এখন নির্বাচন নাই সুতরাং তাদের অনেক গুরুত্ব : ফখরুল

| বৃহস্পতিবার , ১৯ জুন, ২০২৫ at ১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ

ভোট হলে যাদের আর গুরুত্ব থাকবে না, তারাই এখন ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের ঘোষণায় নাখোশ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এক সময়ের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর দিকে ইঙ্গিত করে গতকাল বুধবার দলের এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, এখন নির্বাচন নাই সুতরাং তাদের অনেক গুরুত্ব আছে। যেই নির্বাচন হয়ে যাবে, জনগণের যারা ভালোবাসার দল, তারাই তো ক্ষমতায় আসবে, তাই না? তখন তাদের গুরুত্ব কতটুকু থাকবে কি থাকবে না, তখন নির্ধারিত হবে। যে কারণে ওরা নারাজ হইছে এবং নারাজ হয়ে গতকালকে (মঙ্গলবার) একটা বৈঠকে ওরা হাজির হয় নাই। খবর বিডিনিউজের।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বলেছিলাম ডিসেম্বরে নির্বাচনে যেতে হবে। আর ইউনূস (মুহাম্মদ ইউনুস) সাহেব বলেছিলেন এপ্রিলে ইলেকশন দেবেন, তাই না? তিনি (তারেক রহমান) আলোচনার মধ্য গিয়ে ওই ডিসেম্বরে থাকেননি। তিনি কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে চলে গেছেন এবং ইউনূস সাহেবও পিছিয়ে ফেব্রুয়ারিতে এসেছেন। এটাকেই বলে রাষ্ট্রনায়কোচিত নেতা। রাষ্ট্রনায়ক জনগণের শান্তির কথা চিন্তা করে, কোনো বিভেদবিভাজনে না গিয়ে, কোনো সংঘর্ষে না গিয়ে এই দুই নেতা (মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমান) আমাদেরকে একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের সুযোগ করে দিয়েছেন। এটা অনেকের পছন্দ হয় নাই, অনেকের পছন্দ হয় নাই। কারণ নির্বাচনে হলেই তাদের বিপদ।

এসময় কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা কি এটা (ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন) পছন্দ করছি? না অপছন্দ করছি? জোরে বলেন। নেতাকর্মীরা এ সময় সমস্বরে জবাব দেন, পছন্দ করছি। বিএনপি মহাসচিব এ সময় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানাতে বলেন নেতাকর্মীদের। সভাস্থল তখন করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তার কাছে আমরা একটা জিনিসই শিখেছি, সেটা হচ্ছে ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ওই একই শিক্ষা দিয়েছেন। এখন আমাদের তরুণ নেতা যিনি আমাদেরকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, সফল হয়েছেন এই ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সরাতে, তিনি এখন আমাদেরকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন, যে স্বপ্ন একটা নতুন স্ট্রাকচারে একটা নতুন বাংলাদেশ আমরা তৈরি করব।

ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ হচ্ছে সেই দল, যারা নিজেকে ছাড়া আর কিছু বোঝে নাই। ওরা দেশকে ধ্বংস করেছে। আমি শুধু আওয়ামী লীগের কথাগুলো আপনাদেরকে মনে করিয়ে দিতে চাই কেন জানেন? ওই নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করতে করতে ওদের শয়তানিগুলো বুঝে ফেলেছি আমরা। ওরা যে হাজার হাজার ছেলেমেয়েকে হত্যা করেছে, প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেছে, গুম করেছে, লুট করেছে, বাড়ি দখল করেছে, দোকান দখল করেছে, ওই কথাগুলো আমরা ভুলে যাচ্ছি। ওটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য আমি বার বার এই কথাগুলো বলি।

তিনি বলেন, আমরা রাজনৈতিক দল, আমাদের কাজ কি? জনগণের কাজ করা। আমাদের কাজ হচ্ছে জনগণ যেন শান্তিতে থাকে, জনগণ যে শিক্ষা ব্যবস্থা পায়, তাদের ছেলেমেয়েরা যেন লেখাপড়া করতে পারে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যেন তারা চিকিৎসা পায়, পাস করে বের হলে যেন চাকরি পায়। একটা উন্নত জীবনযাপন করতে পারে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। জনগণের কাজ করার জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা কর্মসূচিও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের সামনে এখন বিরাট কাজ। আমরা মনে করছি যে আওয়ামী লীগ নাই, সুতরাং মাঠ ফাঁকা। মাঠ ফাঁকা না। মাঠের মধ্যে সব মানুষ দাঁড়ায়ে আছে। ওই মানুষরা বিবেচনা করে দেখবে আমাদের কোন দলটা কোন মানুষগুলো ভালো। ৯১ সালে নির্বাচন করছিলাম মনে আছে? ৯১ সালে বিএনপি খুব ছোট দল ছিল, বিএনপি তখন ইলেকশনে জিতবে কি জিতবে না ওইটা নিয়েও কথাবার্তা ছিল।

সেই সময়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ফখরুল বলেন, ওই সময়ে কলকাতা এয়ারপোর্টে হাসিনাকে সাংবাদিকরা জিজ্ঞাসা করল, বলেন তো দেখি এই নির্বাচনে বিএনপি কয়টা সিট পাবে? হাসিনা বলল, ‘কয়টা আর বিএনপি পাবে, বেশি হলে ১০টা।’ কিন্তু ওই নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে সরকার গঠন করেছিল।কারণ বিএনপি জনগণের কাছ থেকে সেই ভালোবাসা পেয়েছিল।ওই ভালোবাসা আপনাদেরকে অর্জন করতে হবে।

বিএনপির নেতাকর্মীদের সর্তক করে মির্জা ফখরুল বলেন, দলের সদস্য নবায়নের যে কাজ চলছে, সেখানে আওয়ামী লীগের কেউ যেন না থাকে। কারণ এটা পরীক্ষিত, আওয়ামী লীগের কেউই ভালো না। আওয়ামী লীগ নিজের স্বার্থ ছাড়া আর কারও স্বার্থ দেখতে পারে না। তাই তাদের কাউকে দলে নেওয়া যাবে না। তবে নিরপেক্ষ কেউ থাকলে তাকে অবশ্যই দলে আসার জন্য আহ্বান জানানো হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএইচএসসি পরীক্ষার্থীদের মানতে হবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা
পরবর্তী নিবন্ধবৃষ্টিতে নগরীর নিম্নাঞ্চলে জলজট, দুর্ভোগ