চট্টগ্রামে গতকাল শুক্রবারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ৫১৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। একদিনে শনাক্তের এ সংখ্যা চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এর আগে গত বছরের ২৯ জুন ৪৪৫ জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল। এতদিন যা ছিল একদিনে সর্বোচ্চ। প্রসঙ্গত, গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। তবে চট্টগ্রামে প্রথম রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৩ এপ্রিল। নগরীর দামপাড়া এলাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তির শরীরে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে ওইদিন। সে হিসেবে প্রথম রোগী শনাক্তের এক বছরের মাথায় একদিনে শনাক্তের সংখ্যায় রেকর্ড ছাড়াল চট্টগ্রামে।
বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই সংক্রমণের হার ক্রমশ বাড়ছে। প্রতিদিনই আগের দিনের রেকর্ড ছাড়াচ্ছে। হাসপাতালগুলোও ভরে যাচ্ছে করোনা রোগীতে। যেন সে-ই পুরণো চিত্র, ঠাঁই নেই অবস্থা।
দ্বিতীয় ধাপে করোনা সংক্রমিতদের মধ্যে সংকটাপন্ন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এতে বাড়ছে আইসিইউ বেডের চাহিদাও। কিন্তু আইসিইউ বেডের সংকট চরম আকার ধারণ করছে। সরকারি কয়েকটি হাসপাতালে খালি পড়ে থাকলেও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালে খালি না হওয়ায় সংকটাপন্ন রোগীদের দেওয়া যাচ্ছে না আইসিইউ বেড। চট্টগ্রাম জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. আসিফ খান দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে সরকারি হাসপাতালগুলোতে বৃহস্পতিবারের তথ্য অনুযায়ী ১১৭টি খালি রয়েছে। তবে কোনো আইসিইউ বেড খালি নেই। অন্যদিকে বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে কোভিড রোগী ও সাসপেক্টেড মিলে ৩৭৬জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড ডেডিকেটেড ৫৫টি আইসিইউ বেড থাকলেও এখনো ১৬টি খালি রয়েছে বলে জানান তিনি।’ তিনি জানান, বৃহস্পতিবারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামে ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৫৩৫ জনের করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ৫১৮ জনের করোনা পজিটিভ আসে।
চট্টগ্রামে ৫টি সরকারি হাসপাতালে বেড সংখ্যা : চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, চট্টগ্রাম মহানগরীতে সরকারি হাসপাতালগুলোতে সাধারণ ও আইসিইউ মিলে ৫৪১ টি শয্যা রয়েছে। তন্মধ্যে ৫০৬টি সাধারণ ও ৩৫টি আইসিইউ শয্যা। সাধারণ বেডের ৫০৬টির মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৮০টি, ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে ৩২টি, আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে ১৪০টি, চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতালে ৫৪টি এবং হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১০০টি সাধারণ বেড রয়েছে।
চট্টগ্রামে আইসিইউ বেড সংখ্যা : চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০টি, জেনারেল হাসপাতালে ১০টি, হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১০টি এবং বিআইটিআইডি হাসপাতালে ৫টি আইসিইউ বেডের তথ্য দিয়েছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিস। অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে ১ হাজার ৯৯৬টি শয্যা রয়েছে। তন্মধ্যে করোনা ডেডিকেটেড আইসিইউ রয়েছে ১০৫টি। এদিকে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী যেসব তথ্য দেওয়া হচ্ছে, বাস্তবে সবগুলো হাসপাতালে রোগী ভর্তিও শুরু হয়নি। প্রথম ধাপের পর হাসপাতালের কার্যক্রম চালু রাখা হলেও রোগী ভর্তি বন্ধ করে দেওয়া হয় রেলওয়ে হাসপাতাল ও হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালে। দ্বিতীয় ধাপে এখনো রোগী ভর্তি শুরু হয়নি। তন্মধ্যে হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ বেড রয়েছে। তবে রোগী ভর্তি শুরু না হওয়ায় এসব বেড এখনো ব্যবহারও শুরু হয়নি। আবার বিআইটিআইডি হাসপাতালে ৫টি আইসিইউ বেডের তথ্য দেওয়া হলেও বেডগুলো এখনো স্থাপন করা হয়নি। অন্যদিকে জেনারেল হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে আইসিইউ বেডের অভাবে সংকটাপন্ন রোগীদের আইসিইউ বেড দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবদুর রব দৈনিক আজাদীকে বলেন, কয়েকদিন ধরে হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে। করোনার দ্বিতীয় ধাপে সংক্রমণের হারও বেড়েছে। আমাদের যে ১০টি আইসিইউ বেড রয়েছে, সেগুলোতে রোগী ভর্তি আছে। খালি না হওয়ায় নতুন রোগীকে আইসিইউ বেড দেওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে মুমুর্ষূ ৪-৫জন রোগী আইসিইউ বেডের জন্য অপেক্ষায় রাখা হয়েছে।’ তিনি বলেন, করোনার শুরুর দিকের চেয়ে এবারের সংক্রমিত রোগীদের মধ্যে ক্রিটিক্যাল রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এতে আইসিইউ বেডের চাহিদা বেড়েছে আগের চেয়ে বেশি। জেনারেল হাসপাতালের মতো চট্টগ্রামে অন্য হাসপাতালগুলোতেও অবস্থা একই বলে মন্তব্য করেন করোনার এ সম্মুখযোদ্ধা।