব্যাহত থাকলেও জলকদর খালের অধিকাংশ এলাকা অবৈধ দখলদার ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় পূর্বের সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণ।
অপরদিকে জলকদর খালের সাথে বাঁশখালীর পূর্বাঞ্চলের ৮টি পাহাড়ি ছড়ার প্রবাহিত পানি খালে নামার জন্য অবস্থিত অধিকাংশ স্লুইচ গেট নানাভাবে দখল ও বন্ধ থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই বন্যার সৃষ্টি হয় খালের পূর্বাঞ্চলের এলাকাগুলোতে।
জলকদর খালটি শঙ্খ নদী হয়ে খানখানাবাদের অভ্যন্তরে বাহারছড়া, কাথারিয়া, সরল, গন্ডামারা, শীলকূপ, ছনুয়া, শেখেরখীল মধ্যবর্তী হয়ে আবারো দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের সাথে পড়েছে। এই জলকদর খালটি জনগুরুত্বপূর্ণ হলেও নানাভাবে দখলে থাকায় বর্তমানে পানি নিস্কাশনে বাঁধাগ্রস্ত হয়ে সাধারণ জনগণ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
খালটি সংস্কারের জন্য সকলের পক্ষ থেকে দাবি জানানোর প্রেক্ষিতে প্রতি জেলায় একটি করে খাল সংস্কারে সরকার উদ্যোগ গ্রহন করেছে তাতে এ জলকদর খালটি রয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা সুত্রে জানা গেলেও প্রতি নিয়ত খালটি দখল হয়ে পড়ায় দিন দিন সরু হয়ে যাচ্ছে। বাঁশখালীর ৮টি পাহাড়ি ছড়া, পুঁইছড়ির ছড়া, নাপোড়া ছড়া, চাম্বলের ছড়া, শীলকূপের ছড়া, জলদী ছড়া, পাইরাংয়ের ছড়া, কালীপুরের ছড়া ও সাধনপুরের ছড়া হয়ে পাহাড়ি ঢলের পানিগুলো পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়। সেই পানিগুলো নানাভাবে জলকদর খালে গিয়ে পৌঁছতে না পারলে সর্বত্র বন্যার সৃষ্টি হয়। বিগত দিনে এই জলকদর খালে পানি নিস্কাশন সহজ হলেও সম্প্রতি সময় গুলোতে দুই পাশে অসংখ্য অবৈধ দখলদার ও ভরাট হয়ে যাওয়াতে পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা দূরহ হয়ে পড়ে। অপরদিকে খালটি সরু হয়ে যাওয়াতে পূর্বের মত ব্যবসায়ীরা নানাভাবে বোট অথবা সাম্পানের মাধ্যমে আগের মত মালামাল পরিবহন করতে পারে না।
সাধনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন চৌধুরী খোকা পাহাড়ি পানি নিস্কাশনে ছড়াগুলো সংস্কার এবং জলকদর খালের স্লুইচ গেইটগুলো সংস্কার করে পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান।
এ ব্যাপারে বাহারছড়ার চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের ইউনিয়নের অভ্যন্তরে প্রবাহিত এই খালটি সংস্কার করা হলে বর্ষা মৌসুমে সাধারণ জনগণ বন্যার হাত থেকে অনেকটা রক্ষা পাবে। তাছাড়া স্লুইচ গেইটগুলো যথাযথ সংস্কার করা প্রয়োজন।
একই কথা বললেন শেখেরখীল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ইয়াছিন ও ছনুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. হারুনুর রশিদ। তারা বলেন, আমাদের এলাকার দুর্ভোগ হচ্ছে এই জলকদর খালটি। দুই পাশে অবৈধ ভরাট হওয়ায় ও জবর দখল হওয়ায় পানি সহজে নিষ্কাশন হতে পারে না। তাছাড়া স্লুইচ গেইটগুলো নানাভাবে দখলে থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জোরালো পদক্ষেপ নিয়ে সেগুলো সংস্কার করতে পারে না। সমন্বয় সভায় মন্ত্রী জলকদর খাল সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাঁশখালীর সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে আহবান জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রকাশন চাকমা বলেন, ঐতিহ্যবাহী জলকদর খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদের জন্য তালিকা করা হয়েছে। সরকার প্রতি জেলায় একটি করে ঐতিহ্যবাহী খাল সংস্কারের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তার মধ্যে বাঁশখালীর জলকদর খালটিও রয়েছে। আশা করি, কার্যক্রম শুরু হলে খালটি পূর্বের অবস্থায় ফিরে পাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজানুয়ারিতে রপ্তানি আয়ে ৪১% প্রবৃদ্ধি
পরবর্তী নিবন্ধসাতকানিয়ার ধর্মপুরের পরিস্থিতি থমথমে, এখনো মামলা হয়নি