মসজিদের বারান্দায় সাজিয়ে রাখা হয়েছে রকমারি ইফতারি। আসরের নামাজের পর থেকেই লাইন ধরে বসে যান ইফতার করতে আসা মানুষজন। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষজন বাড়তে থাকে। ঘড়ির কাঁটা সাড়ে পাঁচটা পেরোতেই মসজিদে ইফতারের দায়িত্বে থাকা মানুষ ইফতারের প্লেট দিতে শুরু করেন সবার হাতে হাতে। কেউ কাউকে চিনেন না। অথচ পাশাপাশি বসে করছেন ইফতার। তাদের একটাই পরিচয়–তারা রোজাদার। এই যেন এক সৌহার্দ্য সম্প্রীতির মিলনমেলা। গতকাল নগরীর চকবাজার এলাকার ঐতিহ্যবাহী অলি খাঁ মসজিদে এই চিত্র দেখা গেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আসরের নামাজের পর থেকে শুরু হয় মসজিদে স্বেচ্ছাসেবীদের কর্মযজ্ঞ। স্বেচ্ছাসেবকরা প্লেটে প্লেটে ইফতার সামগ্রী রাখা শুরু করেন। ইফতার সাজানো হয় বড় ধরনের ডিশেও। প্লেটে থাকে ছোলা, পেঁয়াজু, মুড়ি, বেগুনি, জিলাপি, সিঙ্গারা, সমুচা, খেজুর, শরবত ও সেমাই। ইফতারের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আসা সকলের হাতেই ইফতারের প্লেট পৌঁছে দেওয়া হয়। এছাড়া ইফতারের পাঁচ মিনিট আগে মোনাজাতে অংশ নেন সব মুসল্লি। আজান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ইফতার।
জানা গেছে, গত ২০১২ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মরহুম এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী ইফতারির এই আয়োজনের সূচনা করেন। শুরুতে দুইশ থেকে তিনশজনের আয়োজন করা হতো। এখন সেটি হাজার ছাড়িয়েছে।
ইফতার করতে আসা ভ্যান চালক ইসমাইল হোসেন জানান, নিজের টাকায় এত ভালো ইফতারি কিনে খাওয়া সম্ভব নয়। তাই এখানে ইফতার করতে এসেছি। এই এক জায়গায় ধনী গরীব কোনো ভেদাভেদ নেই। সবাই একসাথে বসে ইফতার করতে অন্যরকম ভালো লাগে।
একটি বেসকারি ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ড আবুল হোসেন বলেন, প্রথম রমজান থেকে এই অলি খাঁ মসজিদে ইফতার করছি। সবার সাথে ইফতার করতে ভালো লাগে। এতে নাকি সওয়াবও বেশি হয়। এখানে ধনী–গরীব কোনো ভেদাভেদ নেই। সবাই পাশাপাশি বসে ইফতার করছি। আমাদের একটাই পরিচয় আমরা রোজাদার।
মোহাম্মদ আনাস নামের এক কলেজ ছাত্র বলেন, আমার বাসা চকবাজার এলাকায়। বাইরে একটা কাজ ছিল। তাই চিন্তা করলাম, বাসায় না গিয়ে এখানে ইফতার সেরে ফেলি। মসজিদে ইফতার করার অনুভুতি অন্যরকম। এখানে হাজার হাজার মানুষ দিনভর রোজা রেখে একসাথে ইফতার করছেন। এতে পারস্পরিক সোহার্দ্য–সম্প্রীতিও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অলি খাঁ মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, আমরা গত একযুগ ধরে বিত্তবানদের সহায়তায় রোজাদারদের জন্য ইফতারের আয়োজন করে আসছি। আমাদের মসজিদে এসে একজন রোজাদারও ইফতার ছাড়া যান না। আমরা সবার জন্য ইফতারের ব্যবস্থা করে থাকি। এটি সম্ভব হচ্ছে আমাদের অনেক শুভাকাঙ্খী আমাদের আয়োজনে আর্থিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। ভবিষ্যতে ইনশা আল্লাহ আমাদের এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।