এবার মীমাংসার উদ্যোগ মন্ত্রণালয়ের, বৈঠক ৬ মে

অনবোর্ড হ্যান্ডলিং রেট নিয়ে শিপিং এজেন্ট-বার্থ অপারেটর বিরোধ

হাসান আকবর | সোমবার , ২৮ এপ্রিল, ২০২৫ at ৬:১০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম সুষ্ঠু ও নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিচালনা, বাজারে পণ্যপ্রবাহ ঠিক রাখা এবং আমদানিরপ্তানি কার্যক্রম নিশ্চিত রাখতে শিপিং এজেন্ট ও বার্থ অপারেটরদের বিরোধ মীমাংসার উদ্যোগ নিয়েছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। চট্টগ্রাম বন্দরে অনবোর্ড লোড এবং খালি কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের বিদ্যমান দরের সাথে যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য হারে দর নির্ধারণ নিয়ে বিরোধে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছিল। বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ একাধিকবার বৈঠক করে। তবে দুই পক্ষের বিরোধ মীমাংসা করতে না পেরে মন্ত্রণালয়ের শরণাপন্ন হয়। এরই প্রেক্ষিতে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) . সাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে আগামী ৬ মে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। উক্ত বৈঠকে গ্রহণযোগ্য দর নির্ধারণ করা হলে বেশ কিছুদিন ধরে চলা বিরোধের অবসান হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। বিরোধের কারণে গত বেশ কিছুদিন ধরে থেমে থেমে চলা ‘গো স্লো’র প্রেক্ষিতে বন্দরে কন্টেনার হ্যান্ডলিংসহ অপারেশনাল কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছিল।

সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের জেনারেল কার্গো বার্থের ৬টি জেটিতে কন্টেনার জাহাজ হ্যান্ডলিং করা হয়। ছয়টি বার্থ অপারেটর প্রতিষ্ঠান এসব জেটিতে বার্থিং নেওয়া জাহাজের কন্টেনার হ্যান্ডলিং করে। প্রতিটি বার্থে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ে দুই ভাগে কাজ হয়। কন্টেনার হুক পয়েন্ট থেকে জাহাজে ওঠানোনামানোর (অনবোর্ড হ্যান্ডলিং) কাজ করা হয় শিপিং এজেন্টদের পক্ষ থেকে। হুক পয়েন্ট থেকে ইয়ার্ড পর্যন্ত কাজ করা হয় বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষে। অনবোর্ড হ্যান্ডলিংয়ের পাশাপাশি বার্থ অপারেটরের কর্মচারীরা কার্গো শিপমেন্ট, ইমপোর্ট বা এঙপোর্ট পারশিমন, ডিপো থেকে কন্টেনার কল, ভারী পণ্য বোঝাই কন্টেনার আগে জাহাজিকরণসহ বেশ কিছু বাড়তি কাজ করে দেয়। দীর্ঘদিন ধরে এই নিয়মে অনবোর্ড কন্টেনার হ্যান্ডলিং চলে আসছে। বার্থ অপারেটর প্রতিষ্ঠানকে অনবোর্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য মাশুল পরিশোধ করে শিপিং এজেন্ট বা ভ্যাসেল অপারেটর। অপরদিকে হুক পয়েন্ট থেকে ইয়ার্ডে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের মাশুল পরিশোধ করে চট্টগ্রাম বন্দর। দুটি মাশুলই নির্ধারিত। নির্ধারিত হারে বার্থ অপারেটররা তাদের কাজের মাশুল পেয়ে থাকে।

