এলসিবিহীন গাড়ি আমদানির ঘটনার অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। কারা, কীভাবে এতগুলো গাড়ি এলসি না করে দেশে নিয়ে এলো তা নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থা অনুসন্ধান শুরু করেছে। একই সাথে চট্টগ্রাম কাস্টমস এবং বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও খোঁজ নেয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষ এলসিবিহীন গাড়ির ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার কথা জানিয়েছে। ইতোমধ্যে শিপিং এজেন্টদের তাদের জাহাজে বহনকারী গাড়ির বিএল কপি কাস্টমসে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে সাম্প্রতিক সময়ে বিপুল পরিমাণ গাড়ি খালাস করা হয়েছে। জাপান থেকে জাহাজে করে আনা এসব গাড়ির মধ্যে সাত শতাধিক গাড়ির এলসি নেই। এলসি না করে পণ্য আমদানির সুযোগ না থাকলেও আমদানিকারক, রপ্তানিকারক এবং শিপিং এজেন্সি মিলে এলসি ছাড়া বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৭৬৯টি দামি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি দেশে আনা হয়। জাপান প্রবাসী দুই বাংলাদেশি রপ্তানিকারক চট্টগ্রাম ও ঢাকার বেশ কয়েকজন আমদানিকারককে এলসিবিহীন গাড়িগুলোর শিপমেন্ট করে দেন। কথা ছিল গাড়িগুলো বন্দরে পৌঁছার আগেই এলসি পাঠিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু ডলার সংকটসহ দেশের ব্যাংকিং খাতে কড়াকড়ি আরোপের ফলে এসব গাড়ির এলসি করা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কোনো এলসি করার সুযোগ না থাকায় দেশের কয়েকজন প্রভাবশালী আমদানিকারক নানাভাবে চেষ্টা করেও বেসরকারি ব্যাংক থেকে এলসি করাতে পারেননি। এলসি করা সম্ভব না হলেও বন্দরে জাহাজ পৌঁছে যাওয়ার পর গাড়িগুলো খালাস করে ফেলা হয়। গাড়িগুলো চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের ইয়ার্ডে পৌঁছে যাওয়ার পর বিষয়টি গোপন রেখে এলসি খোলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর সেই পথ বন্ধ হয়ে যায়।
সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা আজাদীতে সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করার কথা উল্লেখ করে বলেন, ইতোমধ্যে আমরা সাম্প্রতিক সময়ে আমদানিকৃত সব গাড়ির তথ্য সংগ্রহ করেছি। কোন জাহাজ কতটি গাড়ি এনেছে, গাড়িগুলো কারা আমদানি করেছেন, এসব গাড়ি আমদানির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আমরা সংগ্রহ করছি। প্রত্যেকটি জাহাজের বিএল সংগ্রহ করে ইয়ার্ডে খালাসকৃত গাড়ির বিএল সংগ্রহ করছি।
তিনি বলেন, বেশ কয়েকজন আমদানিকারক আমাদের কাছে এলসিবিহীন গাড়ি আমদানির কথা স্বীকার করেছেন। তবে তারা এসব গাড়ি বন্দর থেকে বের করবেন না বলে জানিয়েছেন। গাড়িগুলো ফিরতি কোনো জাহাজে তুলে জাপানে পাঠিয়ে দেয়া হবে। অন্যথায় কাস্টমস জব্দ করবে। কাস্টমসের এক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি জানান, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং শুল্কায়ন ছাড়া বন্দরের ইয়ার্ড থেকে কোনো গাড়ি বের হওয়ার সুযোগ নেই।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেছেন, কে কীভাবে গাড়ি আমদানি করেছে সেটা ডেলিভারি নিতে আসার আগে আমাদের জানার কথা নয়। এলসিবিহীন গাড়ি আসার ব্যাপারটিও আমাদের অজানা। তবে এটা ঠিক যে, বন্দরে ইয়ার্ড থেকে এলসিবিহীন কোনো গাড়ি বের করার সুযোগ নেই। এসব গাড়ি সরকারই জব্দ করবে।
উল্লেখ্য, এলসিবিহীন প্রায় ২শ কোটি টাকা দামের গাড়িগুলো বন্দরের ইয়ার্ডে রয়েছে। এগুলো শুল্কায়নসহ আনুষাঙ্গিক প্রক্রিয়ার কোনো কাগজপত্র কাস্টমসে জমা দেয়া হয়নি।