ঐতিহাসিক মে দিবস : শ্রমিকদের সকল সমস্যার সমাধানই হোক মূল লক্ষ্য

মো. খোরশেদ আলম | রবিবার , ১ মে, ২০২২ at ৭:৪২ পূর্বাহ্ণ

আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস যা সচরাচর মে দিবস নামে অভিহিত। ১লা মে তারিখে বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হয়। এটি আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলন উদযাপন দিবস। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শ্রমজীবী মানুষ এবং শ্রমিক সংগঠনসমূহ রাজপথে সংগঠিতভাবে মিছিল শোভাযাত্রার মাধ্যমে দিবসটি পালন করে থাকে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে পয়লা মে জাতীয় ছুটির দিন। আরো অনেক দেশে দিবসটি বেসরকারিভাবে পালিত হয়। বাংলাদেশ ও ভারতে এই দিবসটি যথাযথভাবে পালিত হয়ে আসছে। ভারতে প্রথম মে দিবস পালিত হয় ১৯২৩ সালে। আমাদের দেশে প্রতিবছর একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে মে দিবস উদযাপিত হয়।

বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন মহান মে দিবস। ১৮৮৬ সালের এই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে হে মার্কেটের শ্রমিকরা ৮ঘণ্টা কাজের দাবীতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে গত তিন বছর এ দিবসটি ব্যাপকভাবে পালিত হয়নি। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য শ্রমিকদের আত্মত্যাগের এ দিনকে তখন থেকেই সারা বিশ্বে মে দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। বর্তমান সরকার শ্রমিক বান্ধব সরকার। ’২০ সালের করোনাকালে শ্রমিকদের বেতন ভাতা ও বোনাস এর জন্য সর্বাধিক প্যাকেজ প্রণোদনা দিয়েছিলেন সরকার। গতবছর শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন ২২ তম সভায় দুর্ঘটনাজনিত কারণে নিহত, আহত ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত শ্রমিকদের চিকিৎসা ও তাদের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষা বাবদ ১৩শত শ্রমিকদের নামে ৩ কোটি ৫৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকার সহায়তার অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন থেকে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার শ্রমিককে ৪০ কোটি টাকা সহায়তা দেয়া হয়েছিল। গত ’২০ সালে দেশী ও বিদেশী মিলে ১৭৩টি কোম্পানীর নিয়োজিত শ্রমিক কল্যাণ তহবিল তাদের লভ্যাংশের নির্দিষ্ট অংশ জমা দিয়েছিলেন এবং তহবিলে ঐ বছর জমা দিয়েছিলেন ৪৭৭ কোটি টাকা। যা অতীতে কোনো সময় হয়নি। ’২১ সালের ১৭ এপ্রিল বাঁশখালীর কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে (এস এস পাওয়ার প্লান্ট) ৫ জন শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। সরকারের পক্ষ থেকে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ৩ লক্ষ টাকা ও আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে। স্থানীয় বিএনপি জামাতের নেতারা ঐ ঘটনার পিছনে ইন্ধন জুগিয়েছিলেন। উস্কানি যারা দিয়েছে তাদের চিহ্নিত করেছিল পুলিশ। স্থানীয়রা বলছেন প্রকল্পের ভিতরে একটি মাফিয়া গ্রুপ কাজ করছে যাতে মালিক শ্রমিকদের মাঝে মতানৈক্য থাকে। দিবসটি হলো পৃথিবীতে মেহনতী ও খেটে খাওয়া মানুষের সংকল্প গ্রহণের দিন। এর মধ্য দিয়ে মানুষের শ্রেণী বৈষম্যের বিলুপ্তি সাধন হয়। অনেক নেতা মে দিবসকে ব্যবহার করেছিল শ্রমিক শ্রেণীর বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানের বলিষ্ট হাতিয়ার হিসাবে। আজ থেকে ১৩৬ বছর আগে যে স্বপ্ন নিয়ে শ্রমিকরা তাদের তাজা প্রাণ আর রক্ত ঢেলে দিয়েছিল, অকাতরে দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় অনেক অন্ধকার দূর হয়েছে সত্য এর পরেও দেখা যায় দেশে এবং বিদেশে গার্মেন্টস শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার আদায় ও বেতন ভাতার জন্য রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। বিএনপিজামায়াত জোট সরকারের আমলে আমাদের দেশে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বহু আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা আহছান উল্লাহ মাষ্টারকে এর জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঢাকার সাভারে রানা প্লাজার ট্রেজেডি আমরা সকলে কমবেশি জানি। এদেশের শ্রমজীবী মানুষ ও জাতির জন্য দিনটি ছিল শোকের। সেদিন শত শত গার্মেন্টস শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেছে এখনো অনেক শ্রমিক পঙ্গুত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পারেনি, অনেকেই নিখোঁজ। রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা ও গার্মেন্টস মালিকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা সমূহের বিচার আজ থমকে আছে। অনেক শ্রমিক আজো তাদের যথার্থ ক্ষতিপূরণ পায়নি। রাসুল (.) এর একটি হাদিস আছে, ‘শ্রমিকের শরীর থেকে ঘাম শুকানোর আগেই তার পাওনা মিটিয়ে দাও’। ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও, লড়াই কর’ এই স্লোগান বুকে ধারণ করে মে দিবস হবে শ্রমজীবী পেশাজীবী সকল মানুষের সংকল্প গ্রহণের দিন। পুঁজিবাদ দাসত্ববাদের শৃংখল থেকে মুক্তির দৃঢ় প্রত্যয় অঙ্গীকার শ্রেণী বৈষম্যের বিলোপ সাধন। আজ এশিয়ার ল্যাটিন আমেরিকা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আফ্রিকা ও অষ্ট্রেলিয়া সহ পৃথিবীর সমস্ত দেশ জুড়ে মে দিবস পালিত হচ্ছে। মে দিবস আমাদের লক্ষ্য, সাম্রাজ্যবাদ, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ সহ সকল অন্যায় অত্যাচার জুলুম নির্যাতন বন্ধ করা। সামপ্রদায়িক সমপ্রতির ভিত মজবুত করে ধর্মের নামে শ্রমিক হত্যা সাধারণ মানুষ হত্যা বন্ধ হোক। মে দিবসের প্রেরণায় দেশকে ভালোবাসুন, দেশের মানুষের প্রতি মমত্ববোধ বাড়ান, কোনো শ্রমিক যেন তার ন্যায্য অধিকার ও পাওনা থেকে বঞ্চিত না হয়। সরকার এবং শ্রমিক সংগঠনগুলো ঐক্যবদ্ধ থেকে শ্রমিকদের সকল সমস্যার সমাধনই হোক মূল লক্ষ্য।

লেখক: শ্রম সম্পাদক, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমাদের ছেলেবেলার ঈদ আনন্দ
পরবর্তী নিবন্ধমহান মে দিবস, নারীশ্রম ও অদম্য শক্তি