মণিপুরে দুই নারীকে বিবস্ত্র করে হাঁটানোর ঘটনায় ভারতজুড়ে তোলপাড়ের মধ্যে সামনে এসেছে একই ধরনের আরো একটি ঘটনা। যেখানে বলা হয়, একই দিন একই জেলার আরো দুই তরুণীকে একদল উন্মত্ত জনতা ধর্ষণের পর হত্যা করে।
এনডিটিভি জানায়, ২১ ও ২৪ বছর বয়সের ওই দুই তরুণী ইম্ফল ইস্ট ডিস্ট্রিক্টের কোনুং মামাং এলাকায় একটি ‘কার ওয়াশ’ এ কাজ করতেন। কর্মক্ষেত্রেই তারা হামলার শিকার হন। এলাকাটি কাংপোকপি জেলায় দুই নারীকে বিবস্ত্র করে হাঁটানোর ঘটনা যেখানে ঘটেছে সেখান থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে। খবর বিডিনিউজের।
গত ৪ মে দুই নারীকে বিবস্ত্র করে হাঁটানোর ঘটনাটি ঘটে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সম্প্রতি ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে গত বৃহস্পতিবার তা ভারতের জাতীয় দৈনিকগুলোর শিরোনামে জায়গা করে নেয়। অন্য ঘটনাটিও একই দিনেই ঘটেছে বলে জানায় টাইমস অব ইন্ডিয়া। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি জানায়, একদল উন্মত্ত জনতা, যাদের মধ্যে কয়েকজন নারীও ছিলেন, তারা কার ওয়াশে গিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। জনতাদের ওই দলে থাকা নারীরাই পুরুষদের ওই দুই তরুণীকে একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে যৌন নিপীড়ন করতে উৎসাহিত করে বলে দাবি করেন ওই প্রত্যক্ষদর্শী। যিনি নিজেও ওই কার ওয়াশে কাজ করেন।
ওই তরুণ বলেন, উন্মত্ত জনতা দুই তরুণীকে টেনেহিঁড়চে একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে সব লাইট বন্ধ করে দেয়। কাপড় দিয়ে তাদের মুখ বেঁধে ফেলা হয় যাতে চিৎকার করতে না পারে। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে যৌন নিপীড়ন চালানোর পর আবার তাদের টেনেহিঁচড়ে বের করে এনে পাশেই একটি করাতকলের কাছে ফেলে দেওয়া হয়। তাদের কাপড় ছেঁড়া, চুল কাটা এবং পুরো শরীর রক্তে ভেসে যাচ্ছিল।
ভয়ে–আতঙ্কে ঘটনার পর ওই দুই তরুণীর পরিবার এ বিষয়ে পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। তবে শেষপর্যন্ত এক তরুণীর মা সাহস সঞ্চয় করে গত ১৬ মে সাইকুল পুলিশ স্টেশনে একটি ‘জিরো এফআইআর’ করেন বলে জানায় ইন্ডিয়ান এঙপ্রেস। এনডিটিভি ওই এফআইআর এর একটি কপি দেখেছে। এফআইআর এ বলা হয়, তার মেয়ে এবং অন্য একজন নারীকে ‘ধর্ষণ এবং নির্মমভাবে নির্যাতনের পর নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়’। এই মামলাটি পরে সাইকুল পুলিশ স্টেশন থেকে ইম্ফল ইস্ট ডিস্ট্রিক্টের পোরোমপাত পুলিশ স্টেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এফআইআর এ আরো বলা হয়, ওই দুই তরুণীর মৃতদেহ এখনো শনাক্ত হয়নি। সেগুলো কাথায় আছে সেটাও এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। ১০০ থেকে ২০০ জন ওই হামলায় অংশ নিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
মণিপুরে গত মে মাস থেকে শুরু হওয়া জাতিগত সহিংসতা এরই মধ্যে অন্তত ১৩০ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, হাজার হাজার বাসিন্দাকে করেছে বাস্তুচ্যুত। রাজ্যটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যেই জাতিগোষ্ঠীর সদস্য সেই মেইতেইরা তফসিলি উপজাতির মর্যাদা চাওয়ার পর থেকেই তাদের সঙ্গে কুকি সম্প্রদায়ের সদস্যদের সংঘর্ষ বাধে। ওই মর্যাদা পেলে মেইতেই–রা বনভূমি ও সরকারি চাকরিতে নানান সুযোগ সুবিধা, শিক্ষায় কোটা সুবিধা পাবে। দুই পক্ষের সংঘর্ষ এরই মধ্যে প্রায় ৬০ হাজার মানুষকে নিজভূমে শরণার্থী বানিয়ে দিয়েছে।