আজ বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দু’টি ঘটনাই ঘটেছে উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের ২নং ও ১নং ওয়ার্ডে।
প্রথম ঘটনায় ইউপি সদস্যের ভাইয়ের হাতে খুন হন নববধূ কিশোরী সালমা আক্তার এবং দ্বিতীয় ঘটনায় ভারসাম্যহীন ছেলের হাতে খুন হন ৮৫ বছরের বৃদ্ধা মা।
পুলিশ জানায়, স্ত্রী হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত স্বামী আলমগীরকে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানা এবং মা খুনের ঘটনায় ছেলে নাছির উদ্দিনকে পেকুয়া থানা পুলিশ আটক করেছে।
থানা সূত্র ও এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, আজ বুধবার প্রথম ঘটনাটি ঘটে পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ছনখোলা পাহাড়ি এলাকায়। ঐ এলাকার ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ভাই আলমগীর(৪০) ২ মাস আগে বিয়ে করেন টইটং ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের পণ্ডিতের পাড়া এলাকার মৃত বাদশার মেয়ে সালমা আক্তার(১৪)কে।
আজ বুধবার ভোরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সালমা আক্তার।
তার পুরো শরীর জুড়েই আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এদিকে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ ঘাতক স্বামী আলমগীরকে আটক করেছে বলে থানা সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এলাকাবাসী ও থানা সূত্র জানায়, আলমগীর এলাকায় ‘ডাকাত আলমগীর’ নামে পরিচিত এবং তার বিরুদ্ধে ডাকাতি, অস্ত্র, পুলিশ এসল্ট, বন নিধন সহ অর্ধ ডজন মামলা রয়েছে।
তার মধ্যে বন বিভাগের দায়ের করা মামলার ওয়ারেন্টও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এর আগে কমপক্ষে ৩ জনকে বিয়ে করলেও তার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তাকে ছেড়ে চলে যায় তারা।
নিহত সালমা আক্তারের মা মর্তূজা বেগম আজ তার বাড়িতে বিলাপ করতে করতে সাংবাদিকদের বলেন, “আমি পাড়ায় পাড়ায় ভিক্ষা করে খাই। আমার স্বামী অনেকদিন আগে মারা গেছেন। আমার একটাই মেয়ে। মেয়ের বয়স ১৪/১৫ হবে। দুই মাস আগে টইটং এর ডাকাত নাছির সহ আলমগীর এসে অনেকটা জোরপূর্বক আমার মেয়ে সালমাকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তারা বিয়ে করে। আমি ভয়ে কাউকে বিচারও দিতে পারিনি। বিয়ের কিছুদিন পর আমার মেয়ে বেড়াতে এলে তার উপর বিয়ের প্রথম দিন থেকে নির্যাতনের কথা সে আমাকে জানালে আমি নাছিরকে গিয়ে বলি কিন্তু নাছির বলেছে আমি বলে দেব সব ঠিক হয়ে যাবে। এরপর থেকে আমার মেয়েকে আর আমার ঘরে আসতে দেয়নি। আজ শুনলাম আমার মেয়েকে সিগারেটের আগুনের ছ্যাকা ও গোপনাঙ্গে লোহার রড ঢুকিয়ে দিয়ে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে। আমি আমার অসহায় মেয়ে হত্যার বিচার চাই।”
কিশোরী গৃহবধূ সালমা আক্তার হত্যার ঘটনায় ঘটনাস্থল ‘ঘাতক স্বামী আলমগীরের’ বাড়িতে তদন্ত করতে গিয়েছিলেন পেকুয়া থানার এসআই সুমন সরকার।
সেখান থেকে ফিরে তিনি দৈনিক আজাদীকে বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে যতটুকু জানতে পারলাম ডাকাত আলমগীর ২ মাস আগে কিশোরী বয়সের মেয়ে সালমাকে তার সম্মতিতেই বিয়ে করে। তার ঘরটি দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় হওয়ায় সেখানে আমরা পৌঁছাতেও অনেক বেগ পেতে হয়েছে। গত রবিবার ঘাতক আলমগীর তার স্ত্রীকে সারারাত নির্যাতন করে বলে নিহত সালমা আক্তারের স্বজনদের সাথে কথা বলে জানতে পারি। পরদিন স্ত্রী সালমা আক্তার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে একদিন পর আলমগীর তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপতালে নিয়ে যায়। আজ ভোরে সেখানেই সালমা আক্তারের মৃত্যু হয়।”
পেকুয়া থানা পুলিশের দেয়া তথ্যমতে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ ‘ঘাতক আলমগীরকে’ আটক করেছে বলেও জানান তিনি।
পুলিশ আরো জানায়, সালমা আক্তারের বিয়ের কোনো কাগজপত্র পাওয়া যায়নি।
এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে সালমা আক্তারের বয়স কম হওয়ায় কাজী ডেকে রেজিস্ট্রি না করে মৌলভী ডেকে বিয়ে পড়ানো হয়েছিল। পুলিশ জানায়, নিহত সালমা আক্তারের সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এদিকে অপর ঘটনাটি ঘটে একই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ভারওয়াখালী এলাকায়।
জানা যায়, আজ বুধবার সকালে মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের হাতে নির্মমভাবে খুন হন হতভাগী ৮৫ বছরের বৃদ্ধা শামশুন্নাহার। তিনি ঐ এলাকার মৃত হাজি বদিউল আলমের স্ত্রী।
আজ দুপুরে নিজ বাড়ি থেকে পুলিশ নিহত বৃদ্ধা শামশুন্নাহারের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
বারবাকিয়া ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাস্টার মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, “নিহত বৃদ্ধা শামশুন্নাহার বহুদিন ধরে বাড়িতে মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলে নাছির উদ্দিনের সাথে বসবাস করতেন। বেশ কিছুদিন ধরে বৃদ্ধার সন্তানদের মধ্যে জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হলে আমরা গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে তাদের বাড়িতে গিয়েই তাদের বিরোধ মীমাংসা করে দিয়ে আসি। আর সকালে শুনলাম বৃদ্ধা মারা গেছেন এবং ছেলে নাছির তাকে মেরেছে।”
এ ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা পেকুয়া থানার এসআই সুমন সরকার বলেন, “আমরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার পরে দেখতে পাই মায়ের লাশ ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে আর মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলে নাছির উদ্দিন দরজা বন্ধ করে ঘরে বসে আছে। আমরা বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছি। নিহত বৃদ্ধা শামশুন্নাহারের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ছেলে নাছির উদ্দিনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসি এবং ঘটনাস্থল থেকে একটি লোহার রড উদ্ধার করেছি।”
দুই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল আজম বলেন, “দু’টি ঘটনায় দু’জনকে আটক করা হয়েছে। নিহতদের ময়নাতদন্তের কাজ চলছে। নিহতদের স্বজনরা মামলা দায়ের করলে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।”