এম এ মালেক চট্টগ্রামের নক্ষত্র আজাদী চট্টগ্রামবাসীর মনের পত্রিকা

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভূমিমন্ত্রী

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২০ মার্চ, ২০২২ at ৮:০৭ পূর্বাহ্ণ

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী এবং এ পত্রিকার সম্পাদক এম এ মালেকের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। তিনি বলেন, এম এ মালেক চট্টগ্রামের আলোকিত নক্ষত্র, চট্টগ্রামের মুরুব্বি এবং চট্টগ্রামবাসীর রত্নের ধন। তিনি এমন একটি পত্রিকার সম্পাদক যেটা প্রকাশের পর থেকে এখনো নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। এটা চট্টগ্রামবাসীর মনের পত্রিকা। এম এ মালেকের একুশে পদক অর্জন আমাদের জন্য অহংকারের বিষয়।
গতকাল দুপুরে অনুষ্ঠিত দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেকের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। একুশে পদকপ্রাপ্তিতে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব এই সংবর্ধনা প্রদান করে। ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।
সংবর্ধিত অতিথি এম এ মালেক বলেন, আজাদীর কারণেই আমার আজকের অবস্থান। চট্টগ্রামবাসীর সুখ-দুঃখের কথা বলার জন্য চট্টগ্রাম থেকেই আজাদী প্রকাশ করা হচ্ছে। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ঢাকা থেকে বের করে জাতীয় পত্রিকা করা হচ্ছে না। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সভাপতি আলহাজ্ব আলী আব্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ। ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সহসভাপতি সালাহ্‌উদ্দিন মো. রেজা, সাবেক সভাপতি কলিম সরওয়ার, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সহসভাপতি শহীদ উল আলম,
সাবেক সহসভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, সিইউজের সাবেক সভাপতি এম নাসিরুল হক, চট্টগ্রাম সাংবাদিক কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির সাবেক চেয়ারম্যান মইনুদ্দীন কাদেরী শওকত, বিএফইউজের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসিফ সিরাজ ও তপন চক্রবর্তী।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, এম এ মালেক যে একুশে পদক পেয়েছেন সেটা আরো আগে পাওয়ার কথা ছিল। দেরিতে হলেও পাওয়ায় আমি আনন্দিত। বিশেষ করে আমাদের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পেয়েছেন, সেটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।
ভূমিমন্ত্রী বলেন, লোক দেখানো নয়, এম এ মালেক সত্যিকার অর্থেই আমার প্রতি আন্তরিক ছিলেন। আল্লাহর রহমতে আজকে আমি যে অবস্থানে এসেছি সেখানে ওনার অবদান আছে। এর ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, আমার ক্যারিয়ার শুরু হয় চট্টগ্রাম চেম্বার দিয়ে। সবচেয়ে কম বয়সে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি হয়েছিলাম। সেদিন আমি এ দুঃসাহস দেখিয়েছিলাম মালেক চাচাদের কারণে। এথিকস কী জিনিস সেটা মালেক চাচাদের কাছে সেদিন শিখেছিলাম। সুন্দর ও স্বচ্ছভাবে কীভাবে এগিয়ে যেতে হয় সেটা উনারা শিখিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, এম এ মালেকের পাওয়ার কিছু ছিল না। সারাজীবন দিয়েই গেছেন। যখন যেখানে গেছেন দিয়ে আসছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। যেখানে দায়িত্ব পালন করেছেন সেখানে গুণগত পরিবর্তন করেন। এ সময় উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, চিটাগং ক্লাবের সভাপতি ছিলেন এম এ মালেক। তিনি চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে সেখানে পরিবর্তনের হাওয়া লাগতে শুরু করে। উনার আমলে অনেক পরিবর্তন এসেছে ক্লাবে। গুণগত পরিবর্তন করেছেন। উনার পর যারা এসেছেন তারা সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছেন।
মন্ত্রী বলেন, যেখানেই থাকেন না কেন সবসময় চট্টগ্রামের প্রতি তার চিন্তা-ভাবনা কাজ করেছে। চট্টগ্রামকে কীভাবে উন্নত করা যায়, চট্টগ্রামের সামাজিক অবস্থান কীভাবে আরো বৃদ্ধি করা যায় সেটা নিয়ে ভাবেন এম এ মালেক। তার এ চিন্তার রিফ্লেকশন কিন্তু আজাদী পত্রিকায়ও লক্ষ্য করি।
এম এ মালেক যা বললেন : দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, যেকোনো কাজে লেগে থাকলে সাফল্য আসবে। পুরস্কারের আশা না করে লেগে থাকাটা সবচেয়ে ভালো। কারণ পরবর্তীতে সেটার বিচার এবং পর্যালোচনায় অবশ্য মূল্যায়িত হবে। পুরস্কারের আশা করলে বরং পুরস্কার পেতে আরো দেরি হবে। আপনি যদি নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেন তাহলে দেশ আপনাকে মূল্যায়ন করবে। তিনি বলেন, যে স্বপ্ন বাস্তবায়নে নেমেছেন সেটা বাস্তবে রূপ দিতে হলে লেগে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, প্রেস ক্লাবসহ চট্টগ্রামের যেসব অর্গানাইজেশনের সঙ্গে ছিলাম সবখানে চেষ্টা করেছি সাধ্যের মধ্যে যতটুকু পারি ততটুকু দিয়ে কাজ করতে। চেষ্টা ছিল ওই অর্গানাইজেশনের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি করার জন্য।
