রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সারি সারি লাশ আর স্বজনদের আহাজারি নাড়িয়ে দিয়েছে সবাইকে। ওই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ৪৫ জন (পরে বেড়ে ৪৬ হয়েছে) মানুষ মারা গেছেন, এর চেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে? অথচ ফায়ার এক্সটিংগুইশার লাগানো, অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে বারবার আমরা নির্দেশ দিচ্ছি। সেটা কিন্তু আর মানে না। অগ্নিকাণ্ডের পরদিন গতকাল শুক্রবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বীমা দিবসের অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন সরকারপ্রধান। খবর বিডিনিউজের।
তার আগে সকালে এক বিবৃতিতে নিহতদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। অগ্নিকাণ্ডে এত মানুষের প্রাণহানির পেছনে ভবনটির নির্মাণে ত্রুটি দেখছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বেইলি রোডে যে আগুনটা লাগল, সেখানে একটা বহুতল ভবন, কোনো ফায়ার এক্সিট নেই।
সবসময় আমাদের যারা আর্কিটেক্ট, তাদের অনুরোধ করি, আপনারা অন্তত পক্ষে যখন ঘরবাড়ি তৈরি করেন, একটু খোলা বারান্দা, ফায়ার এক্সিট বা ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু যারা (ভবন) তৈরি করতে চায়, আর্কিটেক্টরাও ওরকম ডিজাইন ঠিকমত করবে না। আবার মালিকরাও এক ইঞ্চি জায়গা ছাড়তে চায় না। অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের বীমার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি এখানে নিশ্চয় ইনস্যুরেন্স নেই, কাজেই তারা কিছু পাবেও না। এসব ক্ষেত্রে সচেতনতা খুব বেশি প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনটিতে আগুন লাগে। রাতে একের পর এক আসতে থাকে মৃত্যুর খবর। শুক্রবার সকালে সবশেষে ৪৬ জনের মৃত্যু তথ্য দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন। হাসপাতালে ভর্তি ১২ জনের অবস্থাও ভালো নয় বলে জানান তিনি। এ ধরনের যে কোনো দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে মানুষের বীমা করার প্রয়োজনীয়তা জাতীয় বীমা দিবসের অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
বিভিন্ন ধরনের বীমা মানুষকে নিরাপত্তা দিলেও এ নিয়ে অনেকে নানা ধরনের ব্যবসা করে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আগুন লাগিয়ে মোটা অংকের টাকা দাবি করা হয়। হয়ত কোথাও একটু আগুন লেগেছে। ক্ষতির পরিমাণ যতটা না, তার থেকে বেশি দাবি করে বসে থাকে। এই দাবি শুধু করে না, যারা যায় পরীক্ষা করতে, তাদেরও ম্যানেজ করে ফেলে। ফলে বিরাট অংকের টাকা বেরিয়ে যায়। এ রকম দু–একটা কেস আমি নিজে ধরে ফেলেছি। তখন ইন্সুরেন্স কোম্পানিকে আমি বলেছি, তদন্ত করে দেখব কতটুকু ক্ষতি হয়েছে। তদন্ত করতে গিয়ে এক ভয়াবহ চিত্র উঠে এল।
প্রতারণার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, প্রায়ই আমাদের বিভিন্ন গার্মেন্টে আগুন লাগত আপনারা জানেন। আমি বললাম, বিষয়টা কী? এত ঘনঘন আগুন লাগার কারণ কী। এজন্য আমি বললাম এখন দিবেন না, আমি একটু তদন্ত করি। আমরা তদন্ত শুরু করলাম। তদন্ত করতে গিয়ে কী বেরিয়ে এল জানেন? দেখা গেল ওই গার্মেন্টের এক কর্মীকে দিয়ে… তাকে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। একটা জায়গায় যেখানে কিছু ছিল না, যেখানে বসে নাস্তাপানি খেত, সেখানে কিছু জিনিস ছিল। সেই জায়গাটায় আগুন দিয়ে পরে ৪০ কোটি টাকা দাবি করল। এখন তো আমাদের ফরেনসিক বিভাগের তদন্তের একটা সুযোগ আছে আপনারা জানেন। কী কী জিনিস পুড়েছে এটার তদন্ত করতে হবে, এটা আমি বললাম। সব পরীক্ষা করা হল। দেখা গেল কিছু আবর্জনা রেখে ওই ফ্লোরটায় আগুন দেওয়া হল। তারপর ৪০ কোটি টাকা দাবি করা হল। ৪০ কোটি টাকার সম্পদ তো এখানে পোড়েনি, তাহলে কেন এত টাকা দাবি করবে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি কথাটা এই কারণে বলছি, আপনারা এই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেবেন এবং এই ধরনের ঘটনা যেন কেউ ঘটাতে না পারে। যদিও এখন আমরা অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা করেছি, কিন্তু মানুষ এত সচেতন না।
বীমার টাকা মানুষ যেন সহজে পায়, সেই তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বীমার দাবিগুলো যেন মানুষ সহজে পায়, এই রকম দুই নম্বরি যারা, তাদের কথা বলছি না। প্রকৃত পক্ষে যারা পায়, তারা যেনো সহজে পায়। দুই নম্বরি করে তারা ম্যানেজ করে সহজে পায়, তারা যেন সেটা না পায়। আর যারা প্রকৃত, ম্যানেজ করতে পারে না, তারা যেন দ্রুত সময়ে পায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। সেই দিকে দৃষ্টি দেবেন।