মন চায় মন চায়, যেখানে চোখ যায় সেখানে যাবো হারিয়ে.. অথবা “কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা মনে মনে.. এমনই এক ফুরফুরে সারাটাক্ষণ বেশ কয়েকদিন হলো পৌষের চাদরে আগলে রেখেছি। তেমনি একদিন ঘটা করে এলো সেই ক্ষণ। দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসে, রাতের ঘুম অন্ধকারে সকালের জন্য ততই তোরজোড়ে শুধু বিড়বিড় করে। ১৭ জানুয়ারি সাতসকালে সেই ক্ষণ আসতেই সকাল সাড়ে ছয়টায় রিংটোনে ঘুম ভাঙায় গৌতম চৌধুরী। তখনো পল্লব গুপ্ত বিপুল ঘুমের ঘোরে দেখছে চেরাগিপাহাড় মোড়ে দু’টো গাড়িতেই আঠারো চাকা! শুনতেই, একটু ভড়কে গেলাম! হাসিব বলে, দাদা তুমি কই? এদিকে হুলস্থুল সাজে মেয়ের মা‘তো পৌনে আট‘টা থেকে বসা ইঞ্জিন সিটে। সাথে দুই নাতনিকে নিয়ে সাতসকালের সাক্ষী হলেন অনুপম চৌধুরী। তখনো গরমগরম টপকেক ও মাটন সবজি পেটিস বাটালিরোডের মিসকায় আরামদায়ক উষ্ণতায় লেপমুড়িতে ঘুমিয়ে। তারা জেগে ওঠে আবুল চাচার রিকশার ঝাঁকুনিতে। এদিকে গাড়িতে সবাই যে যার সিটে বসতেই কারোরই নেই নড়াচড়া। কিন্তু শ্রেষ্ঠ, ঘুড়ি, সনম, অপ্সরার মতো ছোটদের খুনসুটি থেমে নেই। রাস্তাজুড়ে রোদ হাসতেই গরমগরম সিঙাড়া কোলেপিঠে এনে প্রতীম দে নিয়ে রাখলো রংপুরের ভ্যানে। ডানপাশ ঘুরতেই পলি ঘোষ ডেনিম জ্যাকেট জড়িয়ে হঠাৎ বাতাসে চুল এলিয়ে দিয়েছে। তাতেই ফার্মহাউজে কাঁপছে শিমুলের উচ্ছ্বাস। তখনই নেপালি সেই টুপিতে চেরাগীরমোড়ে গৌতম চৌধুরীর শুরু হলো বিশেষ সেলফি শো। তাই দেখে ডিসি পার্ক আড়মোড়ায় আস্তে আস্তে চোখ খুলছে। কিন্তু রূপসাগরের শোভা মাসী কড়া লিকারের বুদবুদে ফুঁপিয়ে উঠলো সকালের দৃঢ়তায়। এরইমধ্যে ডিসি পার্কের ওয়েলকাম জোন খুঁজে পেতে সঞ্জয় পাল টিউন মেলান ইসমাইল সোহেলের কণ্ঠে। কিন্তু শুভাগত বড়ুয়ার অপেক্ষায় সেই টিউন বাজলো সাড়ে নয়টায়। আলমগীর ভাইয়ের স্টিয়ারিং ইউটার্ণ নিতেই গাড়ি ছুটলো ৭০ মাইলবেগে। হঠাৎ রমা‘দিকে খুুঁজতেই বললেন, এই তো আমি, উনি আমার জা। আর তাতেই বেশ জমজমাট উচ্ছ্বাসে আগ বাড়িয়ে হাসলেন শ্যামলী‘দি। এদিকে অনুপম শীল , সাদাব ইয়াসির ও পূর্ণা দাশ জানালো, তারা ডিটি রোডে রোদের সাতকাহন জেনে ফোন দিচ্ছে। ততক্ষণে সলিমপুরের কালুশাহ ব্রীজ পেরিয়ে গাড়ি মহাসড়কের চৌরাস্তায়। প্রচন্ড ধূলোয় লুকিংগ্লাস লুকিয়ে গেলে সিটিগেইটে অনুপমের হাতছানি কারো নজরে আসেনি। সতেজ সকাল তখন কিছুটা ঘর্মাক্ত। আর ডিসি পার্ক পৌঁছেই দেখি মনপ্রাণ উজাড় করে হাসছে সূর্যদেব। পুরো এলাকা রোদচশমায় ঢাকা যায়নি। তবে আমাদের গাড়ি বহরে প্রায় ৮৮ জন। তাদের টুকটাক ব্রিফিং সেরে উঠতেই সবাই দেখছি যে যার মতো হঠাৎ লে জায়েঙ্গে। ততক্ষণে