এলপিজি ব্যবসায়ে নতুন অপারেটর বাজারে আসার সাথে সাথে মাথায় হাত পড়ে ডিস্ট্রিবিউটরদের। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, নতুন অপারেটর বাজারে আসলে তারা নিজেদের অংশীদারিত্ব তৈরি করার জন্য কম মূল্যে খালি বোতল সরবরাহ করে। এতে খালি বোতলের বাজারে ধস নামে, দাম কমে যায়। বড় অপারেটরদের অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে ডিস্ট্রিবিউটর থেকে শুরু করে ডিলাররা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
জানা যায়, তরলিকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) বর্তমানে দেশে গৃহস্থালি, হোটেল, রেস্তোঁরায় একটি জনপ্রিয় জ্বালানি। বর্তমানে ৫৭টি অপারেটর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকে লাইসেন্স নিলেও ২৭টি অপারেটর বাজারে তাদের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করেছে। বর্তমানে বেসরকারি উদ্যোক্তারা বছরে প্রায় ১০ লাখ টনের বেশি এলপিজি আমদানি করে বোতলজাত করে সাধারণ ভোক্তা পর্যায়ে সরবরাহ করছেন।
এলপিজি ডিস্ট্রিবিউটরদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে এলপিজির বাজারে যুক্ত হয়েছে ‘ফ্রেশ’ ব্রান্ডের এলপিজি। এরআগে থেকে এলপিজি সেক্টরের আরেক নতুন জায়ান্ট জেএমআই বাজারে এসেছে। বাজারে আসার সাথে সাথে নতুন প্রতিষ্ঠানগুলো কমদামে খালি সিলিন্ডার বাজারে ছাড়ে। এতে করে বাজারে অন্য ব্রান্ডের সিলিন্ডারের দামও কমে যায়। ডিস্ট্রিবিউটররা বলছেন, এলপিজি সেক্টরে প্রতিযোগিতার কারণে ডিস্ট্রিবিউটররা বেশি দামে কিনে কম দামে স্থানীয় এজেন্টদের এলপিজি সরবরাহ করে। আবার কোম্পানি থেকে বোতলগুলো কিনে নিতে হয় ডিস্ট্রিবিউটরদের। এসব খালি বোতল বাজারমূল্যে ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে একেকটি খালি বোতলের দাম এক থেকে দুইশ টাকা কমে যায়।
চকবাজার ও বাকলিয়া এলাকার রংধনু এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী মো. করিম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘বিএম কোম্পানির খালি সিলিন্ডার কোম্পানির মূল্য এক হাজার টাকা। কিন্তু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকা। অন্যসবগুলো ব্রান্ডের খালি বোতল কেনাবেচা হচ্ছে ৫-৭শ টাকায়। বর্তমানে বসুন্ধরা ৮৫০-৯০০ টাকা, পেট্রোম্যাঙ ৬০০-৬২০, জেএমআই ৫৫০-৬০০ টাকা, ফ্রেশের খালি বোতল ৫০০ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে। জেএমআইর বোতলের দাম প্রথম থেকেই কম।’
তিনি বলেন, ‘এখন নতুন নতুন কোম্পানি অপারেশনে আসার পর বাজার ধরার জন্য তাদের বোতলগুলো কমদামে নতুন ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছে বিক্রি করছে। এতে অন্য কোম্পানিগুলোর বোতলের দামও কমে যায়। এটাতে বড় ধরনের লোকসান গুণতে হয় ডিস্ট্রিবিউটরদের।’
হালিশহর এলাকার সুপার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির স্বত্ত্বাধিকারী জহুরুল হক জম্মু দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘এখন বাজারে খালি বোতলের মূল্য ৬২০-৬৩০ টাকা। এক মাস আগেও ৮০০ টাকার মতো ছিল। ওইসময় আমরা নতুন বোতল কিনেছি। কয়েকদিন আগে ফ্রেশ বাজারে খালি বোতল দেওয়ার পর দাম আবার কমে গেছে। গত মাসে যে বোতল ৮শ টাকায় কিনেছি, সেটি এখন ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করতে হচ্ছে ৬০০-৬৫০ টাকায়। এতে এপ্রিল মাসেও মোটা অংকের লোকসান গুণতে হয়েছে।’ তিনি বলেন, এমনিতেই দীর্ঘদিন থেকে কোম্পানির চাপে কেনামূল্যের চেয়েও কমে গ্যাস বিক্রি করে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। এখন সিলিন্ডারের মূল্য কমার কারণেও লোকসান গুণতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশের শীর্ষ একটি প্রতিষ্ঠানের অপারেশন ম্যানেজার দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘এলএনজি ব্যবসা নতুন মোবাইল অপারেটরের মতোই। মোবাইল অপারেটরগুলো বাজার ধরার জন্য যেমন কমদামে ভর্তুকিমূল্য সিম বিক্রি করে, ঠিক একইভাবে বাজারে গ্রাহক সৃষ্টির জন্য এলপিজি অপারেটররা ভর্তুকিমূল্যে সিলিন্ডার বিক্রি করে থাকে।’ তিনি বলেন, একেকটি নতুন বোতল ২২শ থেকে আড়াই হাজার টাকা। সেখানে নতুন বাজারে আসা অনেকে ৫-৭শ টাকাতেও ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছে বিক্রি করছে। এটা তাদের ব্যবসায়িক পলিসি। বাজারে যত বেশি সিলিন্ডার যাবে, তত বেশি এলপিজি বিপণনের বাজার তৈরি হবে। এখানে ডিস্ট্রিবিউটরদেরও কিছু ঝুঁকি তৈরি করে। কারণ একটি কোম্পানি কম দামে বোতল বাজারে ছাড়লে সংগতকারণে অন্য কোম্পানিগুলোর বোতলের দামও কমে যায়। এই লোকসান ডিস্ট্রিবিউটরদের কাঁধে চড়ে।’
এলপিজি গ্যাস পরিবেশক সমিতি চট্টগ্রামের সভাপতি খোরশেদুর রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘বিপিসির খালি সিলিন্ডার আড়াই হাজার টাকা। অথচ এখন বাজারে ওই দামে বোতল বিক্রি সম্ভব হয় না। আবার বেসরকারি অপারেটররা নিজেদের বাজার ধরার জন্য কম দামে খালি বোতল বিক্রি করছে। তারা হয়তো পরবর্তীতে গ্যাস বিক্রি করে ভর্তুকির টাকা বাজার থেকে তুলে নিতে পারবে। কিন্তু ডিস্ট্রিবিউটররা একটি বোতলে ১০-২০টাকা কমিশন পেয়ে থাকে। এখন বাজার উঠানামার কারণে শুধু খালি বোতলে লোকসান দিতে হচ্ছে। ডিস্ট্রিবিউটরদের পরবর্তীতে সেই ক্ষতি পোষানোর কোন সুযোগ নেই।’