এফ.আর খান আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন বাঙালি স্থপতি। বিশ্বের অন্যতম উঁচু অট্টালিকা শিকাগোর সিয়ার্স টাওয়ারের নকশা প্রণয়ন করে তিনি বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পান। এছাড়া তাঁর আরো কিছু স্থাপত্যিক নিদর্শন রয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি নানাভাবে কাজ করেছেন। আজ তাঁর ৯১তম জন্মবার্ষিকী। এফ.আর খানের পুরো নাম ফজলুর রহমান খান। জন্ম ১৯২৯ সালের ৩রা এপ্রিল ঢাকায়। পিতা খান বাহাদুর আবদুর রহমান খান ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং শিক্ষা বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
শৈশব থেকেই এফ.আর খান ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। ১৯৫০ সালে কলকাতার শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে প্রকৌশল বিদ্যায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য ১৯৫২ সালে যান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এখানে পি-এইচ.ডি এবং এম.এস করেন। বেশ কিছুকাল তিনি সেখানকার একটি আর্কিটেকচারাল ফার্মে কাজও করেছেন তাঁদের আহ্বানে। পরবর্তীকালে আমেরিকা আই.আই.টির স্থাপত্যকলার অধ্যাপক, প্রফেসর এমিরিটাস ইত্যাদি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৯৫৬ সালে স্বদেশে অবস্থানকালে তদানীন্তন পাকিস্তান সরকারে চাকরি করেছেন। সিয়ার্স টাওয়ার ছাড়াও হ্যানকর সেন্টার, জেদ্দা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের হজ টার্মিনালের প্রায় পঞ্চাশ হাজার বর্গফুট আয়তন বিশিষ্ট ছাদ আচ্ছাদন, মক্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য মডেল প্রভৃতির রূপকার এফ.আর খান। নির্মাণের পর থেকে পরবর্তী বিশ বছর সিয়ার্স টাওয়ার পৃথিবীর সর্বোচ্চ ভবন হিসেবে পরিচিত ছিল। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুেদ্েধর সময় এফ.আর.খান প্রবাসে থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তোলেন। যুদ্ধাক্রান্তদের সাহায্য এবং সমরাস্ত্র ক্রয়ের জন্য অর্থ তহবিল গঠনেও তাঁর বিশেষ ভূমিকা ছিল। স্বল্প খরচে সুউচ্চ ভবন নির্মাণের বিশেষ পদ্ধতি ‘বান্ডেল টিউব’ উদ্ভাবন করে এফ.আর.খান স্থাপনা জগতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি দেশে ও বিদেশে নানা সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৮২-র ২৬শে মার্চ বিশিষ্ট এই স্থপতি প্রয়াত হন। ১৯৯২ সালে তাঁকে স্বাধীনতা পদক (মরণোত্তর) দেয়া হয়, প্রকাশ করা হয় স্মারক ডাকটিকেট।