এম এ মালেক বলেন, একুশ আমাকে শিখিয়েছে মাথা নত না করার। সে সাহসটা আমি পেয়েছি আমার বাবার কাছ থেকে। তিনি ১৯৫২ সালে মাহবুব উল আলম চৌধুরী রচিত ভাষা আন্দোলনের প্রথম কবিতা ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ ছাপিয়ে দিয়েছিলেন। আমার বাবা কিন্তু জানতেন এ কবিতা ওই সময়ে ছাপানো মানে তৎকালীন পাকিস্তানি সরকারের চোখে রাষ্ট্রদ্রোহিতা। কিন্তু মাতৃভাষা নিয়ে বাবা কোনো সমঝোতা করেননি, মাথা নত করেননি। বাবা জানতেন মাতৃভাষাকে রক্ষা করতে হবে। পৃথিবীতে একমাত্র জাতি বাঙালি, যারা মাতৃভাষার জন্য বুকের রক্ত দিয়েছে।
একুশে পদকপ্রাপ্তিতে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, সবাই বলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু আমি মনে করি তিনি যুগ যুগান্তরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। হাজার বছর বললে তো সীমা টেনে দেয়া হয়। মনে হয় হাজার বছর আগে এ ধরনের বাঙালি ছিল।
তিনি বলেন, আমি সবসময় চেষ্টা করেছি দৈনিক আজাদীতে যারা আছেন তাদের সাথে নিয়ে চট্টগ্রামবাসীর সুখ-দুঃখের কথা প্রকাশ করার জন্য। আমাকে অনেকে বলেন, ঢাকা থেকে বের করলে আজাদী জাতীয় পত্রিকা হবে। আমি তাদের বলি, জাতীয় পত্রিকা করতে চাই না, আজাদী বিজাতীয় পত্রিকা হয়ে থাকুক। চট্টগ্রামের পত্রিকা করে রাখতে চাই। আমার বাবা চট্টগ্রামের সুখ-দুঃখের কথা বলার জন্য এ কাগজ বের করেছিলেন। ঢাকা থেকে বের করলে চট্টগ্রামের কথা বেশি করে লিখতে পারব না। তখন পুরো দেশের কথা বেশি করে লিখতে হবে। আজাদী চট্টগ্রামের কাগজ। চট্টগ্রামের কাগজ হয়েই থাকবে। কখনো ঢাকা থেকে বের করার চেষ্টা করব না। আমার ছেলেরাও ঢাকা থেকে বের করার প্রয়াস চালাবে বলে মনে করি না।
আজাদী সম্পাদক বলেন, নতুন যেসব পত্রিকা এসেছে তারা ভালো কিছু করার চেষ্টা করেছে। স্বাভাবিকভাবে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে। এটা দোষের না। এজন্য ঢাকা থেকে অনেকে সম্পাদক এনেছেন। কিন্তু আমরা কখনো সেই চেষ্টা করিনি। আমি মনে করি, পিছিয়ে থাকলেও চেষ্টা করলে চট্টগ্রামবাসীকে সাথে নিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে পারব। সে চেষ্টা নিষ্ফল হয়নি। আমি গর্ব করে বলতে পারি, চট্টগ্রামের এক নম্বর কাগজ হচ্ছে দৈনিক আজাদী।
অন্যান্য : প্রেস ক্লাব সভাপতি আলহাজ্ব আলী আব্বাস বলেন, এম মালেকের মতো গুণী মানুষ শতাব্দীর মধ্যে আসেন। যুগে যুগে আসেন না। যোগ্য ব্যক্তি এম এ মালেককে উপযুক্ত পুরস্কার দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামবাসীকে সম্মানিত করেছেন। তিনি বলেন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ভূমি মন্ত্রণালয়ের জন্য নিরলসভাবে যে সকল কাজ করে যাচ্ছেন এতে বাংলাদেশের মানুষ ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা থেকে মু্‌ক্ত হবেন বলে আশা করি।
সাবেক সভাপতি কলিম সরওয়ার বলেন, চট্টগ্রামের স্বার্থ রক্ষা হবে বা ক্ষুণ্ন হচ্ছে এমন কোনো বিষয় আজাদী পত্রিকা মিস করেছে তেমন ঘটনা ঘটেনি। নগরের এমন কোনো ঘর বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নাই যেখানে আজাদীর বিচরণ নাই।
শহীদ উল আলম বলেন, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক সুন্দর মনের মানুষ। তাকে সংবর্ধিত করে আমরা আনন্দিত। তার দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ বলেন, ৬২ বছর ধরে দৈনিক আজাদী পত্রিকার মাধ্যমে চট্টগ্রামের উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন এম এ মালেক।
আসিফ সিরাজ বলেন, এম এ মালেকের অর্জনে চট্টগ্রামবাসীও গর্বিত।
এম নাসিরুল হক বলেন, আজাদীর মাধ্যমে চট্টগ্রামের দাবি-দাওয়া নিয়ে দৈনিক আজাদী সবসময় সোচ্চার ছিল।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সহসভাপতি স ম ইব্রাহীম, অর্থ সম্পাদক রাশেদ মাহমুদ, ক্রীড়া সম্পাদক দেবাশীষ বড়ুয়া দেবু, সমাজসেবা ও আপ্যায়ন সম্পাদক মো. আইয়ুব আলী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আলীউর রহমান, কার্যকরী সদস্য শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার, দেবদুলাল ভৌমিক, মনজুর কাদের মনজু ও আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে এম এ মালেককে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। উত্তরীয় পরিয়ে দেন প্রেস ক্লাব সভাপতি আলহাজ্ব আলী আব্বাস। প্রধান অতিথি সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করেন এম এ মালেক। উত্তরীয় পরিয়ে দেন প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা থাকবে ২০ রমজান পর্যন্ত
পরবর্তী নিবন্ধউচ্চতার গ্যাঁড়াকলে আটকা অনেক রেলসেতু