ঐতিহাসিক জুলাই গণ অভ্যুত্থান দিবস আজ। গত বছর এ দিনে শুরু হয় এক নতুন বাংলাদেশের অভিযাত্রা। গতবছর এ দিনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে সাড়া দিয়ে হাজারো মানুষ ঢাকার কেন্দ্রস্থলের দিকে রওনা হন। উত্তরার দিকে ঢাকার প্রবেশমুখে তখন হাজারো মানুষ রাস্তায়। হঠাৎ শোনা গেল উত্তরার বাধাগুলো ছেড়ে দিয়ে সরে দাঁড়িয়েছে সেনাবাহিনী। এর মধ্যেই এলো সেই খবরটি, ‘শেখ হাসিনা পালিয়েছে’। এরপর মুক্তির আনন্দে পথে পথে বাঁধভাঙা উল্লাস। গণভবন, সংসদ ভবন আর ওই চত্বরে থাকা সরকারি বাংলোগুলোতে লাখো মানুষের ভিড়। এদিন বাঁধভাঙা উল্লাস হয়েছে চট্টগ্রামেও। পথে পথে হয়েছে মিষ্টি বিতরণ।
সংঘাত আর রক্তপাতের মধ্যে জুলাই পেরিয়ে আন্দোলন প্রবেশ করে আগস্টে। তবে আন্দোলনকারীরা বলে ওঠেন, তাদের লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত জুলাই মাস শেষ হবে না। তারা গুনতে থাকেন ৩১ জুলাই, ৩২ জুলাই…। হাজারো মৃত্যু আর রক্ত পেরিয়ে অবশেষে জুলাই মাস শেষ হয় ‘৩৬ দিনে’। ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় থাকা হাসিনা ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। নতুন বাংলাদেশে শুরু হয় এক নতুন ভোর।
‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় দিন আজ। এক বছর আগে এই দিনে জুলাই গণ–অভ্যুত্থান পূর্ণতা পায়, দীর্ঘদিনের ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে মুক্ত হয় প্রিয় স্বদেশ। বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ, যাদের যূথবদ্ধ আন্দোলনের ফসল আমাদের এই ঐতিহাসিক অর্জন, তাদের সবাইকে আমি এই দিনে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।’ অধ্যাপক ইউনূসের ভাষায়, টানা ১৬ বছরের ‘স্বৈরাচারী অপশাসনের’ বিরুদ্ধে সম্মিলিত বিস্ফোরণ ছিল জুলাই গণ–অভ্যুত্থান।
গত বছরের এদিন নগরের বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, বায়েজিদ, ২ নম্বর গেট, জিইসি মোড়, কাজীর দেউড়ি, প্রবর্তক মোড়, নিউমার্কেট, জামালখান, আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড়, হালিশহর বড়পোল, এ কে খান, বন্দর, সল্টগোলা, ইপিজেড, কাটগড় ও পতেঙ্গাসহ বিভিন্ন সড়কে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সর্বস্তরের মানুষ জড়ো হয়। বিজয় মিছিল করেন তারা। সবার চোখেমুখে ছিল আনন্দ–উচ্ছ্বাস। পুরো নগরের পাশাপাাশি সড়ক–মহাসড়ক আন্দোলনকারী এবং সাধারণ মানুষের দখলে ছিল। তারা নেচে গেয়ে এবং স্লোগানে স্লোগানে পুরো এলাকা প্রকম্পিত করে। মিছিলকারীদের কারো হাতে ছিল জাতীয় পতাকা, কেউ লাঠির মাথায় লাল কাপড় বেঁধে শূন্যে উঁচিয়ে স্লোগান দেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের রুহের মাগফেরাত এবং আহতদের সুস্থতা কামনায় আজ বেলা ১১ টায় বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে কোরআন খতম এবং বাদ যোহর দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া, দিবসটি উপলক্ষে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের রুহের মাগফেরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনায় দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মোনাজাত আয়োজনের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মসজিদের খতিব, ইমাম ও মসজিদ কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালনের লক্ষ্যে দেশের প্রতিটি ধর্মীয় উপাসনালয়ে মোনাজাত ও প্রার্থনার আয়োজন করা হবে। এদিনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের সব সার্কেল অফিস স্ব–স্ব অধিক্ষেত্রে রাস্তার পাশে বা নিজস্ব জায়গায়, ট্রাফিক ইন্টারসেকশনে বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছ রোপণ করবে।