গত কিছুদিন ধরে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনে সবচাইতে আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম। যেহেতু চট্টগ্রামের খেলাধুলার একমাত্র জায়গা এই স্টেডিয়ামটি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে ২৫ বছরের জন্য বরাদ্দ দেওয়ার প্রতিবাদে যেন ফুসে উঠেছে চট্টগ্রাম। ক্রীড়াবিদ, ক্রীড়া সংগঠক, ক্রীড়ামোদি এবং সাধারণ মানুষ সবাই এই বরাদ্দের বিরুদ্ধে এক কাতারে এসে দাঁড়িয়েছে। এই ইস্যুতে চট্টগ্রাম যেন অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে। যেন ফুসে উঠেছে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গন। প্রতিবাদ চলছে নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। আগের চট্টগ্রামের ক্লাব কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন এম এ আজিজ স্টেডিয়াম জেলা ক্রীড়া সংস্থারই থাকবে। এমন উত্তপ্ত অবস্থায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের দুই কর্মকর্তা এম এ আজিজ স্টেডিয়াম পরিদর্শনে আসার ঘোষণা দেয় বাফুফে। আর তাতে যেন আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠে পরিস্থিতি। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে মানব বন্ধন করে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ। দলমত নির্বিশেষে সবাই এক কাতারে দাঁড়িয়ে যায় নিজেদের স্টেডিয়াম রক্ষায়। বিশেষ করে ক্রীড়াবিদরা তাদের একমাত্র সম্বলটি যেন হারাতে চায়না। তাইতো ক্ষুদে ফুটবলার, ক্রিকেটার থেকে শুরু করে নানা ইভেন্টের খেলোয়াড়রা সামিল হয় এই মানব বন্ধনে। সাথে ছিল স্টেডিয়াম রক্ষা কমিটির ব্যানারে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের ক্রীড়ামোদি মানুষ। যেখান থেকে হুমকি দেওয়া হয় এই স্টেডিয়াম কোন একক ইভেন্টের জন্য বরাদ্দ দেওয়া যাবেনা। এই বরাদ্দ বাতিল করতে হবে। অন্যথায় আরো কঠোর আন্দোলন হবে।
সকালে মানব বন্ধন শুরু করে চট্টগ্রাম স্টেডিয়াম রক্ষা কমিটি। এরপর দলে দলে আসতে থাকে বিভিন্ন বয়সী এবং বিভিন্ন ইভেন্টের ক্রীড়াবিদরা। মানব বন্ধনে যোগ দিতে থাকে ক্রীড়া সংগঠক এবং ক্রীড়ামোদি মানুষজন। এক পর্যায়ে মানব বন্ধন পরিণত হয় জন সমাবেশে। আর সে সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর বলেছেন, এম এ আজিজ স্টেডিয়ামকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নিকট ২৫ বছরের জন্য লীজ দেয়ার সিদ্ধান্তে চট্টগ্রামের সকল ক্লাব ও ক্রীড়ামোদী জনগণ হতবাক হয়েছে। এই স্টেডিয়ামের সাথে চট্টগ্রামবাসীর প্রাণের সম্পর্ক।ষ্টেডিয়াম বরাদ্দের ঘোষণার পর থেকে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনের মানুষ ক্ষোভে ফুসে ওঠেছে। চট্টগ্রামের ক্রীড়া সংগঠকদের সাথে আলোচনা না করে ঐতিহ্যবাহী এই স্টেডিয়ামকে বরাদ্দ দেওয়া চট্টগ্রামবাসী কোনদিন মেনে নেবে না। অবিলম্বে এই চুক্তি বাতিল করতে হবে। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করেন। এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের চুক্তি বাতিল না করলে চট্টগ্রামবাসীকে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে খেলাধুলা বন্ধ হলে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন খেলা সমূহের খেলোয়াড়, কোচ, কোচিং স্টাফ সহ প্রায় সাত হাজারের অধিক পরিবার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাফুফেকে মাঠটি বরাদ্দ দিলে ফুটবল ছাড়া অন্যান্য ৩০টি খেলার স্থানীয় টুর্নামেন্ট এবং এইসব ইভেন্টের অনুশীলন কর্মকান্ডও বন্ধ হয়ে যাবে। অন্যদিকে যুব সমাজ মাদকাসক্ত সহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত হওয়ার আশংকা রয়েছে। আমরা বলতে চাই, চট্টগ্রামের বৃহত্তর স্বার্থে এ মাঠটি শুধুমাত্র চট্টগ্রামের খেলোয়াড়দের জন্যই ব্যবহৃত হবে।
মানব বন্ধন কর্মসুচিতে বক্তব্য রাখেন সাবেক ফুটবলার হাফিুজর রহমান, ফ্রেন্ডস ক্লাবের সাবেক সভাপতি এডভোকেট শাহীন আফতাবুর রেজা চৌধুরী, চট্টগ্রাম মোহামেডানের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম, ফ্রেন্ডস ক্লাবের স্টেডিয়াম প্রতিনিধি সৈয়দ আবুল বশর, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি, সাবেক কাউন্সিলর মাহবুব আলম, নিয়াজ মো. খান, ক্রীড়া সংগঠক মশিউল আলম স্বপন, বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিরাজ উদ্দিন মো. আলমগীর, বাকলিয়া একাদশের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, শতদল ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন মো. জাহাঙ্গীর, নওজোয়ান ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আ ন ম ওয়াহিদ দুলাল, নবীন মেলার সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ, সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার শহীদুর রহমান, হকি কোচ মহসিন চৌধুরী, পেশাজীবী নেতা ইঞ্জি. বেলায়েত হোসেন, ইঞ্জি. জানে আলম সেলিম, ক্রীড়া সংগঠক ইদ্রিস আলী, এমদাদুল হক বাদশা, জাতীয় ক্রিকেটার ইয়াসির আলি রাব্বি, সাবেক ক্রিকেটার আবদুল আহাদ রিপন, সিজেকেএস কাউন্সিলর আবু শামা বিপ্লব, জাতীয়, সাবেক ক্রিকেটার মাসুম উদ্দৌলাহ, মোহামেডান ব্লুজের কাউন্সিলর সৈয়দ জিয়াউদ্দিন সোহেল, সাবেক জাতীয় সাঁতারু মাহবুবুর রহমান সাগর, নারী নেত্রী ছকিনা বেগম, শামসুন্নাহার প্রেমা, কামরুন্নাহার, রোটারিয়ান জসিম উদ্দিন চৌধুরী, ক্রিড়া সংগঠক শাহেদ আকবর, মো. মিল্টন, এন মো. রিমন, জহির উদ্দিন বাবর প্রমূখ। অনুষ্টান পরিচালনা করেন মো. কামরুল ইসলাম ।
সকালের পরিবর্তে বিকেলে এলেন বাফুফের দুই কর্মকর্তা : আগের দিনই চিটির মাধ্যমে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন জানিয়ে দিয়েছিল তাদের দুই কর্মকর্তা এম এ আজিজ স্টেডিয়াম পরিদর্শন করতে আসবে মঙ্গলবার। বেল ১২ টায় তাদের আসার কথা ছিল। থাকার কথা ছিল রাত ৮টা পর্যন্ত। কিন্তু সকাল থেকে স্টেডিয়াম এলাকার উত্তপ্ত পরিস্থিতির খবর পেয়ে বাফুফের দুই কর্মকর্তা অনেকটা চুপিসারে আসেন বিকেল তিনটার দিকে। এই দুই কর্মকর্তা হলেন ম্যানেজার কম্পিটিশন জাবের বিন তাহের আনসারী এবং বাফুফের এসিসটেন্ট ম্যানেজার প্রজেক্ট তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী। অনেকটা চুপিসারে এই দুই কর্মকর্তা দ্রুত স্টেডিয়ামের তিন তলায় জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যালয়ে চলে যান। আর তাদের উপস্থিতির খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে মাঠে এবং মাঠের বাইরে অনূশীলনরত ক্ষুদে ক্রীড়াবিদরা ব্যানার নিয়ে দাড়িয়ে যায় এবং গো ব্যাক বাফুফে স্লোগান দিতে থাকে। অবস্থা টের পেয়ে এই দুই কর্মকর্তা খুব দ্রুত স্টেডিয়াম ত্যাগ করেন। যদিও তারা জেলা ক্রীড়া সংস্থার অফিস কর্মীদের বলেছিলেন আগামী মে মাসে একটি আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট হবে আর সে টুর্নামেন্ট এই মাঠে করা যায় কিনা তা দেখতে এসেছিলেন। কিন্তু ক্রীড়াবিদদের অবস্থা দেখে তারা দ্রুত স্টেডিয়াম ত্যাগ করে সরাসরি বিমান বন্দরের দিকে চলে যায়।
ভুল বুঝতে পেরেছে ফুটবলাররা। রাস্তায় নামবেন তারাও ঃ এম এ আজিজ স্টেডিয়াম ফুটবল ফেডারেশনকে বরাদ্দ দেওয়ার কথা শুনে অনেক ফুটবলারই খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবতা তাদের জানা ছিলনা। এই বরাদ্দের ফলে স্থানীয় ফুটবলও একরকম নিষিদ্ধ হয়ে যাবে এই মাঠে। যেমনটি ক্রিকেট আয়োজন করা যাচ্ছেনা জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। এটা জানার পর গতকাল বেশ কয়েকজন সাবেক ফুটবলার এবং ফুটবল সংগঠক বলেন তাহলে আমরাও নামব রাস্তায়। স্বাভাবিক নিয়মে যদি আমরা স্টেডিয়াম ব্যবহার করতে না পারি তাহলে এই বরাদ্দের দরকার নাই। তারা বলেন আমরা কাল(আজ) সভায় বসব। এরপর আমরাও রাস্তায় নামব এই বরাদ্দ বাতিলের দাবিতে।
দেখা নেই ডিএফএ নেতাদের : বাফুফেকে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম বরাদ্দ দেওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই ফুটবলার কিংবা ফুটবল সংশ্লিষ্টরা খুশি হবেন সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমজনতা যেখানে এই বরাদ্দের বিরোধিতা করে রাস্তায় নেমে এসেছে দলমত নির্বিশেষে সেখানে দেখা নেই জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের। গতকাল ডিএফএ এর দুজন কর্মকর্তাকে দেখা গেছে মানব বন্ধনে। সভাপতি, সহ সভাপতি, কোষাধ্যক্ষ সহ বেশিরভাগ ডিএফএ কর্মকর্তা মাঠে নেই। গতকাল ক্রীড়া সংগঠকরা অভিযোগ করেন ডিএফএ সভাপতি এবং সহ সভাপতি সহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা আমজনতার আন্দোলনের বিরোধিতা করছেন। প্রকারান্তরে তারাই বাফুফে কর্মকর্তাদের কাছে এখানকার সব খবর পৌছে দিচ্ছেন। ক্রীড়া সংগঠকরা বলেন তারা এই আন্দোলনে এসে অণ্তত তাদের পক্ষের যুক্তিওতো তুলে ধরতে পারে। অথচ তারা বাইরে থেকে কলকাটি নাড়ছে যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।