প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই চলে আসে শীত। এই মৌসুমটি আমরা বেশ উপভোগ করি। কারণ, গরমের তীব্রতা যেমন থাকে না, তেমনি হিমেল পরিবেশ আমাদের শান্ত, কর্মক্ষম করে তোলে। হেমন্ত ঋতুর নতুন পাকা ধানের গন্ধ মিলিয়ে যেতে না যেতেই প্রকৃতি তার ধূসর চাদর জড়িয়ে চলে যায় শীতঘুমে। দিনের বেলায় হালকা মিঠে রোদ হিম ধরা শরীরে বুলিয়ে দেয় সজীবতার পরশ। শুষ্ক আবহাওয়ায় ঘুরে বেড়ানোর এক সুযোগ তৈরি হয় এই শীতকালেই। অত্যধিক শীতে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব আমাদের ভাবিয়ে তোলে। শীতের সকালের কুয়াশা এই মৌসুমকে যেন অন্যরকম বৈশিষ্ট্যে নিয়ে যায়। শীতে গ্রামাঞ্চলে ধানক্ষেত হয়ে যায় ফসল শূন্য, পড়ে থাকে খড়। আবারও শুরু হয় ধান চাষের আয়োজন। শর্ষের ক্ষেতগুলোকে মনে হয় যেন হলুদের সাগর, সেথায় হিমেল হাওয়া ঢেউ খেলে যায়। সরিষা ক্ষেত দেখলে মনে হয় যেন হলুদাভ আভা ছড়িয়ে আছে প্রান্তর জুড়ে। শীতের আগমনে গ্রামে রস আহরণের জন্য খেজুর গাছে হাঁড়ি ঝুলিয়ে দেয়ার ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়। সুস্বাদু খেজুর রসের পিঠা, পুলি আর গুঁড় প্রস্তুতের কর্মকাণ্ড গ্রাম বাংলার প্রতিটি পরিবারে এক চিরাচরিত দৃশ্য। শহর থেকে এ দৃশ্য অবলোকন করা যায় না, তাই গ্রামের নীরবতায় আমাদের যেতেই হয়। শীতে গ্রামের প্রভাতী পরিবেশ যখন কোয়েল, ময়না, দোয়েল, টিয়া আর নানা পাখির কলতানে মুখরিত হয়ে ওঠে তখন সত্যিই মন এক সতেজ অনুভূতিতে ভরে ওঠে। গ্রামের ক্ষেত প্রান্তর ভরে ওঠে শীতের সবজিতে। শীতের অবসানে বসন্তের আবাহন। বসন্ত যেন শীতেরই যোগ্য উত্তরাধিকার। তাইতো রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন ‘এসেছে শীত গাহিতে গীত বসন্তেরই জয়’। সকালের শিশির ভেজা ঘাসে, হালকা রোদের স্নিগ্ধতায় এই শীত যেন স্বাগত জানায় প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে। লেখক: প্রাবন্ধিক