এস আলম গ্রুপের ৮ কারখানা ও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা

হতাশায় সাড়ে ১২ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী, বিক্ষোভ

পটিয়া প্রতিনিধি | বুধবার , ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৬:০৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ এস আলম গ্রুপের ৮টি কারখানা ও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। হঠাৎ করে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করায় শ্রমিককর্মচারীরা একযোগে বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় তোপের মুখে অফিস ছাড়তে বাধ্য হন কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এসব কারখানায় প্রায় সাড়ে ১২ হাজার শ্রমিককর্মচারী রয়েছেন।

কর্তৃপক্ষের দাবি, গ্রুপের নামে নতুন করে কোনো এলসি না খোলা এবং বিদেশ থেকে কাঁচামাল আনতে না পারায় একে একে বন্ধ হয়ে পড়ছে কারখানাগুলো। কারখানা বন্ধ করার বিষয়ে বিভিন্ন কারখানার নামে পৃথক পৃথক নোটিস জারি করা হয়। কয়েকটি কারখানাকে এক নোটিসে বন্ধেরও ঘোষণা জানানো হয়। কারখানা কর্তৃপক্ষ গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টায় ২৫ ডিসেম্বর থেকে ৯টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার নোটিস জারি করলে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ওইসব শ্রমিককর্মচারীরা।

বন্ধ হওয়া কারখানাগুলো হলো কর্ণফুলী উপজেলার ইছানগরের এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডা. লি., এস আলম পাওয়ার প্ল্যান্ট লি., মইজ্জ্যারটেক এলাকার এস আলম স্টিলস্‌ লি., এস আলম ব্যাগ ম্যানু. লি., চেমন ইস্পাত লি., কালারপোল এলাকার এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লি., এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লি. (নফ), এস আলম পাওয়ার জেনারেশন লি. এবং ইনফিনিটি সিআর স্ট্রিপস লি.

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এস আলম গ্রুপের হেড অফিসের এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানান, ৫ আগস্ট দেশে পট পরিবর্তনের পর থেকে গ্রুপের বিভিন্ন কারখানায় কাঁচামালের সংকট দেখা দেয়। নতুন করে এলসি খোলাও সম্ভব হয়নি। ফলে বিভিন্ন দেশ থেকে কারখানার জন্য কাঁচামাল আনা সম্ভব না হওয়ায় কাঁচামালের অভাবে কারখানাগুলো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।

তিনি বলেন, কাঁচামালের অভাবে অন্য কারখানাগুলোর উৎপাদন আগে বন্ধ হলেও সর্বশেষ এস আলম সুগার মিল ও এস আলম সুপার এডিবল ওয়েল কারখানাটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে গ্রুপের চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় বন্ধ হওয়া সব কারখানার শ্রমিককর্মচারীদের বেতনভাতা পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত চালু থাকবে বলে জানান তিনি।

কর্ণফুলী উপজেলার কালারপোল এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লি. এর হেলপার মোবারক হোসেন জানান, কোনো নোটিস বা ঘোষণা ছাড়া হঠাৎ করে দুপুরে অফিস কর্তৃপক্ষ এসে বুধবার থেকে কারখানার সকল ধরনের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেন। কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্ত আমরা মানতে পারছি না। আমরা দীর্ঘদিন এই কোম্পানিতে চাকরি করে আসছি। এখন পরিবারপরিজন নিয়ে কোথায় দাঁড়াব? তিনি বলেন, এখন আমাদের একটাই দাবি, অবিলম্বে কারখানা খোলা হোক।

এস আলম গ্রুপের দায়িত্বরত জিএম মশিউর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের সাথে কথা না বলার জন্য কর্তৃপক্ষের নির্দেশ আছে। তাই কোনো কিছু বলতে পারব না।

গ্রুপটির মানব সম্পদ ও প্রশাসন প্রধান মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিনের স্বাক্ষরে কারখানা বন্ধের বিষয়ে নোটিস দেওয়া হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড ও এস আলম পাওয়ার প্ল্যান্ট লিমিটেডের সকল শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে অনিবার্য কারণবশত ২৫ ডিসেম্বর হতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারখানা বন্ধ থাকবে। তবে নিরাপত্তা বিভাগ, ডেলিভারি সেকশন ও জরুরি বিভাগ (ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মোতাবেক) খোলা থাকবে। কারখানা খোলার তারিখ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী নোটিসের মাধ্যমে জানানো হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের একজন কর্মকর্তা জানান, এস আলম গ্রুপের এই দুই কারখানায় নিয়োগপ্রাপ্ত এবং ক্যাজুয়াল মিলে ৭শ জন কর্মকর্তাকর্মচারী রয়েছেন। হঠাৎ কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন কারখানার শ্রমিকেরা। তবে নোটিস জারির পর কোনোরকম আন্দোলন হয়নি বলেও জানান তিনি।

এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের ডিজিএম রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা নোটিস পেয়েছি, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসরছে বন্দর ইয়ার্ডের ‘জঞ্জাল’
পরবর্তী নিবন্ধএকমাস রাতে ৮ ঘণ্টা করে বন্ধ থাকবে রেজু ব্রিজ