দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের সিংহভাগ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েই পরিচালিত হয়। এছাড়া এই চট্টগ্রামে রয়েছে ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার চাক্তাই খাতুনগঞ্জ, আনোয়ারায় কোরিয়ান ইপিজেড, চট্টগ্রামে সিইপিজেড এবং কর্ণফুলী ইপিজেড। অন্যদিকে মীরসরাইয়ে ইকোনোমিক জোনেও চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। এত কিছুর পরেও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের এখনো সব ধরণের বাণিজ্যিক আমদানি-রপ্তানির অনুমতি নিতে ঢাকায় ছোটাছুটি করতে হচ্ছে। গত বছরের ডিসেম্বরে দৈনিক আজাদীর প্রথম পাতায় আমদানি রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের চট্টগ্রাম দপ্তরে ‘সেবা সংকুচিত, আছে মাত্র দুটি’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর চট্টগ্রাম চেম্বারের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে সেবার পরিমাণ বাড়ানোর অনুরোধ জানানো হয়। সেবার পরিমাণ বাড়ানোর বিষয়ে একাধিকবার আশ্বস্ত করা হলেও এ বছরের মার্চে শুধুমাত্র দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরকারি ২৯টি মেগাপ্রকল্পের কাঁচামাল আমদানির অনুমতি দেয়ার ক্ষমতা চট্টগ্রাম দপ্তরকে দেয়া হয়। তবে বাণিজ্যিক আমদানির অনুমতি (আইপি) সেই আগের মতো ঢাকা অফিসের হাতেই। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সব ধরণের বাণিজ্যিক আমদানি অনুমতি (আইপি) ঢাকা থেকে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ফলে বর্তমানে আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের চট্টগ্রাম দপ্তর আমদানি নিবন্ধন সনদ (আইআরসি), রপ্তানি নিবন্ধন সনদ (ইআরসি) এবং এই দুটি নিবন্ধন সনদ নবায়ন ছাড়া আর কিছু করার ক্ষমতা রাখে না । এক সময় আমদানি রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের ৫৫টি সেবার মধ্যে অধিকাংশই চট্টগ্রাম দপ্তর থেকে নিতে পারতেন ব্যবসায়ীরা। আমদানি রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সব ধরনের আমদানি ও রপ্তানির অনুমতি ঢাকায় থেকে নিতে হয়। এছাড়া বহুজাতিক কোম্পানি, যৌথ বিনিয়োগ এবং শতভাগ বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও শিল্প আইআরসি ও শিল্প ইআরসি নিতে ঢাকার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। ঢাকা থেকে অনুমোদনের পরে চট্টগ্রাম থেকে শুধুমাত্র এসব সনদ ইস্যু করা হয়। অথচ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) চট্টগ্রাম কার্যালয় এবং বস্ত্র অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয় শিল্প আইআরসি অনুমোদনের জন্য আমদানি রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের দপ্তর ঢাকাকে সুপারিশ করে। অনুমোদন যদি চট্টগ্রাম অফিস থেকে নেয়ার সুযোগ থাকতো তাহলে ব্যবসায়ীদের আর ঢাকায় অযথা সময় নষ্ট করতে হতো না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা ঋণপত্র না খুলে বিদেশ থেকে উপহার সামগ্রী কিংবা পণ্যের সেম্পল আনলে, সেক্ষেত্রে আমদানি রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে অনুমতি নিতে হয়। গত ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আগে সেই অনুমতি চট্টগ্রামে মিললেও এখন তা নিতে হচ্ছে ঢাকা থেকে। এছাড়া শতভাগ বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কারখানার যন্ত্রপাতি আনতে ঋণপত্র (এলসি) লাগে না। সেক্ষেত্রে আমদানি অনুমতি (আইপি) নিলেই হয়ে যায়। বর্তমানে সেই অনুমতি নিতেও ঢাকায় দৌঁড়াতে হচ্ছে। আবার প্রবাসী পেশাজীবীরা আমদানি রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের অনুমতি নিয়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং যন্ত্রপাতি আমদানি করতে পারেন। তবে বর্তমানে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক অফিস থেকে সেই ক্ষমতা ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কারণে এসব পণ্য আনার ক্ষেত্রেও জটিলতা পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া আমদানি অনুমতি এবং বিশেষ ক্ষেত্রে ক্লিয়ারেন্স পারমিট নিয়ে এলসি ছাড়া পণ্য আমদানি করার অনুমতি নিতে এখন ঢাকা থেকে নিতে হচ্ছে। অন্ট্রাপো বা সামায়িক আমদানি বাণিজ্যের নিমিত্তে পণ্য আমদানির অনুমতিও ঢাকা থেকে নিতে হয়। পুন:রপ্তানির লক্ষে আমদানির অনুমতিও এক সময় চট্টগ্রাম থেকে হতো। তবে তা এখন নিতে হচ্ছে ঢাকা থেকে। তৈরি পোশাক রপ্তানির পর ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় তা ফেরত আসলে বন্দর থেকে খালাস ও পুন:রপ্তানির অনুমতি কিংবা ত্রুটিযুক্ত কাপড় ফেরত প্রদানের অনুমতিও নিতে হয় ঢাকা থেকে। শুল্ক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আটক পণ্য চালান খালাসের আবেদনও করতে হয় ঢাকা অফিসে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমদানি রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের দপ্তর চট্টগ্রামের কাজের পরিধি বাড়ানোর জন্য আমরা বেশ কয়েকবার বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখেছি। চট্টগ্রামের কয়েকটি অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের সেই আগের মতোই ঢাকায় দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে। আমদানি রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের চট্টগ্রাম দপ্তরকে জনবল নিয়োগের মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে সেবার পরিমাণ বাড়ানোর দাবি জানচ্ছি। যেখানে সবগুলো বিভাগে কাজ বিকেন্দ্রীকরণ করার কথা, সেই জায়গায় চট্টগ্রাম কার্যালয়ের কাজের পরিধি কমিয়ে আনার বিষয়টা মেনে নেয়া যায় না। ঢাকার ওপর নির্ভরশীলতা কমানো উচিত বলে আমি মনে করি। ব্যবসায়ীরা ঢাকা চট্টগ্রাম দৌঁড়াদৌঁড়ি করার ফলে তাদের সময় ও অর্থ দুটোই নষ্ট হচ্ছে
আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তর চট্টগ্রামের নিয়ন্ত্রক আবদুর রহিম বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রাম দপ্তরে আমদানি নিবন্ধন সনদ (আইআরসি), রপ্তানি নিবন্ধন সনদ (ইআরসি) এবং সরকারি ২৯ মেগাপ্রকল্পের কাঁচামাল আমদানির অনুমতি দেয়া হচ্ছে।
আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান নিয়ন্ত্রক (চলতি দায়িত্ব) নন্দন কুমার বণিক দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমার জানা মতে- চট্টগ্রামে কিছু সেবার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। তবে কি কি সেবার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি।