আশির দশক থেকে ৯০ দশক রাজপথে উত্তাল আন্দোলন, প্রত্যেকদিন ঝাঁকে ঝাঁকে নেতা কর্মীরা মারা যাচ্ছে। অমানবিক নির্যাতন, গ্রেফতার, কারাবরণ তারপরও কোনও কিছুতেই সেদিন দমাইয়ে রাখতে পারেনি এদেশের ছাত্রসমাজ, যুব সমাজ, সহ রাজপথের লড়াকু সৈনিকদের। শত নির্যাতনের পর ও আন্দোলন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে ছিল। সেদিন এরশাদের পতন হয়েছিল। গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন পর বুঝা গেল এদেশের মাটিতে স্বাধীনতা অর্জন যত কঠিন ছিল, স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন আরো কঠিন। কিছুদিনের মধ্যে সবকিছু ধুলিসাৎ হয়ে গেল। সবার স্বপ্ন ধ্বংস হয়ে গেল। আবারও লড়াই সংগ্রাম শুরু হলো, ধ্বংসের ভিতর থেকে যেন বিপ্লব সৃষ্টি হয়, কিন্তু দেখা গেল ধ্বংসের ভিতর থেকে বিপ্লব সৃষ্টি না হয়ে সৃষ্টি হলো মতিউর, বেনজির, প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্র সহ অজস্র ব্যবসায়ী, আমলা ও মাফিয়াচক্র। দেশের নীতি নৈতিকতা আদর্শ সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেল। নীতি নির্ধারকদের মুখে নীতিবাক্য! আবার ভিতরে ভিতরে হাজার কোটি টাকার মালিক হওয়ার স্বপ্ন, বিদেশের মাটিতে পাড়ি জমানোর প্রতিযোগিতা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এদেশের নিপীড়িত, নির্যাতিত মানুষের একমাত্র ভরসা আপনার কাছে, দেশবাসীর প্রত্যাশা, আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছিলেন সেটি বাস্তবায়ন করা। ভয়ংকর এই দুর্নীতির হাত থেকে দেশকে বাঁচান। বর্তমানে দেশের দুর্নীতি অনেকটা ব্লাড ক্যান্সারের মত পুরা সমাজে ছড়িয়ে গেছে। এ মুহূর্তে আপনাকে আক্রান্ত স্থানে বার বার আঘাত করতে হবে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ক্যান্সার হল আলোচিত আমলা আলোচিত কিছু ব্যবসায়ী, অলিগার্ক রাজনীতিবিদরা।এরা সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যেই বিদ্যমান। যতদিন না এদেরকে সমূলে উৎপাটন করা না হবে, ততদিন এই সকল আলোচিত আমলা, ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদরা এই সমাজ, রাষ্ট্র ধ্বংস করে ফেলবে।
সামপ্রতিক সময়ে আলোচিত আন্দোলন! বাংলা ব্লকেড নামধারী নেতা–নেত্রীদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, কী দারুণ আপনাদের আন্দোলন! আপনাদের আন্দোলনের মাধ্যমে আপনারা আরো বেশি বেশি করে বিসিএস ক্যাডার হবেন। আমলা হবেন এবং সিনিয়রদের পদাঙ্ক অনুসরণ করবেন। আপনাদের আন্দোলন লক্ষ্য করলে দেখা যায় রাষ্ট্রের জটিল আলোচিত সমস্যা, যেমন বিসিএস প্রশ্নপত্র ফাঁস, উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত কিছু লোকজনের হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি, বিদেশে অর্থ পাচার এবং নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা সহ দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এ সকল কিছুর বিরুদ্ধে আন্দোলনের কোন এজেন্ডা নেই।
আবার ৪৮সাল থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম পর্যন্ত সম্মুখ সারিতে থেকে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র সংগঠনগুলি এবং পরবর্তীতে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের যারা জীবন বাজি রেখে আন্দোলনের কারণে এত অর্জন, আজকের দিনে তাদের উত্তরসূরিদের কাছে সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। আজকে এই সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাস, রাজপথ কেঁপে উঠার কথা ছিল, তা না হয়ে আন্দোলন হয়ে গেছে লেড়ুড়ভিত্তিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। দেশের স্বার্থে কেউ কোনও কথা বলবে না। আজকে জাতির বিবেকের কাছেও প্রশ্ন রাখতে পারি না। জাতির বিবেকও বিবেকহীন হয়ে গেছে।
তাই আজ দেশের প্রধান বিচারপতিকে আক্ষেপ করে বলতে হচ্ছে, দেশের উন্নয়নের সুফল দুর্নীতির চোরা বালিতে তলিয়ে যাচ্ছে। দেশের সকল সুন্দর অর্জন গুলি দুর্নীতির অন্ধকারের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে। এই দুর্নীতি আমাদের জন্য একদিকে যেমন কলঙ্কের অপমানের, বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায়।