১৮২২ সালে ব্রিটিশ আমলে কুতুবদিয়ায় মাত্র ৪ হাজার ৪২৮ টাকা ব্যয়ে ৮ তলা ও ৮ কক্ষ বিশিষ্ট ১২০ ফুট উচ্চতার বাতিঘরের নির্মাণ কাজ শুরুর ২৪ বছর পর ১৮৪৬ সালে নির্মাণ কাজ শেষ করা সেই ঐতিহাসিক বাতিঘর ইতিহাসের কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। দ্বিতীয়বার ১৯৬৫ সালে পুরনো বাতিঘরের পাশেই স্টিলের স্ট্রাকচারের ওপর আরেকটি বাতিঘর নির্মাণ করা হলেও ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে দ্বিতীয় বাতিঘরটিও বিধ্বস্ত হয়ে যায়। যেই বাতিঘর ছিল দুর্যোগ দুর্বিপাকে বঙ্গোপসাগরে জাহাজ চলাচলের একমাত্র আলোক নির্দেশনার দিশারী। তবুও হাল ছাড়েনি কুতুবদিয়ার সাগর ঘেরা দ্বীপের মানুষ। দীর্ঘ প্রতীক্ষা আর অনেক দেন–দরবারের পর অবশেষে গেল সরকারের আমলে ৬০ কোটি থেকে ব্যয় বাড়িয়ে ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নেভাল রেডিও স্টেশনসহ আধুনিক সুযোগ–সুবিধা সম্বলিত নতুন বাতিঘর নির্মিত হয়। আর এই বাতিঘরকে ঘিরে দক্ষিণ ধূরুং ইউনিয়নের ১২ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকত জুড়ে গড়ে উঠেছে বিস্তীর্ণ এলাকার পর্যটন স্পট।
গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল কুতুবদিয়া লাইট হাউস সি–বিচ পর্যটন স্পটের উদ্বোধন। এর মধ্য দিয়ে খুলে গেল কুতুবদিয়ার পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ঘিরে লাইট হাউস এলাকায় বসেছিল লক্ষ জনতার মিলন মেলা। বর্ণিল সাজে সজ্জিত হয়েছিল সাগরের বিস্তীর্ণ বালিয়াড়ি। উৎসবের আমেজে মুখরিত ছিল দ্বীপবাসী।
দক্ষিণ ধূরুং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আল আজাদের সার্বিক আয়োজনে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কুতুবদিয়ার ইউএনও ক্যাথোয়াই প্রু মারমা। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, কুতুবদিয়ায় নির্মিত এই বাতিঘর ঘূর্ণয়মান আলোর ছটা বিকিরণের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে আলোর পথ দেখাবে দেশি–বিদেশি জাহাজকে। আর এই বাতিঘরকে ঘিরে গড়ে ওঠা পর্যটনের স্পট টানবে দূর–দূরান্তের আগত পর্যটকদের। গত শনিবার এটি পরীক্ষারমূলকভাবে চালু করেছে বাতিঘর কর্তৃপক্ষ।
অনুষ্ঠানে কুতুবদিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হাছান কুতুবী বলেন, নতুন এই পর্যটন স্পট আগামী প্রজন্মের জন্য সম্ভাবনার এক নতুন দরজা খুলে গেল। কুতুবদিয়া লাইট হাউস সি–বিচ পয়েন্ট এখন শুধু একটি পর্যটন স্পট নয় এটি আমাদের দীর্ঘ সংগ্রামের জয়, আমাদের স্বপ্নের রূপায়ন এবং ভবিষ্যতের অগণিত সম্ভাবনার উজ্জ্বল প্রতীক।
কুতুবদিয়া লাইট হাউসের ইনচার্জ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, নতুন বাতিঘরের কার্যক্রম গত শনিবার থেকে চালু করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের এ লাইট হাউস আগামী ৩০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার সম্ভাবনা রয়েছে।