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে দিবসে চট্টগ্রামেও ব্যাপক কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব : আজ বিকেল ৩ টায় জুলাই গণ–অভ্যুত্থান স্মরণে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানমালার সমাপনী অনুষ্ঠান প্রেস ক্লাব চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় : চট্টগ্রাম বিশ্বদ্যিালয়ে জুলাই বিপ্লব উদযাপন কমিটির উদ্যোগে র্যালি, সেমিনার, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সকাল ১১ টায় স্মরণ চত্বর থেকে র্যালি বের করা হবে। দুপুর ২টায় সমাজবিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে সেমিনার ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। বিশেষ অতিথি থাকবেন উপ–উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. তৈয়ব চৌধুরী। সভাপতিত্ব করবেন চবি উপ–উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন। ‘১৯৪৭, ১৯৭১ ও ২০২৪ : আমাদের বিজয়গাঁথা, আমাদের অহংকার’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন চবি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ। মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করবেন চবি সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এনায়েত উল্লাহ পাটওয়ারী ও লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. আমির মুহাম্মদ নসরুল্লাহ। বিকেল ৫টায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্র : জুলাই গণ অভ্যুত্থান উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্র আয়োজন করেছে নানা আয়োজন। বিশেষ দুটি আলোচনা অনুষ্ঠান, প্রামাণ্য অনুষ্ঠান, গানের ফিলার, ৩৬ জুলাই, গোলটেবিল বৈঠকে ১০ জন আলোচক নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান নির্মাণসহ কেন্দ্রের মসজিদে আজ বাদ আছর বিকাল ৫টা ১৫ মিনিটে শহীদদের স্মরণে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
৩৬ জুলাই উদযাপন পরিষদ : ‘জুলাই চেতনা দীর্ঘজীবী হোক’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে চট্টগ্রামে গঠিত হয়েছে ৩৬ জুলাই উদযাপন পরিষদ। ৩৬ জুলাইকে সামনে রেখে পরিষদের উদ্যোগে আজ নগরীতে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চে আলোচনা সভা ও তথ্যচিত্র ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন শহীদ ফারুকের স্ত্রী। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। রাজনৈতিক বৈঠকে থাকবেন অ্যাডভোকেট বদরুল আনোয়ার, অধ্যাপক আতিকুর রহমান, গণসংহতি আন্দোলন চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়কারী হাসান মারুফ রুমী ও জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ইমন সৈয়দ। সভাপতিত্ব করবেন একরামুল করিম। সঞ্চালনা করবেন নুরুল আফছার মজুমদার স্বপন।
নগর জামায়াতে ইসলামী : মহানগরী জামায়াতের উদ্যোগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী পালন উপলক্ষে আজ বাদ আছর জমিয়তুল ফালাহ জামে মসজিদ থেকে গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে।
চট্টগ্রাম সংস্কৃতি কেন্দ্র : চট্টগ্রাম সংস্কৃতি কেন্দ্র ‘৩৬ জুলাই: সত্য–সাহসের পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। আজ বিকাল ৫টায় থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানের কর্মসূচিতে থাকছে জুলাই পর্যালোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, তথ্যচিত্র ও গ্রাফিতি প্রদর্শনী এবং ‘৩৬ জুলাই পূর্বাপর’ স্মারকের মোড়ক উন্মোচন। এতে সম্মানিত অতিথি থাকবেন–শহীদ ফয়সাল আহমেদ শান্তর মা কোহিনূর আকতার রেশমা ও শহীদ হৃদয় তরুয়ার বাবা রতন চন্দ্র তরুয়া। প্রধান অতিথি থাকবেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ কে এম ফজলুল হক। আলোচনায় অংশ নেবেন–চবি শিক্ষক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, কবি মাঈন উদ্দিন জাহেদ, কবি সৈয়দ আহমদ শামীম, নাট্যকার তানবীর মুহাম্মদ, এটিএন বাংলার ব্যুরো চিফ আবুল হাসনাত, মাহবুবুল মাওলা রিপন ও ওবায়দুল্লাহ আফজাল।
মহানগর ইসলামী ছাত্রশিবির : জুলাই গণ অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মহানগর ইসলামী ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় বহদ্দারহাট থেকে র্যালি বের করা হবে।