গত বেশ কিছুদিন ধরে অনবোর্ড দর নিয়ে বার্থ অপারেটর এবং শিপিং এজেন্টদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। বার্থ অপারেটররা গত কয়েক মাস ধরে মাশুল বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিল। মাশুল বাড়ানোর দাবিতে হ্যান্ডলিং কাজে অঘোষিত গো স্লোর মতো কর্মসূচি চলছে। একই সাথে গ্যাং কম বুকিং দেওয়া, ট্রেইলর ঠিকমতো না চালানোর মতো কার্যক্রমও চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয় শিপিং এজেন্টদের পক্ষ থেকে। বার্থ অপারেটর এবং শিপিং এজেন্টদের মধ্যে পারিশ্রমিক বাড়ানোর এই বিরোধের জের ধরে বন্দরে জাহাজের অবস্থানকাল বেড়ে যাওয়া ছাড়াও আমদানিরপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার উদ্যোগ নিলেও দুই পক্ষের বিরোধ না মেটায় পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেনি।

বার্থ অপারেটরদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের সময়কালে যে দর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে সেই দরে তাদেরকে এখনো কাজ করতে হচ্ছে। ১৮ বছরে খরচ বেড়েছে, জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে; কিন্তু অনবোর্ড হ্যান্ডলিংয়ে বার্থ অপারেটরদের মাশুল বাড়েনি। তারা বলেন, অনবোট হ্যান্ডলিংয়ের জন্য যে মাশুলটি দেওয়া হয় তাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর ৪০ শতাংশ শ্রমিকের খরচ এবং বাকি ৬০ শতাংশ বার্থ অপারেটরের মালিকের; যা দিয়ে বার্থ অপারেটররা ইকুইপমেন্টসহ বিভিন্ন খরচ মিটিয়ে থাকেন। শিপিং এজেন্টরা কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে শ্রমিকদের ৪০ শতাংশের উপর প্রতি বছর ১০ শতাংশ হারে বাড়ালেও বাকি ৬০ শতাংশের উপর বাড়াননি। ২০০৭ সালের আগে তারা যেখানে প্রতি কন্টেনার অনবোট হ্যান্ডলিংয়ের জন্য ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা পেতেন সেখানে বর্তমানে পাচ্ছেন সর্বমোট ৫৫৯ টাকা ৫১ পয়সা করে। এতে করে প্রতিটি বার্থ অপারেটর প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছে বলেও বার্থ অপারেটর এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। বিষয়টি তারা বন্দর কর্তৃপক্ষকে একাধিক চিঠি দেয়। বন্দর কর্তৃপক্ষ বৈঠকও করে।

এসব বৈঠকে বার্থ অপারেটরদের অনবোর্ড হ্যান্ডলিং রেইট বঙপ্রতি ৫ ডলার বা ৬০০ টাকা হারে বাড়ানোর দাবি করে। পরবর্তীতে তারা বঙপ্রতি ৩৫০ টাকা হারে বর্ধিত করার দাবি জানায়। বন্দর কর্তৃপক্ষ উভয় পক্ষের সাথে আলোচনা এবং সার্বিক দিক বিবেচনা করে অনবোর্ড লোড এবং খালি কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের বিদ্যমান দরের সাথে ২০৫ টাকা বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত প্রদান করে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তও কার্যকর হয়নি। বার্থ অপারেটররা বাড়তি চার্জ না পেয়ে কাজে ‘গো স্লো’ শুরু করে; যা বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমকে হুমকির মুখে ফেলে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। চিঠির প্রেক্ষিতে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় আগামী ৬ মে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক আহ্বান করেছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন। বৈঠকে বিবদমান দুই পক্ষের নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ শীর্ষ কর্মকর্তা, নৌ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। বৈঠকে অনবোর্ড হ্যান্ডলিংয়ের একটি গ্রহণযোগ্য দর নির্ধারিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

বৈঠকের দাওয়াত পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বার্থ অপারেটর্স, শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর্স অ্যান্ড টার্মিনাল ওনার্স এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ।

চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, বিষয়টি নিয়ে অনেকদিন ধরে ঝামেলা চলছে। এটির দ্রুত সুরাহা হওয়া দরকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাবেক এমপি জাফর আলম ঢাকায় গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধখাতুনগঞ্জে ভোজ্যতেলের চড়া দাম