এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহার বন্ধ করতে সচেতনতা বাড়াতে হবে

| শুক্রবার , ২৮ নভেম্বর, ২০২৫ at ৯:৩২ পূর্বাহ্ণ

হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি প্রায় ৪১ শতাংশ রোগীর শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। অ্যান্টিবায়োটিকের অযৌক্তিক ব্যবহারের ফলে দিন দিন এই সংকট আরও তীব্রতর হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। গত সোমবার ঢাকার মহাখালীতে এক অনুষ্ঠানে অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে আইইডিসিআর। আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন ‘অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ও অতিরিক্ত ব্যবহার অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সকে (এএমআর) বিপজ্জনক পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এটি এখন দেশের জন্য বড় জনস্বাস্থ্যঝুঁকি।’ অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা সম্পর্কে জানাবোঝার জন্য আইইডিসিআর ২০২৪ সালের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত ৯৬ হাজার ৪৭৭ জন রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে। দেশের পাঁচটি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীদের শরীরে ৭১ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। সেখানে গবেষকরা দেখেছেন, আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্যে প্রায় ৪১ শতাংশের ক্ষেত্রে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না। অনুষ্ঠানে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন বলেন, আমরা মানুষের কাছে এই আহ্বান পৌঁছাতে চাই, যাতে মানুষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক সেবন না করেন। জনসচেতনতা বৃদ্ধি না পেলে ভবিষ্যতে গুরুতর সংকট তৈরি হবে।

অসুখ বিসুখ হলে বাংলাদেশের মানুষের একটি সাধারণ প্রবণতা হচ্ছে, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ফার্মেসিতে গিয়ে দোকানির পরামর্শে, এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা। চিকিৎসকরা বলছেন, অপব্যবহারের কারণে এন্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা থাকছে না এবং সাময়িকভাবে রোগ সেরে গেলেও, রোগীকে পরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুগতে হতে পারে। পরে কড়া ওষুধ ব্যবহার করেও রোগ সারছে না। পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, আন্তর্জাতিক একটি গবেষণা সংস্থা আইসিডিআরবির এক গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশে এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। গবেষকরা বলছেন, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। গ্রাম ডাক্তাররা এবং ফার্মেসিতে বিক্রেতারা অবাধে এন্টিবায়োটিক দিচ্ছেন। এর শতকরা ৭৫ ভাগই সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে না। এই ওষুধ ব্যবহারের ব্যাপারে লোকজনকে সচতেন করার জন্যে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই আজ থেকে একটি প্রচারণা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের সাধারণ লোকজন আর ওষুধ বিক্রেতারা এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের বিষয়ে সচেতনতারও অভাব রয়েছে। এক ওষুধ বিক্রেতা বলছিলেন, সারাদিন তিনি চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন দিয়ে যত ঔষধ বিক্রি করেন, তার শতকরা ৭০ভাগ প্রেসক্রিপশনেই এন্টিবায়োটিক ওষুধ দেয়া হয়। শুধু ঢাকায় নয় সারা বাংলাদেশেই এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহার উদ্বেগজনকহারে বাড়ছে।

ঢাকার বাইরের চিত্রটা আরও ভয়াবহ বলে গবেষকরা বলছেন। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা আইসিডিডিআরবি’র একজন গবেষক বলছিলেন, তাদের এখনকার এক গবেষণায় তারা উদ্বেগজনক পরিস্থিতিই দেখতে পেয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, নিবন্ধিত চিকিৎসক, যারা এ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারেন। তারা ছাড়াও অনেকে প্রেসক্রিপশনে এন্টিবায়োটিক লেখেন।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এর জন্য ওষুধ বিক্রেতারা যেমন দায়ী চিকিৎসকরাও এই দায় এড়াতে পারে না। তাঁরা বলেছেন, এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের কারণে এর কার্যতারিতা থাকছে না এবং আরও কড়া ঔষধ ব্যবহার করেও রোগ সারছে না। বিশ্লেষকরা বলেছেন, এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহার বন্ধ করা এবং মানুষের সচেতনতা বাড়াতে সরকারিবেসরকারি উদ্যোগে বড় ধরনের কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। এখনই বিষয়টিতে সংশ্লিষ্টদের নজর দেয়ার তাগিদও দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।

এদিকে, অ্যান্টিবায়োটিকের অযৌক্তিক ব্যবহার ও অনিয়ন্ত্রিত বিক্রয় বন্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ)। এ বিষয়ে সমপ্রতি একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ফার্মেসি মালিক, ফার্মাসিস্ট ও সাধারণ জনগণের জন্য বিস্তারিত নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। নতুন নির্দেশনায় চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বা বিতরণ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের ঝুঁকি কমাতে এবং ব্যবস্থাপত্রভিত্তিক ওষুধের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে এই নিয়ম কার্যকর করা হয়েছে। অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের ভয়াবহ ঝুঁকি এড়াতে জনসাধারণকেও কিছু নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক নয়। রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক কেনা, সেবন বা ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। ওষুধ কেনার সময় অবশ্যই মেয়াদ দেখে নিতে হবে এবং বিক্রেতার স্বাক্ষর ও তারিখসহ ক্যাশমেমো নিতে হবে। এছাড়া, অল্প সুস্থ বোধ করলেও চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিকের সম্পূর্ণ কোর্স শেষ করতে হবে। কোর্স অসম্পূর্ণ রাখলে জীবাণু শক্তিশালী হয়ে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধঅধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক : শিক্ষবিদ ও জ্ঞানতাপস