এক সাথে নির্বাচনী প্রচারণা ও আন্দোলন মোকাবিলায় মাঠে থাকবে আ. লীগ

শুকলাল দাশ | বৃহস্পতিবার , ৩১ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

শোকাবহ আগস্ট শেষে সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রচার প্রচারণার পাশাপাশি বিএনপির এক দফা আন্দোলন মোকাবিলায় মাঠে থাকবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আগামী জাতীয় সংষদ নির্বাচন পর্যন্ত বড় বড় গণজমায়েত দিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মাঠে সক্রিয় রাখার চিন্তা ভাবনা রয়েছে দলটির। অক্টোবর থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী প্রচারের বিভিন্ন জেলায় সমাবেশ করবেন। একই সাথে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম টানেল বঙ্গবন্ধু টানেলসহ ঢাকাচট্টগ্রামে বেশ কিছু মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এসব মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন উপলক্ষে সুধী সমাবেশে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। প্রধানমন্ত্রীর এসব সুধী সমাবেশে ব্যাপক গণজমায়েত হবে বলে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন। সেসব সমাবেশে বিপুল জনসমাগম করবে আওয়ামী লীগ। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগসহ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে এক দফার আন্দোলন শুরু করেছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। সেপ্টেম্বর থেকে এই আন্দোলন আরও জোরদার করার কথা বলা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, বিএনপি আন্দোলনে খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না। ইতোমধ্যেই তারা আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছে। এর কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন, বিএনপি যে দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে, তাতে জনগণের সমর্থন নেই। আর তা না থাকায় বিএনপি এখন সন্ত্রাস, সহিংসতার পথ বেছে নেবে বলে আওয়ামী লীগের আশঙ্কা।

তবে বিএনপির এই সরকার পতনের আন্দোলনসহ যেকোনো তৎপরতা প্রতিহত করতে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দুইভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার এবং আওয়ামী লীগ।

এই ব্যাপারে আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি বলেন, সেপ্টেম্বর থেকে আমরা নির্বাচনী প্রস্তুতির পাশাপাশি বিএনপিজামায়াতের দেশবিরোধী সকল ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় আমাদের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবো। তারা জনগণের রায় মানে না, তারা বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়। সেজন্য তারা আগামী নির্বাচন বানচালে নানানমুখী ষড়যন্ত্রে মেতেছে। তাদের কোনো ধরনের নাশকতা এই বাংলাদেশের জনগণ মেনে নেবেনা।

এদিকে আওয়ামীলীগের নীতিনির্ধারকরা শোকের মাস আগস্টের আগেই দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন সেপ্টেম্বর থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করার জন্য।

আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক কার্যতালিকা অনুযায়ী গত জুলাই মাসে দলের সাংগঠনিক কার্মকাণ্ড (জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, মহানগরীর ওয়ার্ডথানা সম্মেলনের) পরিচালনার পাশাপাশি বিএনপিজামায়াতের আন্দোলন মোকাবেলায় ব্যস্ত সময় কেটেছে। জুলাইয়ের পরে আগস্ট মাসব্যাপী জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি নিয়ে দলের নেতাকর্মীরা মাঠে সক্রিয় ছিলেন।

এদিকে সেপ্টেম্বর থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় রাখার জন্য নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে আগামী ১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগ ৫ লক্ষাধিক ছাত্রশিক্ষার্থীবন্ধুদের নিয়ে ছাত্র সমাবেশের আয়োজন করেছে। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পরদিন ২ সেপ্টেম্বর বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এ উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখবেন। সুধী সমাবেশকে ঘিরে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলো ব্যাপক গণজমায়েতের প্রস্তুতি নিয়েছে।

এদিকে অক্টোবর থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচনী প্রচারে বিভিন্ন জেলায় সমাবেশ করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সেসব সমাবেশে বিপুল জনসমাগম করবে আওয়ামী লীগ। এদিকে আগামী ২০ অক্টোবর রাজধানীর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্যায়ে মেট্রোরেলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। মেট্রোরেলের এই অংশের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হবে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখবেন।

এদিকে অক্টোবরের শেষের দিকে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন, লালখান বাজার থেকে বিমান বন্দর পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটারের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার রেলপথের উদ্বোধন করবেন। ২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী টানেলের আনোয়ারা অংশে সুধী সমাবেশ করার কথা রয়েছে। এই সুধী সমাবেশ দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৮ উপজেলা থেকে ব্যাপক নেতাকর্মীর জনসমাগম হবে বলে দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন।

বিএনপির নাশকতা মূলত আন্দোলন মোকাবেলার ব্যাপারে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী বলেছেন, আমরা কোনো ইস্যুহীন আন্দোলনকে ভয় করি না। কারণ আন্দোলনের মাধ্যমেই আমাদের জন্ম। বিএনপিজামায়াতের যে কোনো ধরনের নাশকতা বিরোধী আন্দোলন আমরা রাজপথে মোকাবেলা করবো।

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, সেপ্টেম্বর মাস এলেই নাকি স্বাধীনতা বিরোধী বিএনপি ও তার অনুসারীরা দেশকে কথিত আন্দোলনের নামে উল্টেপাল্টে দেবেন। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে তারা নাকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের তারা পদত্যাগ চায়। এই দুঃস্বপ্ন বাস্তবায়নে তাদের কোন মুরব্বী সায় না দিলেও তারা মাঠে নেমেছেন অবৈধ পন্থায় সরকার পতনের নীলনকশা বাস্তবায়নে। আমরা এসব পাকিস্তানি প্রেতাত্মাদের চিনি এবং জানি। তারা যদি আবার জ্বালাও পোড়াও করে তাহলে রাজপথে আছি এবং রাজপথে থাকবো। আমরা সকল ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড আন্দোলন মোকাবেলায় প্রস্তুত আছি। সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই আমাদের নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনী প্রস্তুতি এবং সাংগঠনিক কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকবো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজামায়াত-শিবিরের ৪০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ
পরবর্তী নিবন্ধস্বাগতিক শ্রীলংকার বিপক্ষে আজ মাঠে নামবে সাকিবরা