এলিয়েন দ্বীপ সুকাত্রা

রিয়াজুল হক | বুধবার , ২৬ জুলাই, ২০২৩ at ৬:২৬ পূর্বাহ্ণ

শিরোনাম দেখে তোমরা নিশ্চয়ই একটু নড়েচড়ে বসেছো? কিছুটা ভয় ভয়ও লাগছে হয়তো। মনে প্রশ্ন জাগছে, তাহলে কি পৃথিবীতে এলিয়েনরা বাস করে? কোন দ্বীপে বাস করে তারা? কেমন দেখতে? এমন নানান প্রশ্ন তোমাদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইয়েমেনের একটি দ্বীপ আছে যা কিছু অদ্ভুতদর্শন উদ্ভিদ ও প্রাণির আবাসস্থল। পৃথিবীর অন্য কোথাও এ সকল প্রাণি এবং উদ্ভিদ দেখা যায় না। সেখানে গেলে সত্যিই মনে হবে বুঝি এলিয়েন দ্বীপে এসে পড়েছো। মনে হবে যেন বিজ্ঞানের কল্পকাহিনীর রাজ্যে প্রবেশ করেছো। দ্বীপটি শুধু যে বিচ্ছিন্ন তাই নয়, কিছু অদ্ভুত ধরনের গাছের কারণে দ্বীপটি আলাদা রকমের মনে হয়। এখানেই আছে সেই বোতল গাছ যা দেখে মনে হবে যেন একটি গাছ উপড়ে মাটিতে ফেলে রাখা হয়েছে। এই গাছের কাণ্ডের বেড় এক মিটারের মতো হয়। কি অদ্ভুতদর্শন মোটা গাছ তাই না? এছাড়াও সেখানে রয়েছে অদ্ভুত শিলা গঠন, পর্বত এবং উপহ্রদ। ইয়েমেন এশিয়া মহাদেশের একটি দেশ হলেও সুকাত্রা দ্বীপটি ভৌগলিক দিক থেকে পড়েছে আফ্রিকায়। অবস্থানের দিক থেকেও অদ্ভুত। তাই না? সুকাত্রা দ্বীপপুঞ্জ আরব সাগরের চারটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত যেগুলোর বেশিরভাগ অংশই পড়েছে ইয়েমেনে। ২০১৩ সালে এটিকে ইয়েমেনের একটি প্রদেশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

,৭৯৬ বর্গকিলোমিটার ক্ষেত্রফলের ভূমি বিশিষ্ট এ দ্বীপপুঞ্জ দৈর্ঘ্যে ১৩২ কিলোমিটার এবং প্রস্থে ৫০ কিলোমিটার। দ্বীপটি ইয়েমেন থেকে ৩৪০ কিলোমিটার দূরে আরব সাগরের পশ্চিমে আফ্রিকা মহাদেশের সোমালিয় উপকূলের কাছাকাছি অবস্থিত। এর রাজধানীর নাম হাদিবু।

অদ্ভুতদর্শন উদ্ভিদগুলোর কারণেই দ্বীপটি পরিচিতি পেয়েছে এলিয়েন দ্বীপ হিসেবে। এ দ্বীপের বেশির ভাগ উদ্ভিদই এন্ডেমিক অর্থাৎ স্থানিক। পৃথিবীর অন্য কোথাও এগুলোর দেখা পাওয়া যায় না। সুকাত্রা দ্বীপের ৮২৫ প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে ৩০৭টি প্রজাতিই স্থানীয়। ২০০৪ সালে ইউনেস্কোর লাল তালিকায় সুকাত্রার ৩টি অতিবিপন্ন এবং ২৭টি বিপন্ন উদ্ভিদের নাম রয়েছে।

এই দ্বীপের সবচেয়ে অদ্ভুত গাছ হলো ছাতাকৃতির ড্রাগনব্লাডেড ট্রি, ড্রাকেনা কিনাবারি। গাছটি থেকে লাল রঙের আঠালো পদার্থ বের হওয়া দেখে নিশ্চয়ই তোমরা ভয় পাবে। এমন কথা প্রচলিত আছে যে বহুকাল আগে ড্রাগনের রক্ত থেকে এই গাছের উৎপত্তি এবং সেই অনুযায়ী এর নামকরণ। এই গাছের আঠা কিন্তু রঙ তৈরিতে এবং বার্নিশের কাজে ব্যবহৃত হয়।

আরেকটি বিশেষ উদ্ভিদ হলো ডেন্ড্রোসসিয়াস নামের এক প্রকারের শশা গাছ। বিভিন্ন আকৃতির কাণ্ড লম্বা হয়ে চূড়া তৈরি করে যেখানে হলুদ, গোলাপী ফুল ফোটে। উভলিঙ্গ এই গাছের জন্ম এই দ্বীপের বয়সের দ্বিগুণ আগে বলে গবেষকদের ধারণা। ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এদের বংশবিস্তারের অনুকূল।

এছাড়াও রয়েছে পোমগ্র্যানেট নামের ফুলেল উদ্ভিদ। এটি আড়াই থেকে চার ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। সাধারণত ফুল এবং ফল হয় ডিসেম্বরজানুয়ারি মাসে। ফুলগুলো সাধারণত গোলাপি বা লালের কাছাকাছি রঙের হয় আর ফল পাকলে তা হলদেসবুজ রঙ ধারণ করে। এই গাছের কাঠ খুব শক্ত হয় এবং ছোটখাট আসবাবপত্র তৈরিতে ব্যবহৃতও হয়। এই গাছটি সুকাত্রার বিশেষ উদ্ভিদ হলেও হাওয়াইতে এর চাষের চেষ্টা চলছে।

মোট ৩১ প্রজাতির প্রাণির দেখা মিলবে এই দ্বীপে যেগুলোর মধ্যে ২৯টি প্রজাতিই স্থানীয়। স্কিংস, পাবিহীন টিকটিকি, নানা প্রকারের মাকড়শা এবং তিন প্রকারের বিশুদ্ধ পানির কাঁকড়ার দেখা মেলে এ দ্বীপে। স্তন্যপায়ী প্রাণী হিসেবে বাদুড় ছাড়া আর কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি এখানে। তোমাদের নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে সেই দ্বীপে মানুষ বাস করে কি না। আর তারা দেখতে কেমন। হ্যাঁ, সেখানে আমাদের মতো মানুষ বাস করে। তাদের পেশা মাছ ধরা, পশুপালন করা এবং খেজুর চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করা।

মৌসুমি আবহাওয়ার কারণে জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এই দ্বীপে জলপথে যাওয়া যায় না। বছরের অন্যান্য সময় জাহাজে করে আরব সাগর পাড়ি দিয়ে যাওয়া যায়। ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক একটি বিমানবন্দর স্থাপন করা হয়েছে সুকাত্রা দ্বীপে। ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হয়েছে। তবে এই এলাকার বাস্তুসংস্থানের কারণে দ্বীপের অভ্যন্তরে গণপরিবহনের সংখ্যা খুবই কম।

সুকাত্রায় বেড়াতে গেলে দ্বীপের পরিবেশগত ভারসাম্য যাতে নষ্ট না হয় সেদিকে কিন্তু নজর রাখতে হবে তোমাদের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহীরা চুরি
পরবর্তী নিবন্ধমোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারীর মৃত্যু