আজগর আলী বাবুলকে পরিকল্পিত ভাবেই খুন করা হয়েছে বলে দাবি তার পরিবারের সদস্যদের। তার বড়ো ছেলে সিজান মোহাম্মদ সেতু বলেন, আব্বুকে দুই/তিন দিন আগে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। কারা দিয়েছে, সে বিষয়ে কিছু জানান নি। তিনি পরিবারের সদস্যদের সাথে রাজনৈতিক ব্যাপারে আলোচনা করতেন না। তবে এরপর গত পরশু (রোববার) তিনি তাঁর ফেসবুক আইডিতে একটা পোস্ট দেন। সেখানে লিখেন, ‘নেত্রীর জন্য, দলের জন্য প্রয়োজনে রক্ত দিতে, জীবন দিতেও প্রস্তুত আমি’। কিন্তু তার কথা এত দ্রুত ফলে যাবে এটা আমরা ভাবি নি কখনো। গতকাল ১২ জানুয়ারি রাত সাড়ে দশটার দিকে আজগর আলী বাবুলের মোগলটুলি কাটা বটগাছ এলাকাস্থ বাসভবনে আজাদীকে তার ছেলে এ কথা বলেন। তাদের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কান্নার রোল। কাঁদছে বাবুলের বৃদ্ধা মা জ্যোস্না বেগম। তার স্ত্রীর জ্ঞান ফিরে নি। তিনি জানেন না যে বাবুল মারা গেছে। তাকে বলা হয়েছে গুলি লেগেছে, আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। একই কথা বলা হয়েছে বাবুলের মেয়ে মিথিলাকেও। কিন্তু আত্মীয়-স্বজন, এলাকাবাসী ভিড় করছে দেখে মেয়ে বারে বারে প্রশ্ন করছে একে ওকে।
বাবুলের ছেলে সেতু বলেন, এলাকায় আমাদের পরিবারের ঐতিহ্য আছে। আমার দাদা নজীর আহমেদ সওদাগর এলাকায় ২২ মহল্লা কমিটির সর্দার ছিলেন। আমার বাবা বর্তমানে মহল্লা কমিটির সর্দার। তিনি যুবলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। তার কথা ছিল ‘আমার নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন, তার পক্ষেই আমি কাজ করবো। আমি কোনো ব্যক্তির পক্ষে নই। ২৮ নং ওয়ার্ডে নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী প্রচার কমিটির সদস্য সচিব আমি। তাছাড়া কাদেরের মতো একটা সন্ত্রাসীকে আমি সমর্থন করতে পারি না। তার মার্ডার কেইসের সাক্ষী আমি।’ সেতু আরো বলেন, আজ (মঙ্গলবার) এখানের একটি কারখানা থেকে পুলিশ বেশ কিছু ব্যাডমিন্টন র্যাকেট (আবদুল কাদেরের নির্বাচনী প্রতীক) উদ্ধার করেছে যেগুলো লোহার তৈরি। পেছনের দিকটা সূঁচালো। বোঝাই যাচ্ছে, সেগুলো অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যেই তৈরি করা হচ্ছিল। আব্বু নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সেগুলো তুলে দেন পুলিশের গাড়িতে। এসব কারণে কাদের ও তার লোকজন আব্বুর ওপর ক্ষিপ্ত ছিল।
সেতু আরো বলেন, প্রতিদিন গণসংযোগে ৫০/৬০ জন মানুষ হয় বাহাদুরের পক্ষে। সিদ্ধান্ত হয়েছিল আজ (মঙ্গলবার) মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুরের পক্ষে গণসংযোগ করবেন মুরুব্বিরাই। সে অনুযায়ী তারা প্রচার করছিলেন। হঠাৎ ৪/৫ টা ফায়ারের শব্দ শুনি। আমি তখন ঘটনাস্থল সানমুন স্কুলের সামনে ছুটে যাই। দেখি লোকজন ছুটোছুটি করছে। আব্বুকে খুঁজতে থাকি। দেখতে পেয়ে আব্বুর হাত ধরে টেনে নিয়ে আসার চেষ্টা করি। এসময় দুটি ফায়ার হয়। আব্বু বলেন, পিঠে কীসের যেন গুঁতো লেগেছে। আব্বু বা আমি তখনো জানি না যে তার পিঠে গুলি লেগেছে। আব্বু যখন পড়ে যাচ্ছিলেন তখন তাকে ধরে ফেলি। দ্রুত আমার এক বন্ধুসহ মেডিকেল নিয়ে যাচ্ছিলাম। অনবরত রক্ত পড়ছে দেখে নিজের শার্ট খুলে ক্ষতস্থানে চেপে ধরি। শার্ট ভিজে রক্ত গড়িয়ে পড়তে থাকে। স্টেডিয়ামের সামনে আব্বু শেষবার কথা বলেন আমার সাথে। তিনি বলেন, আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সময় জ্যামে আটকা পড়ি। তখন তাকে মেহেদিবাগে ন্যাশনাল হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসকরা বলেন, আমার আব্বু আর নেই।
এ ঘটনায় কাউকে সন্দেহ করেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সন্দেহ করার কিছু নেই। কারা ঘটিয়েছে, তা সবাই দেখেছে। আমি মাছ কাদের, পিচ্চি আলো, বিহারী রাজু, সিলেটী রিপন, হেলাল, আসাদ রায়হান, রাকিব রাহি ও মিন্টুকে দেখেছি। ঘটনা যে পূর্ব পরিকল্পিত তার প্রমাণ হলো তারা গুলিবর্ষণের ফুটেজ লোপাটের জন্য ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে দিয়ে চলে যায়। আমি আব্বু হত্যার বিচার চাই।
এসময় এগিয়ে আসেন বাবুলের মা জ্যোস্না বেগম। তিনি বলেন, সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় না দেয়াই কি আমার ছেলের অপরাধ ছিল? আমার দুই ছেলে আগে মারা গেছে। বাবুলকে আঁকড়ে আমি বেঁচেছিলাম। তাকেও কেড়ে নিল সন্ত্রাসীরা। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই। যারা এই এলাকায় সন্ত্রাসের জন্ম দিয়েছে তাদের বিচার চাই।