এডভোকেট মোজাফফর আহমেদ খান স্মরণে

ছাবের আহমদ চৌধুরী | সোমবার , ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৬:২২ পূর্বাহ্ণ

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর রহস্যে ঘেরা চট্টগ্রামের দেয়াঙ পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এমন একটি গ্রাম বড়উঠান। অবিভক্ত পটিয়া থানার বর্তমানে কর্ণফুলী উপজেলায় অবস্থিত। এই অঞ্চলেই আরাকানিদের চাটিগা দুর্গ ও দেয়াঙ কারাগার অবস্থিত ছিল। যে কারাগারে ১৫শ খ্রিষ্টাব্দে মহাকবি আলাওল আরাকানিদের হাতে ধরা পড়ে বন্দী ছিলেন। তৎকালে আরাকান রাজাদের রাজধানী ছিল দেয়াঙ। ঐ অঞ্চলে ১৯৪০সালে বড়উঠানের দেয়াঙ এলাকায় মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রস্তাবিত ছিল। বড়উঠান গ্রামে আস্তানা করেছিলেন হযরত আবদুল কাদের জিলানী (বড়পীর ছাহেব হুজুর)। চট্টগ্রামের আইন অঙ্গনে যিনি একাধারে দেওয়ানী আদালত, ফৌজদারী আদালত ও রেভিনিউ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ আবুল হাসনাত মোহাম্মদ মোজাফফর আহমেদ খান যিনি এ. এইচ. এম মোজাফফর আহমদ খান নামে সকলের নিকট পরিচিত ছিলেন। তিনি বিগত ১১.০১.১৯৩০ তারিখে সাবেক পটিয়া থানার বর্তমানে কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান গ্রামের প্রখ্যাত মৌলভী বাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আবদুল হালিম খান সাবেক অবিভক্ত ভারত বর্ষের ডেপুটি ইন্সপেক্টর অব পুলিশ ছিলেন। তিনি বাবার চাকুরীর সুবাদে, বর্ধমান, বাকুরা, ত্রিপুরা, কলকাতা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করেন। তিনি ১৯৪৫সালে কলিকাতা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। পরে ১৯৪৭ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে আইএ পাস করেন এবং ১৯৪৯সালে একই কলেজ থেকে বি.এ ডিগ্রী অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিগত ১৯৫২ সনে এল.এল.বি ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি তৎকালীন পাকিস্তান জুডিসিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও মাতার অনুরোধে যোগদান না করে, গত ১৯৫৪ সনে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতিতে যোগদান করেন। পরবর্তীতে সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে তালিকাভুক্ত হন। তিনি ১৯৬২ সনে সহযোগী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এবং ১৯৭২ সনে স্পেশাল পিপি, জেলা পিপি এবং পরবর্তীতে ১৯৮০ সনে সরকারি কৌঁসুলী (জিপি) হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি ১৯৭৫ সনে ও ১৯৭৯ সনে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৮৫ সালে সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি চট্টগ্রাম হাইকোর্ট বেঞ্চ বাস্তবায়ন আন্দোলন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম জেলা মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সহসভাপতি, মার্চেন্ট কোঅপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড এর সেক্রেটারী ও চেয়ারম্যান, রেডক্রস (বর্তমানে রেড ক্রিসেন্ট), দক্ষিণ এর সহসভাপতি, মুসলিম এডুকেশন সোসাইটির আজীবন সদস্য, চট্টগ্রাম কলেজ প্রাক্তন ছাত্র সমিতি ও মুসলিম হাই স্কুল প্রাক্তন ছাত্র সমিতির আজীবন সদস্য ছিলেন। তিনি বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের ছাত্র ফ্রন্টের সক্রিয় সদস্য এবং ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটিকটক
পরবর্তী নিবন্ধশীতের দিনে