আগের সময়ে মানুষের পড়াশোনা ও জানাশোনার পরিধিটা ছিল সীমিত। এখতেলাফ বা মতভিন্নতাও ছিল কম। এখনকার ডিজিটাল যুগে বিভিন্ন বিষয়ে মানুষের জানাটা আগের তুলনায় অনেক বেশি ও সহজ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই মতভিন্নতার পরিধিটাও বেড়ে গেছে অনেকাংশে। ইসলাম ধর্মের প্রাথমিক যুগ থেকেই ধর্মের বিভিন্ন বিষয়াদিতে এখতেলাফ ছিল। আমাদের কোরআন এক, হাদিস এক। তারপরও কেন এখতেলাফ? রাসুল (স.) বলেছেন, সৎ উদ্দেশ্যে গবেষণা করে দুই ব্যক্তি যদি দুটি ভিন্ন সিদ্ধান্তে উপনীত হন, তাহলে যার সিদ্ধান্ত সঠিক হবে তিনি যে সওয়াব পাবেন, তার অর্ধেক পরিমাণ সওয়াব পাবেন যার সিদ্ধান্তটি সঠিক হয়নি, তিনি। শরয়ি এখতেলাফ আছে বলেই চার মযহাব, আহলে হাদিস, সালাফি সহ বিভিন্ন ঘরানার সৃষ্টি। রাসুল (স.) এর ইন্তেকালের পর বিভিন্ন বিষয়ে সাহাবাগণ ও পরস্পরের মধ্যে মতপার্থক্য করেছেন। যৌক্তিক ভাবে চিন্তা করলে মনে হয় এটাই স্বাভাবিক। কোনো একটা বিষয়ে সবাই একমত হবে, এটা ভাবা বোধহয় ঠিক নয়। তবে হ্যাঁ, ইসলামের মৌলিক বিষয়াদি অবশ্যই আমাদেরকে কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে মানতে হবে। কিন্তু যে সব বিষয় ফরজ সাব্যস্ত হয়নি, অর্থাৎ সুন্নাত, নফল, মোস্তাহাব বা মোবাহ পর্যায়ের সেগুলো নিয়ে পরস্পর বিতর্ক করা ও অন্যকে বিষেদাগার করা অনুচিত বলেই মনে হয়। রাসুল (সঃ) এর সহীহ হাদিস দ্বারা যদি একটি বিষয়ে একাধিক পদ্ধতি সাব্যস্ত হয়, তাহলে সবগুলোকেই আমাদের মেনে নেওয়া উচিত। আমার নিকট যে পদ্ধতিটা উত্তম মনে হচ্ছে, আমি সেটাকে ফলো করতে পারি। আপনার কাছে যেটা ভালো মনে হচ্ছে, আপনি সেটা ফলো করেন। এভাবে যদি আমরা ভাবতে পারি, তাহলে শরয়ি এখতেলাফ সত্ত্বেও আমরা সুন্দরভাবে বসবাস করতে পারি।
কিন্তু আমাদের সমাজে ব্যাপারটা এমন যে, অল্পতেই আমরা একজন আরেকজনকে তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয়ে কাফের ও মুনাফিক বলতে দ্বিধা করি না। আজকের জামানায় আলেমরা এব্যাপারে আরো এক কাঠি সরেস। অবস্থা এমন পর্যায়ে যে, ছোটখাটো এখতেলাফ নিয়ে একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানকে অন্য ধর্মাবলম্বীদের চেয়েও বেশি ঘৃণা করে, যা খুবই দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত। মোদ্দা কথা, শরয়ি মসলামসায়েল নিয়ে এখতেলাফ আগের যুগেও ছিল, এখনও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু মুসলমানদের মধ্যে এ নিয়ে বিবাদবিসংবাদ ও পরস্পরের মধ্যে ঘৃণা বা বিদ্বেষ পোষণ করা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। বিভেদের চেয়ে ঐক্য বজায় রাখাটাই আমাদের সকলের দায়িত্ব। মুসলমানদের মধ্য বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে এখতেলাফি মসআালা নিয়ে বিবাদবিসংবাদ বর্জন করার গুরুত্ব আমাদের সকলকেই অনুধাবন করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক পথে চলার তৌফিক দিন।