এবার ইনানীতে ভেসে এলো ডলফিনের মরদেহ

বঙ্গোপসাগরে আছে ১৬ হাজার ডলফিন!

কক্সবাজার প্রতিনিধি | বুধবার , ২৪ আগস্ট, ২০২২ at ৬:০৫ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজার সৈকতে এবার ভেসে এলো মরা ডলফিন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে উখিয়ার ইনানীর পাটুয়ারটেক সৈকতে ভেসে আসে ডলফিনটি। খবর পেয়ে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ডলফিনটি সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে এনে ময়না তদন্ত করেন। প্রাথমিকভাবে ডলফিনটি স্পিনিং প্রজাতির এবং ট্রমা জাতীয় শারীরিক অসুস্থতায় মৃত্যু হতে পারে বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের। বাংলাদেশ সমুদ্র
গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার পারভেজ বলেন, আজ (গতকাল) সকাল ১১টার দিকে পাটুয়ারটেক সৈকত থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দক্ষিণে সাগরে মুমূর্ষু অবস্থায় একটি ডলফিন ভাসতে দেখে স্থানীয়রা। এরপর সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) বিজ্ঞানীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ডলফিনটিকে বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করে। কিন্তু বেলা আড়াইটার দিকে ডলফিনটি মারা যায়। এরপর বোরি’র গবেষক বৃন্দ জেলা প্রশাসন, বনবিভাগ ও জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের সহায়তায় মৃত ডলফিনটির ময়না তদন্ত সম্পন্ন করেন।
এরআগে গত ২০ মার্চ ইনানী সৈকতে একটি মরা ডলফিন ভেসে আসে। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের শুরুতেও টেকনাফ সৈকতে দুটি মরা ডলফিন ভেসে এসেছিল। তবে ডলফিনগুলো ময়না তদন্ত ও প্রজাতি শনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ ছাড়াই সৈকতে পুঁতে ফেলে বনবিভাগ।
সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার আরও বলেন, ময়না তদন্তে ২৭ কেজি ওজনের ও ৫ ফুট দৈর্ঘ্যের এই ডলফিনটির হৃদপিন্ডের একটা অংশে রক্ত জমাট বাঁধা এবং যকৃতের একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত পাওয়া যায়। তবে বাহ্যিক কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ডলফিনটি গুরুতর অসুস্থ থাকায় দিকভ্রান্ত হয়ে উপকূলে চলে আসে এবং এক পর্যায়ে মৃত্যুবরণ করে বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের। প্রাথমিকভাবে ডলফিনটি স্পিনিং প্রজাতির বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের। তবে এ সম্পর্কে আরো নিশ্চিত হতে এর নমুনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি (এনআইবি)-তে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক। ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটির ২০০৪ সালের জরিপে বঙ্গোপসাগরে প্রায় ১৬ হাজার ডলফিন শনাক্ত হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ৬ হাজার রয়েছে ইরাবতি ডলফিন।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ৩ আগস্ট রাতে শহরতলীর দরিয়ানগর সৈকতে ভেসে আসে কয়েক ডজন মরা জেলিফিশ। গত জুনের শুরুতে কক্সবাজার সৈকতের নাজিরারটেক মোহনায় অসংখ্য রাজকাঁকড়ার মৃতদেহ ভেসে আসে। গত মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে দরিয়ানগর-হিমছড়ি পয়েন্ট সৈকতের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নানা ধরনের বর্জ্য ভেসে আসে, যেখানে প্লাস্টিকের জুতা, স্যান্ডেল, ব্যাগ, দড়ি, জাল, ককসিট, কাঠ, বাঁশ এবং প্লাস্টিকের টুকরা ছাড়াও মরা কচ্ছপ, সাপ ও মস্তকবিহীন মৃতদেহ ছিল। গত বছর এপ্রিল মাসে পরপর দুইদিনে দুটি মরা তিমি ভেসে আসে হিমছড়ি সৈকতে। একই সৈকতে ২০২০ সালের জুলাই মাসে দুই দফায় বর্জ্য-বন্যা দেখা দিলে বর্জ্যের সাথে মরা কচ্ছপ, সাপসহ আরো বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণির মৃতদেহ ভেসে আসে। ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটির বাংলাদেশ কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বঙ্গোপসাগরের সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডে ৭ জাতের ডলফিন, পাঁচ জাতের তিমি ও একজাতের পরপইস দেখা যায়। এছাড়া কক্সবাজারসহ দেশের উপকূল থেকে ৪০ কি.মি দূরে এবং সেন্টমার্টিনের আশেপাশের সাগরেও তাদের বিচরণ দেখা যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবে টার্মিনালে বিনিয়োগ করতে চায় দুবাই পোর্ট
পরবর্তী নিবন্ধটেকনাফে এক জালে ধরা পড়ল ২০০ লাল কোরাল