এয়ার বাস থেকে উড়োজাহাজ কেনার প্রতিশ্রুতি থেকে বাংলাদেশ সরে এলে ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কে প্রভাব পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় জার্মান রাষ্ট্রদূত র্যুডিগার লোটৎস। তিনি বলছেন, ইউরোপের বাজারে শুল্কছাড়ের আলোচনার আবহও এয়ারবাস নিয়ে বাংলাদেশের সিদ্ধান্তের কারণে বদলে যেতে পারে। গতকাল বুধবার ঢাকায় ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠান ডিক্যাব টকে এক প্রশ্নে এ কথা বলেন জার্মান দূত।
র্যুডিগার লোটৎস বলেন, এয়ারবাস বিষয়ক প্রশ্ন, এটা আমাদের বাণিজ্য সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে কি–না। অবশ্যই ফেলবে, অবশ্যই ফেলবে। আমরা বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার। এবং আমাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কটা যেমন, আমাদের মনে হয়, এটা এভাবেই চলতে দেওয়া উচিত। আমি মনে করি, বাণিজ্য যোগাযোগের ক্ষেত্রে নির্ভর করার মত পরিস্থিতি থাকা দরকার। খবর বাসস ও বিডিনিউজের।
চলতি মাসের শুরুতে ফ্রান্স দূতাবাসে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতরা একযোগে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন, উড়োজাহাজ কেনার আলোচনায় যেন এয়ারবাসকে যৌক্তিকভাবে বিবেচনা করা হয়। তারা ইউরোপে কয়েক বিলিয়ন ইউরোর বাংলাদেশি পণ্যের বাজার, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ, যুক্তরাজ্যের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার এবং দীর্ঘ অংশীদারত্বের কথা মনে করিয়ে দেন বারবার।
এয়ারবাস থেকে উড়োজাহাজ কেনার আলোচনা থেকে বাংলাদেশ সরে এলে তার প্রভাব কেমন হবে, তা বুধবারের ডিক্যাব টকে জার্মান রাষ্ট্রদূত লোটৎসের কাছে জানতে চান এক সাংবাদিক। উত্তরে তিনি বলেন, এখানে সম্পূর্ণ একটা পটভূমি রয়েছে। জিএসপি প্লাসের প্রশ্ন যখন আসে, সেটা কাউকে হুমকি দেওয়া বা তেমন কিছু না, একেবারেই না। তবে, দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্কের সঙ্গে সম্পর্কিত সিদ্ধান্তগুলো এ ধরনের (এয়ারবাস) সিদ্ধান্তের উপরও কিছুটা নির্ভর করে। সুতরাং জিএসপি প্লাসের সম্পূর্ণ সিদ্ধান্ত বা এমন বিষয়ের দরকষাকষি কীভাবে চলবে, এখানে নেওয়া এয়ারবাস বিষয়ক সিদ্ধান্ত তার আবহ কিছুটা পরিবর্তন করবে। সুতরাং এটাই আমি বলতে পারি।
এয়ারবাসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বাধীন বলে মন্তব্য করলেও তার একটি প্রভাব যে থাকবে, তা মনে করিয়ে দেন রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক জীবনে আমরা যে সিদ্ধান্তই নিই না কেন, যে কেনো আবহের স্বাভাবিক মেজাজের ক্ষেত্রে তার কিছু পরিণতি থাকে। পরস্পরের স্বার্থে আমরা নিবিড় ব্যবসায়িক সম্পর্ক চালিয়ে যাব। কিন্তু আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, এর পরিণতি কী বা প্রভাব কী, তাহলে এটা খুব কঠিন শব্দ। যদি বলেন, এতে কি কোনো প্রভাব পড়বে? হ্যাঁ, পড়বে।
বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের বিষয়ে জার্মানির রাষ্ট্রদূত বলেন, জার্মানি প্রত্যাশাই করে যে বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলকভাবে অনুষ্ঠিত হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ভোটারদের ভোট দিতে কোনো বাধার সম্মুখীন করা যাবে না এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে শান্তিপূর্ণ, ভীতিহীন পরিবেশে অবাধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দিতে হবে।
তিনি বলেন, যখন আমরা স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলি, তখন আমরা নারী–পুরুষ নির্বিশেষে ভোটারদেরকে অবাধে অংশগ্রহণের সুযোগ এবং একাধিক রাজনৈতিক দলের অবাধ প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিশ্চিত করা বোঝাই।
তিনি বলেন, অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে শান্তিপূর্ণ ও অহিংস নির্বাচনী পরিবেশ, শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক মতপ্রকাশের সুযোগ এবং এমন একটি প্রক্রিয়া প্রয়োজন যেখানে ভোট সঠিকভাবে ও স্বচ্ছভাবে গণনা করা হয়। রাষ্ট্রদূত বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি বড় নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর সম্ভাবনা রয়েছে, যা বাংলাদেশের কৌশলগত গুরুত্ব এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রত্যাশাকে প্রতিফলিত করে।
অপসারিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, বড় রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর অতীতের ক্ষমতার অপব্যবহারের বিচার প্রয়োজন, তবে এই প্রক্রিয়া অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা, ন্যায়বিচার ও যথাযথ আইনি মানদণ্ডের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।
শিক্ষার্থী ভিসা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, জার্মানিতে পড়াশোনার আগ্রহ বাড়ছে, তবে বিপুলসংখ্যক জাল বা ভুল কাগজপত্রের কারণে আবেদন প্রক্রিয়া ধীরগতির হচ্ছে। এর ফলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সত্যিকারের শিক্ষার্থীরাও, তিনি বলেন এবং জানান যে প্রকৃত আবেদনের প্রক্রিয়া দ্রুততর করার চেষ্টা চলছে।
ডিক্যাব সভাপতি একেএম মইনুদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফুজ্জামান মামুন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।












