সায়রা বানু। চট্টগ্রাম উত্তর কাট্টলী আলহাজ্ব মোস্তফা হাকিম কেজি এন্ড হাইস্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের খুব প্রিয় শিক্ষক। আমি ২০০১ সাল থেকে একসাথে ১৭ বছর পথ চলেছি ম্যাডামের সাথে। তখন মর্নিং শিফট ও ডে শিফট একসাথে ছিলো। সকাল সাতটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত আমরা ক্লাস করতাম। নার্সারি থেকে ক্লাস টেন পর্যন্ত। কত স্মৃতি আজ মানসপটে ভেসে উঠছে। জীবনের সব রঙ মুছে গেছে আরও অনেক আগে। যে টগবগে তরুণ মেয়েটা টানা আটটা ক্লাস করতো, কখনো না বসে। অবাক হতাম সায়রার জীবনীশক্তি দেখে। সংসারের টানা পোড়নে টিউশনিও করতে হয়েছে। সন্ধ্যার আগে পরে সম্ভবত রাত নয়টা দশটা পর্যন্ত টিউশনি করতো। যখন এ শিফট বি শিফট ভাগ হলো তখনও সকাল সাতটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত পথ চলা ছিলো তার। ডিগ্রি পাস করার আগেই ঢুকছিল এই স্কুলে। এত স্মার্ট একটা মেয়েছিলো যার শাড়ির ভাঁজ সারাদিনেও মলিন হতো না। চলাফেরা খুব শালীন ছিলো। শুধু গায়ের রং এর কারণে বিয়ে হচ্ছিল না। দেরিতে হলেও বিয়ে হয়েছিলো। একটি ছেলে সন্তানের মাও হয়েছিলেন কিন্তু বিধি বাম। সংসার আর করা হলো না। অনেক কিছুই লিখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু লিখবো না। এখন লেখার আর কিছু নেই। সব শেষ প্রায় আট, নয় বছর জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে ছিলো। সব যুদ্ধ এক সময় শেষ হয়। জীবন প্রদীপ নিভে গিয়ে যুদ্ধের অবসান হলো গত ৫ জানুয়ারি ২০২৫। দু’হাত তুলে প্রার্থনা করি আপনি জান্নাতবাসী হোন। যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন। আপনার কষ্টগুলো সব ফুল হয়ে সুবাস ছড়াক আপনার চারপাশে।
সায়রা ম্যাডাম আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবার কথা রাখতে পারিনি। আপনার সাথে শেষ সাক্ষাতে আপনি বলেছিলেন, ‘ম্যাডাম আমাকে হাসপাতালে নিবেন না?’ আমি পারিনি ম্যাডাম। শুধু আমি নই, আপনার প্রিয় ছাত্ররাও পারেনি। সেজন্য ক্ষমা আমি চেয়ে নিয়েছি আপনার কাছ থেকে। তবে না পারার এ বেদনা কখনোই আমি ভুলবো না।