পার্কের রিভিউ নিতে গোপনে সাজ্জাদের আসার খবর ফেবুতে দিল তার নিকটতম জলিল উল্লাহ। আর পার্থ বড়ুয়ার ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পাসের ঘুম ভাঙে সকাল এগারোটায়। তবুও অপেক্ষায় ছিলাম পূবাই ও বাসুদেব দাদার সকালের সরব উপস্থিতি। এরপর সুবর্ণাদি ইনকামিং কল আসতেই পার্কের টিকেটের গ্যাড়াকল এড়ানো যায়নি। দিদি ঢুকতেই হয়ে গেলো সেলফির ট্রেলার। হঠাৎ আমার ছোটমেয়ে হাত ছেড়ে উঠে চড়তে থাকে দোলনায়। যেখানে মা–মেয়ে দু’জনেই হুড়োহুড়ি লেগে যায়। একসময় দেখি তারাও একটু এগুতেই নিরুদ্দেশ! একের পর এক মুখর ক্লিক। ঘামছেনা মেকাপ। এরপর লালফুলের রাউন্ড গেইট পার হতেই মেয়ের নৌকা চড়ার বায়না। একটু যেতেই এতোদিনের লালিত ক্ষণে মুগ্ধতায় চওড়া হাসিতেই ব্যস্ত। তখনই নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে খেজুর গাছের কাঁটাতে খোঁচা দেয়। এরপর কয়েকগজ যেতেই দেখি সুবিশাল গানের সুপরিসর মঞ্চ। কোথাও নেই কোলাহল।
চিৎকার না থাকলেও সাজানো পুরো মঞ্চ সানস্ক্রিনে বিকেলের জন্য তরতাজা হচ্ছে। আর তাতেই ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সাক্ষী হলো ফ্রেমবন্দী বৌদির মেকওভার। সদলবল হাসতে থাকে রিহা, তোয়া ও চাঁদের পরিবার। দূরে হাসছে পানতোয়া। একসময় ফুলের রাজ্যে ময়ুরের পেখম খোলা সাজে মনে হলো তীরের মতো বিঁধলো কেউ বুকে। যেন কেউ কেউ প্রমিজ করলো, কেউ আবার হেরে গিয়ে বললো–ভালোবাসা বহুরূপী তাকে চেনাতো যায় না…। বেলা গড়াতেই ভাসমান ফুলসজ্জায় গিয়ে দাঁত খিলখিলে ফেরারি হলো পূর্ণা, ইভান, ইকবাল, হাসিব, এমনকি ঐশী ও ত্রয়ী দে। তারা আক্ষেপ উজাড় করলো উপুড় করা রাখা রসের হাড়িতে। তবুও স্মিত হাসিতেই পার্কের ইউনিক ফোয়ারা হেসেই খুন। রিপোর্টিং হুইসেল বাজলো এগারোটার। ততক্ষণে সিঙাড়া রোদ পোহাতে থাকে চেরাগীপাহাড় ভ্যানে। আর তখনই পার্কের দুই বাসে ডাক পড়লো রূপসাগরের কামরাঙার মতো খাজার। যেন ম্যাড়ম্যাড়ে দুপুর হয়ে গেলো দুরন্তপনা। এদিকে সোহেল আরমান সুমনের অপেক্ষায় আর দেরি সইছে না । দিগ্িবদিক পারাপারে থিথু হলেন টানেলের উত্তরপাড়ে। এরপর ঝড় বয়ে গেলো বাসের চাকায়। শান্ত পারকি শামিয়ানা টাঙিয়ে উড়তে থাকে। সবাই আরামদায়ক উষ্ণতায় রুমালের ব্যবহারিক পরীক্ষায় জুড়িয়ে নেয় মন। সবুজ ঘাস জেগে ওঠে মুখরিত পাখির গুঞ্জনে। আর সেই মুহুর্ত অটুট রাখতে সাদাব, ইসমাইল সোহেল, সঞ্জয় পাল, অনুপম সমবেত নৃত্যের কৌশলের নতুন মুদ্রায় মাতে। প্রায় ঘন্টাখানেক সময়টা বেশ জমাট বেঁধে যায় শিশুদের টেপ টেনিস বল ধরার জয়–পরাজয়ে। দুপুর ক্লান্ত না হতেই জসিম উদ্দিন ভাবী শামিম আকতারের পাশে নীরবে জলিলের পাঠানো মেসেজে