খাগড়াছড়ির রামগড়ে ফেনী নদীর উপর ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতুর কাজ প্রায় শেষের দিকে। সেতুকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে রামগড় স্থলবন্দর নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই লক্ষ্যে প্রায় ১০ একর ভূমি অধিগ্রহণে কাজ করছে জেলাপ্রশাসন। সেতুকে ঘিরে স্থলবন্দর তৈরি হলে জেলার আর্থ সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনসহ ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে ধারণা এলাকাবাসীর। ভারত সরকারের অর্থায়নে নির্মিত সেতুটি চালু হলে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে বাংলাদেশের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ চালু হবে। সেতুর নির্মাণ কাজ ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর এই সেতুর উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
জানা যায়, ২০১৫ সালের ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। খাগড়াছড়ির রামগড়ে মহামুনি এলাকায় প্রায় ২শ’ ৮৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ করে ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৪১২ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৮২.৫৭ কোটি রুপি। এটি রামগড় উপজেলার সাথে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুম মহকুমার সংযোগ স্থাপন করবে। এতে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যসহ মেঘালয়, আসাম, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং অরুনাচলের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ হবে। সেতুর কাজ শেষ হলে চালু হবে স্থলবন্দর। এতে স্থানীয়দের কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ আর্থ সামাজিক পরিবর্তন হবে। স্থলবন্দর নির্মাণ হওয়ায় খুশি স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, ‘মুক্তিযুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামের রামগড় উপজেলার রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস। স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই এ উপজেলায় তেমন কোন দৃশ্যমান উন্নতি হয়নি। গড়ে ওঠেনি অর্থনৈতিক অবকাঠামো। তবে স্থলবন্দর নির্মাণ কাজ শেষ হলে বদলে যাবে এখানকার অর্থনীতির চিত্র। স্থানীয়দের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি অর্থনীতির বিকাশ হবে। গতিশীল স্থলবন্দর হিসেবে গড়ে উঠলে এটি রামগড়সহ পুরো জেলার অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে।’ রামগড় পৌরসভার মেয়র কাজী মো.শাহজাহান রিপন বলেন, ‘সেতুর নির্মাণ কাজ ডিসেম্বর নাগাদ শেষ হওয়ায় কথা রয়েছে। স্থলবন্দরও নির্মাণ হবে। এতে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়বে এবং স্থানীয় অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে।’
সেতুর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে ন্যাশনাল হাইওয়ে এন্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলভমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড এবং ভারতের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দানেশ চন্দ্র আগরওয়াল ইনফ্রাকন প্রাইভেট লিমিটেড।
খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী সেতুর কাজ শেষ হলে রামগড় স্থলবন্দর ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুম স্থলবন্দরের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ তৈরি হবে। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে সেতুটির কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে বেশ কয়েকমাস নির্মাণ কাজ বন্ধ ছিল। বর্তমানে সেতুটির কাজ আবার শুরু হওয়ায় ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে।’
এদিকে এ মৈত্রী সেতুকে কেন্দ্র করে রামগড়-হেঁয়াকো-বারৈয়ারহাট প্রধান সড়ক প্রশস্তকরণের অনুমোদন দিয়েছেন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেক। সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলে রামগড় স্থল বন্দর নির্মাণ কাজ শুরু হবে। ইতিমধ্যে প্রায় ১০ একর ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে। সেতুকে কেন্দ্র করে ৩টি প্রকল্প চলমান রয়েছে বলে জানান খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাঈদ মোমেন মজুমদার। তিনি বলেন, ‘সেতুকে কেন্দ্র করে রামগড়-হেঁয়াকো-বারৈয়ারহাট প্রধান সড়ক প্রশস্তকরণ সংক্রান্ত প্রকল্প, লোড কন্ট্রোল স্টেশন সংক্রান্ত প্রকল্প এবং স্থলবন্দর নির্মাণ সংক্রান্ত প্রকল্পের মধ্যে দুইটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে। স্থলবন্দর নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ পর্যায়ে। স্থলবন্দর নির্মিত হলে গতিশীল হবে পাহাড়ের অর্থনীতি। ’
সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলে ডিসেম্বরে ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সেতুটির উদ্বোধন করার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস। তিনি জানান, ‘ভারতীয় কমিশনার আমাদেরকে জানিয়েছেন আগামী ডিসেম্বর মাসে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে। সেতুর কাজ শেষ হলে যৌথভাবে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী এর উদ্বোধন করবেন। এছাড়া সেতুর পাশেই ১০ একর জায়গাজুড়ে স্থলবন্দর গড়ে তোলা হবে। এতে স্থানীয় অর্থনীতির বিকাশ হবে। বেনোপোল, সোনা মসজিদ, হিলি স্থলবন্দরের ন্যায় এটি বৃহৎ আকারের স্থলবন্দর হবে। এতে আমদানি রপ্তানি বেগবান হবে। দুই দেশের বাণিজ্যও সম্প্রসারণ হবে।’