নগরীর মুরাদপুর মির্জারপুল এলাকায় ভ্যান গাড়িতে করে বাজার বসে প্রতিদিন বিকালে। স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাদের তুষ্ট করতে হয় ভাসমান এই বাজারের প্রত্যেককে। নয়তো উচ্ছেদ হতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় হকারদের থেকে চাঁদা তুলতেন স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা আরিফ গ্রুপ ও ওয়াহিদ গ্রুপ। চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। ঘটনার তিন দিন আগে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।
গত ১৭ নভেম্বর বিকালে মির্জারপুল এলাকায় আরিফকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করেন ওয়াহিদ। শুধু তাই নয়, গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়া আরিফের ওপর একের পর এক পাথর ছুড়তে থাকেন ওয়াহিদ। একপর্যায়ে আরিফ নিথর হয়ে পড়লে ওয়াহিদ প্রকাশ্যে রক্তমাখা দা হাতে চলে যান। রক্তে ভেজা আরিফকে মুমূর্ষু অবস্থায় প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে আরিফের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে তার পরিবার। দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজনকে কুপিয়ে আহত করার একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির আজাদীকে বলেন, ঘটনার পর বুধবার সন্ধ্যায় ওয়াহিদকে প্রধান আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেছে আরিফের পরিবার। আরিফকে হত্যার চেষ্টা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে আমরা বৃহস্পতিবার মূল হোতা ওয়াহিদ ও তার দুই সহযোগী নয়ন ও আকাশকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছি। আগামীকাল (রোববার) শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা এ ঘটনার নেপথ্যের কারণ জানতে পারব।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, মির্জারপুল এলাকায় ফুটপাতে দোকান বসিয়ে চাঁদা আদায় করে আসছেন স্থানীয় আরিফ ও ওয়াহিদ। চাঁদার ভাগ নিয়ে ইতোপূর্বে দুই গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়েছিল। কিছুদিন আগে ফুটপাতের দোকানগুলো তুলে দেয় পুলিশ। বুধবার সেখানে দোকান বসান আরিফ। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে ওয়াহিদ তার অনুসারীদের নিয়ে আরিফের ওপর হামলা চালান। খবর পেয়ে আরিফের অনুসারীরাও সেখানে জড়ো হয়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের একপর্যায়ে আরিফকে কুপিয়ে আহত করা হয়। সড়কে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ালে আশপাশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বন্ধ করে দেওয়া হয় দোকানপাট। প্রায় দশ মিনিট বন্ধ থাকে মির্জারপুল-মুরাদপুর সড়ক। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। ওয়াহিদ মহানগর ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য এবং এমইএস কলেজ ছাত্রলীগ নেতা। আহত আরিফের বিরুদ্ধে নগরীর শুলকবহর এলাকার মো. মাহফুজুর রহমান হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
আরিফের ভাই কামাল উদ্দিন জানান, চাঁদা না পেয়ে ওয়াহিদ ও তার অনুসারীরা তার ভাইকে কুপিয়ে আহত করেছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, সাদা পাঞ্জাবি পরা ওয়াহিদের মার খেয়ে রাস্তায় একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির নিচে লুটিয়ে পড়ে কালো শার্ট পরা আরিফ। দা হাতে আরিফকে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকেন ওয়াহিদ। আরিফ বারবার হাত-পা ছুড়ে ঠেকানোর চেষ্টা করলেও একপর্যায়ে নেতিয়ে পড়েন। তাতেও রাগ প্রশমিত হয়নি ওয়াহিদের। পাশে থাকা পাথর খণ্ড একের পর এক তুলে ছুড়ে মারতে থাকেন ক্ষতবিক্ষত আরিফের মাথায়।