আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের দুই বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও ৩য় বারের মত আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর বিরুদ্ধে নিজ সমর্থককে আটকে রাখার অভিযোগ করেছেন এই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান।
রবিবার (৩ ডিসেম্বর) রাতে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ক্ষুদে বার্তা প্রেরণ করে এবং সোমবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এ সংসদীয় আসনের রিটার্নিং অফিসার ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের নিকট নৌকার প্রার্থী আবু রেজা নদভীর বিরুদ্ধে ডা. মিনহাজ এ অভিযোগ দেন।
রিটার্নিং অফিসার, চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গৃহীত অভিযোগে ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, আমি, ডা.আ ম ম মিনহাজুর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী, চট্টগ্রাম ১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া), এ মর্মে অভিযোগ করছি যে, আমার মনোনয়নপত্রে সংযুক্তি হিসেবে দাখিলকৃত এক শতাংশ সমর্থনকারী ভোটার তালিকার ক্রম ৩১০ সৈয়দুল আলম, সাং- পুটিবিলা, লোহাগাড়াকে (দ্বৈবচয়নে তিনি আমার ১০ জন সমর্থকের একজন) আমার প্রতিপক্ষ সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী আবু রেজা নেজামউদ্দীন নদভী, তার শহরস্থ চান্দগাঁও রুপালী আবাসিকের বাসার তৃতীয় তলার অফিস কক্ষের পাশের কম্পিউটার রুমে আটকে রেখেছেন এবং আজ মনোনয়নপত্র যাচাই বাচাইকালে আপনার কার্যালয়ে হাজির করে সাক্ষর দেননি মর্মে সাক্ষ্য প্রদানের জন্য চাপ দিতে বাধ্য করার চেষ্টা করছেন অথচ আমার এই সমর্থক গত ২.১২.২৩ তারিখ লোহাগাডা উপজেলায় স্ব-শরীরে উপস্থিত থেকে আমার সমর্থনে সাক্ষর করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তাকে আটকে রাখার ছবি এতদসঙ্গে প্রেরণ করছি।
এ প্রেক্ষিতে আমার সমর্থক সৈয়দুল আলমকে উদ্ধারপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও নির্দেশনা প্রদানের আবেদন করছি। উল্লেখ করা প্রয়োজন, মধ্যরাতে এ ঘটনা অবহিত হওয়ার কারণে আপনার কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ প্রদানের সুযোগ না থাকায় হোয়াটসআপ বার্তা প্রেরণের মাধ্যমে আপনার শরণাপন্ন হতে বাধ্য হয়েছি, মধ্যরাতে এ বার্তা প্রেরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম-১৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা.আ ম ম মিনহাজুর রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, গত রাতে আমি বিশ্বস্ত সূত্রে আমার সমর্থক সৈয়দুল আলমকে নদভী প্যালেসে আটকে রাখার খবর এবং ছবি পেয়েছি। এখনো পর্যন্ত সে কোথায় আছে খবর পাইনি, তাঁর সাথে কোন ধরনের যোগাযোগ করতে পারিনি। আমি শঙ্কা করছি আমার সমর্থককে ভয়ভীতি প্রদর্শন পূর্বক রিটার্নিং কর্মকর্তাকে মিথ্যা সাক্ষী দিতে বাধ্য করার চেষ্টা চালানো হবে অথবা গুম করা হবে। আমি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে জানিয়েছি এবং চট্টগ্রাম-১৫ আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি।
এছাড়াও আমি মৌখিক ভাবে বলেছি বিষয়টি সুষ্ঠ তদন্তের স্বার্থে চান্দগাঁও রুপালী আবাসিক এলাকার এবং আবু রেজা নদভীর বাড়ি নদভী প্যালেস এর সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করলে এর সত্যতা পাওয়া যাবে।
ডা. মিনহাজ বলেন, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর থেকে নদভী আমার সমর্থকদের উপর বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অমান্য করে এবং সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাঁধা সৃষ্টি করছেন। আমি বিষয়টির প্রতিকার চাই।
তিনি আরও বলেন, সংসদীয় আসন নং-২৯২, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান ও সিনিয়র সহকারী জজ শাহনেওয়াজ মনির এর কার্যালয়ে আমাকে আগামীকাল আমার অভিযোগের বিষয়ে সরাসরি অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে শুনানিতে অংশ নিতে বলেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এই আসনের আসনের দুই বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও ৩য় বারের মত আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী এমপি দৈনিক আজাদীকে বলেন, যেহেতু আমি এ আসনের দুইবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য সেই সুবাদে আমার বাড়িতে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসে তারমধ্যে কোনটা সৈয়দুল আলম অথবা কোনটা অন্য কেউ সেটা সবসময় জানার সুযোগ হয়না।
এছাড়াও আমি নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের কাগজপত্র নিয়েই ব্যাস্ত আছি, তার মধ্যে আমার বাসায় কে এসেছে, কে আসেনি এসব দেখার সুযোগ হয়না। আমি অথবা আমার কোন সমর্থক এই ধরনের কোন ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত নই। যেহেতু আমি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তাই আমার মানসম্মান নষ্ট করার কু-মানষে এবং আমার জনপ্রিয়তা নষ্ট করার অপচেষ্টায় আমার প্রতিপক্ষ প্রার্থীরা আমার বিরুদ্ধে এই ধরনের ষড়যন্ত্র ও প্রগাপন্ডা ছড়িয়ে দুর্নাম রটাচ্ছে। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে, মিথ্যা তথ্য জনসমক্ষে উপস্থাপন করে, আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালাচ্ছে, আমি এসব অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।