চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের গত ৩১ আগস্ট কার্যকরী কমিটির সভায় সিআরবিতে হাসপাতালের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত নগর আওয়ামীলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ক্ষোভ ঝেড়েছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। দলীয় সভায় এভাবে প্রকাশ্যে একটি সামাজিক আন্দোলনের বিষয় নিয়ে মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন নগর আওয়ামীলীগের দুই সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল ও খোরশেদ আলম সুজন।
দলীয় সভায় ওইদিন মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর বক্তব্য মিডিয়ায় ফলাও করে প্রকাশ হওয়ার পর এই নিয়ে দলের ভেতরে ও বাইরে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সিআরবির মতো প্রাকৃতিক পরিবেশ বাঁচানোর আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর দলীয় সভায় সিআরবি বিরোধী বক্তব্যের সমালোচনা করেন। অনেকেই ক্ষোভে ফুঁসে উঠেন। বলা হচ্ছিল, এই নিয়ে সিআরবি বাঁচানোর আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল ও খোরশেদ আলম সুজনের সাথে মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর মানসিক দূরত্ব সৃষ্টি হয়। শেষ পর্যন্ত নিজেই সংগঠনের সহযোদ্ধাদের সাথে সেই দূরত্ব ঘুচানোর উদ্যোগ নিলেন মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। গতকাল শনিবার বেলা ১২টায় তিনি তার পল্টন রোডস্থ বাসভবনে দুই সহযোদ্ধাকে ডেকে নেন। সে সময় সেখানে উপস্থিত দলীয় নেতারা জানান, সেদিনের বক্তব্যের জন্য মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী অনুশোচনা প্রকাশ করেন এবং একসাথে অতীতের মতো দলের জন্য কাজ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। বেলা ১২টা থেকে দুপুর পর্যন্ত আলোচনা শেষে দুপুরে মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর বাসায় এক সাথে খাবারও খান মহানগর আওয়ামীলীগের নেতারা।
এসময় পল্টন রোডের বাসায় উপস্থিত ছিলেন নগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক, পরিবেশ ও বন বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী।
মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর বাসায় বৈঠকের ব্যাপারে নগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান গতকাল রাতে আজাদীকে জানান, সিআরবি আন্দোলন নিয়ে মাহতাব ভাইয়ের সাথে বাবুল ভাই (ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল) এবং সুজন ভাইয়ের (খোরশেদ আলম সুজন) যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসনের জন্য নাছির ভাই আমাকে এবং মশিউর রহমানকে দায়িত্ব দেন। সামনে আমাদের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হচ্ছে। এরপর ইউনিট ও ওয়ার্ড সম্মেলন শুরু হবে। এটা নিয়ে যাতে দলের কর্মসূচিতে কোনো প্রভাব না পড়ে তাই আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। মাহতাব ভাই বৈঠকে বাবুল ভাই ও সুজন ভাইকে বলেছেন ‘সিআরবি আন্দোলন নিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে কারো প্রতি আক্রোশ নিয়ে কথা বলিনি। আমাকে ভুল-বুঝে থাকলে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।’ এসময় ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল বলেন, আমি সরকারি দলের পক্ষ হয়ে আন্দোলন করছি না। আমি সামাজিক আন্দোলন করছি। চট্টগ্রামবাসীর স্বার্থে আন্দোলন করছি। এটা থেকে আমার সরে আসা সম্ভব নয়।
এসময় খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘আপনি আমাদের নেতা, আপনি অনেক কথা বলতে পারেন। এটা নিয়ে আমরা কিছু মনে করিনি। আমরা তো দলের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি না।’ এরপর তিন নেতা একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন। দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর বেলা আড়াইটায় সবাই চলে যান।