টেম্পোর হৃদকম্পন শোনার চেষ্টা করছে। ততক্ষণে হাড়িতে গরমগরম পোলাও, সোনালী রোস্ট, ডিম ও সবজির নান্দনিক মুহূর্ত বারবার খাবার টেবিলে বসতে উসকে দিচ্ছে। এরইমধ্যে শর্মিলা বড়ুয়া ও সাজেদুল আনোয়ার বাইকে হাঁপিয়ে ওঠা ত্বকের শুভ্রতা আনে লুসাইয়ের হ্যান্ডওয়াশে। সারিসারি টেবিলে ঝুলন্ত চাটাইয়ের বেড়া নিচে গড়িয়ে পড়তেই রোদের গল্প থেমে গেলো। আরাম আয়েশের এ ভোজে ভরপেটে তৃপ্তি এনে দেয় সুবর্ণা‘দি ও রমা‘দির আচারের টক–ঝাল–মিষ্টিতে। এরপরও নিদ্রাহীন পারকি চরের নিদারুণ পরিণতি দেখে ঝাউয়ের শেকড়ে খুব আবেগতাড়িত। চারদিকে দুঃখজনক ও ধ্বংসস্তুপ পরিণতি। কাঠের সিঁড়ি বেয়ে বিচে নামতেই সাগরকন্যার মন চৌচির। তবুও আমার মেয়ের মন কাড়ে সাগরকন্যার রূপে। বারবার অপ্সরা ও রাজশ্রী বোটে চড়ে সাগরকন্যার কোলে উঠতে চায়। সময় স্বল্পতায় আপাতত এবার ব্যতয় হলেও তারা নাগরদোলা ও টয়ট্রেনে ঘুরে আবদারে প্রশান্তি আনে। কিন্তু রাডারের চোখ কংকন সাহা‘র চায়ের আবদার চুমুকে চাঙ্গা হলো কয়েকজনে। তবে রেস্টবেডে বসে কচি ডাবের হাঁকডাকে মন জুড়িয়ে হাসে প্রবাল তালুকদার ও মাসীর বেমালুম আনমনা দৃষ্টি। যেন সব ভুলে সাগরে সঁপে দিয়েছে মন। জোয়ারের উচ্ছ্বাসে তখন সঞ্জয় ও জলিল নোনাপানির মনন চেনাতে ব্যস্ত। তারা এর রেশ টেনে আনে কুপন ড্র–তে। যেখানে ইট–পাথরের নগর ছেড়ে বোধন আবৃত্তি পরিষদ চট্টগ্রামের চড়ুইভাতি হয়ে উঠলো একটুখানিক প্রশান্তির মিলনমেলা। যেখানে পলির পরিবারের আনন্দের অনুভূতি, নবীন ধরের লুকিয়ে থাকা অনুভব, সাদাবের স্ত্রীর ডিমের ঝুড়ি প্রাপ্তি কিংবা সাজেদুল আনোয়ারের পালতোলা অভিব্যক্তিতে বেলা বেশ গড়িয়ে গেলেও পিলো পাসিংয়ে চৈতি, স্মৃতিদি ও কলি সরকারের অনুভব ছিলো হার না মানা একসময়। শেষটা রাঙিয়ে দেয় ইসমাইল সোহেল। যিনি পুরস্কার না পাওয়ার বেদনায় দুইশো টাকার কুপন মাত্র পাঁচ টাকায় বিজয় সরকারের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার অনুরোধের আখ্যান। তবে শেষ পর্যন্ত সুবর্ণা চৌধুরী শান্তার পানির ঝরণা প্রাপ্তিতে সঞ্জয় পাল তুখোড় হাসির রসদ পেয়ে যায়। যদিও এ আনন্দ আয়োজনে খুব মিস করেছি মৃন্ময় বিশ্বাস, সুস্মিতা চৌধুরী, লিমা চৌধুরী, শংকর প্রসাদ নাথ, সুচয়ন সেনগুপ্ত, উর্মি বড়ুয়া, সুচিত্রা বৈদ্য ও শ্রেয়সী‘কে। তবুও স্বল্প সময়ে নাগরিক জীবনের অম্লমধুর স্বাদের পরও সবার স্বতঃস্ফূর্ত খোলা মনের উপস্থিতি ছিলো লক্ষণীয় । শুধুমাত্র সবার ভালোবাসায় এমনই আয়োজনে এতো আনন্দ। এখানে নেই কোনো বাড়তি জৌলুশ , আছে শুধু ভালোবাসার আবরণে ঘেরা কিছু অনন্য মুহূর্ত। যা এ আনন্দের অন্যরকম সোনালি সুখস্মৃতির ফ্রেমে বাঁধাই থাকবে বহুদিন।