এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের অধিকার রক্ষায় একাট্টা চট্টগ্রাম

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার , ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৭:১৫ পূর্বাহ্ণ

দেশের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ন নগরী চট্টগ্রাম। কিন্তু খেলাধুলার দিক থেকে দেশের এক নাম্বার চট্টগ্রাম। দেশের প্রধান নগরী অর্থাৎ রাজধানী ঢাকার সব খেলাধুলা আয়োজন করে বিভিন্ন ফেডারেশন। কিন্তু বাকি ৬৭ জেলার মধ্যে খেলাধুলা আয়োজনের দিক থেকে সবার উপরে চট্টগ্রাম। সারা বছর প্রায় ৩০টির মত ইভেন্ট আয়োজন হয় চট্টগ্রামে। আর এসব ইভেন্ট আয়োজনে চট্টগ্রামের একমাত্র ভরসা এম এ আজিজ স্টেডিয়াম। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে এই এম এ আজিজ স্টেডিয়াম ২৫ বছরের জন্য দিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। যেখানে ফিফার অর্থায়নে করা হবে নানা সংষ্কার কাজ। আর এরপর এই মাঠ কেবলই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের প্রয়োজনে ব্যবহার করা হবে। যেখানে থাকবে না চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার কোন অধিকার। এই স্টেডিয়ামটি পরিণত হবে একটি আন্তর্জাতিক ভেন্যুতে। ফলে চট্টগ্রামের খেলাধুলা বলা যায় একরকম বন্ধই হয়ে যাবে। কারণ এই মাঠ ছাড়া চট্টগ্রামের খেলাধুলা করার মত আর কোন মাঠ নেই। আর ঠিকমত খেলাধুলা হতে না পারলে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার আওতাভুক্ত ক্লাবগুলো হারাবে তাদের অস্তিত্ব। বন্ধ হয়ে যাবে সব ইভেন্ট মিলিয়ে প্রায় সহস্রাধিক ক্রীড়াবিদের জীবিকার পথ। সে সাথে আরো কয়েকশ কোচ, কর্মকর্তা এবং স্টাফের। সবচাইতে বড় কথা বন্ধ হয়ে যাবে চট্টগ্রাম থেকে খেলোয়াড় সৃষ্টির সব রাস্তা। সরকারের এমন সিদ্ধান্তের বিপক্ষে তাই একাট্টা চট্টগ্রামের খেলোয়াড়, ক্রীড়া সংগঠক, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সাংবাদিক এমনকি সুশীল সমাজ। প্রায় ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই স্টেডিয়ামে সবগুলো ইভেন্টের সহাবস্থান চলে আসছে। শুধু তাই নয়, নানা ইভেন্টের আন্তর্জাতিক ম্যাচ বা টুর্নামেন্টও হয়েছে।

দেশের প্রথম টেস্ট জয়ের স্মৃতিময় মাঠ এটি। হয়েছে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপের মত আন্তর্জাতিক ফুটবল আসর। এনসিএল, বিপিএলের মত আসরও বসেছে। হয়েছে একাধিক ইভেন্টের অনেক জাতীয় আসর। এমন একটি সার্বজনীন কেন্দ্রকে একতরফা করে ফেলাটা মানতে পারছেণা চট্টগ্রামের মানুষ। বিশেষ করে ক্রীড়া সংগঠকরা। কারন এই ক্রীড়া সংগঠকদের ঘামে শ্রমে এবং চট্টগ্রামের মানুষের ভালবাসায় এই এম এ আজিজ স্টেডিয়ামকে করা হয়েছিল টেস্ট ভেন্যু। দেশের রাষ্ট্রীয় নানা কর্মসুচির একমাত্র কেন্দ্রও এই এম এ আজিজ স্টেডিয়াম। তাই যেকোন মূল্যে এই স্টেডিয়াম হাতছাড়া করতে চায় না চট্টগ্রামের ক্রীড়া সংগঠকরা। তাইতো আজ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে একাট্টা হয়েছে চট্টগ্রামের মানুষ। এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার মিলিত হয়েছিল চট্টগ্রামের ক্লাব গুলোর প্রতিনিধিরা। তারা এক বাক্যে এনএসসির এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা কওে অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আবেদন জানান। পরে কর্মকর্তারা দেখা করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের সাথে। মেয়র ক্রীড়া সংগঠকদের সাথে শুধু সহমতই পোষণ করেননি, এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যেকোন আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রভাগে থাকারও আশ্বাস দেন। তিনি ক্রীড়া সংগঠকদের বলেন ধীরে ধীরে আন্দোলনকে বেগবান করতে হবে। মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন এমনকি আরো বড় কর্মসূচি। চট্টগ্রামের সম্পদ এম এ আজিজ স্টেডিয়াম রক্ষায় সব ধরনের কর্মসূচিতে তিনি থাকবেন বলেও আশ্বাস দেন। তিনি বলেন সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই লড়াইয়ে থাকতে হবে। প্রয়োজনে ফুটবলার, ক্রিকেটার সহ বিভিন্ন ইভেন্টের খেলোয়াড় সংগঠকরা আলাদা আলাদা ভাবে কর্মসুচি পালন করবে। আর সে সব কর্মসুচিতে সবাইকে একসাথে থাকতে হবে। একই সাথে আলোচনার পথেও হাটতে হবে। যদি আলোচনায় সুফল না আসে তাহলে গড়ে তুলতে হবে কঠোর আন্দোলন। এদিকে গত মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রামে বিপিএল কাভার করতে আসা বিভিন্ন গনমাধ্যমের সদস্যদের সাথে মতবিনিময় করেছিল

চট্টগ্রামের ক্রীড়া সংগঠকরা। যেহেতু ঢাকা থেকে আসা বেশিরভাগ সাংবাদিক চট্টগ্রামের খেলাধুলা সম্পর্কে অবগত আছেন তাই তাদেরকে এই বিষয়টি সঠিক এবং জোরালো ভাবে তুলে ধরার আহবান জানানো হয় চট্টগ্রামের ক্রীড়া সংগঠকদের পক্ষ থেকে। এম এ আজিজ স্টেডিয়াম ফুটবল ফেডারেশনকে দিয়ে দিলে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনে যে মারাত্নক প্রভাব পড়বে তা সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করা হয়। তুলে ধরা হয় কিভাবে বন্ধ হয়ে যাবে চট্টগ্রামের খেলাধুলা তার চিত্রও। পরিষ্কার ধারনা দেওয়া হয় এই সিদ্ধান্তের ফলে শুধু অন্যসব ইভেন্ট নয় চট্টগ্রামের ফুটবলও বন্ধ হয়ে যাবে। বছরে কয়েকটি ম্যাচের জন্য একটি জেলার সবধরনের খেলাধুলা বন্ধ হয়ে যাবে সেটা নিশ্চয়ই চান না দেশের ক্রীড়া সাংবাদিকরাও। আর এটি এমন একটি জেলা যেখানে সারা বছরই আয়োজিত হয় খেলাধুলা। দেশের মৃতপ্রায় অন্য কোন জেলা নয় চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামের ক্রীড়া সংগঠকরা আহবান জানান দেশের অন্য কোথাও এই স্টেডিয়াম নির্মান করতে বা অন্য কোন জেলার স্টেডিয়ামকে সংষ্কার করে তাতে ফুটবল আয়োজনের। আর চট্টগ্রামে যদি করতে চান তাহলে চট্টগ্রাম শহরে এবং শহরের বাইরে অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে সরকার চাইলে নিমিষেই সুন্দর এবং আধুনিক স্টেডিয়াম নির্মান করতে পারে। কিন্তু এম এ আজিজ স্টেডিয়ামকে শুধু ফুটবলের জণ্য দেওয়া হয়ে তাও ২৫ বছরের জন্য, সেটা চট্টগ্রামের ক্রীড়া সংগঠক থেকে শুরু করে চট্টগ্রামের মানুষ কখনোই মেনে নেবে না। তাই তারা সরকার এধরনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহবান জানান। মঙ্গলবার রাতের মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সহ সভাপতি এডভোকেট শাহীণ আফতাবুর রেজা চৌধুরী, সৈয়দ আবুল বাশর, বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারন সম্পাদক সিরাজুদ্দিন মো. আলমগীর, সিজেকেএস এর সাবেক অতিরিক্ত সাধারন সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম, সিজেকেএস কাউন্সিলর আহসান ইকবাল চৌধুরী আবীর, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি, চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ। মত বিনিমময় সভায় দৈনিক প্রথম আলোর ক্রীড়া সম্পাদক তারেক মাহমুদ বলেন বিষয়টি নিয়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এবং সরকারের উপর মহলের সাথে আলোচনা করে সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে। আলোচনার পথ যেকোন সময় খোলা থাকে। এসময় উপস্থিত ছিলেন সিজেকেএস এর সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন মো, জাহাঙ্গীর, ক্রিকেট সম্পাদক আবদুল হান্নান আকবর এবং জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক ওয়াহিদ দুলাল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএকদিনেই ডাবল হতাশা সাগরিকার দর্শকদের
পরবর্তী নিবন্ধসিনেমার গানে কণ্ঠ দিলেন মোশাররফ, কথা-সুরও নিজের