এক সপ্তাহ ধরে সড়কটি ডুবে আছে কাদাপানিতে

ওমর আলী মাতব্বর লেন ।। মেয়রের ক্ষোভ, বির্জা খালের বাঁধকে দুষলেন এলাকাবাসী ।। বাড়ছে চর্মরোগের ঝুঁকি

মোরশেদ তালুকদার | সোমবার , ২০ নভেম্বর, ২০২৩ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

রোববার বেলা ১১টা। মেঘমুক্ত আকাশে রোদের ঝিলিক। কর্ণফুলী নদীতে তখন ভাটা। তবু কাদাপানিতে ডুবেছিল নগরের ওমর আলী মাতব্বর লেইন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৬ নং পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডে সড়কটির অবস্থান।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত ছয়দিন ধরে সড়কটির প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকা পানিতে তলিয়ে আছে। এতে চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তি হচ্ছে তাদের। কাদাপানির কারণে পথচারীদের চর্মরোগের ঝুঁকি বাড়ছে বলে অভিযোগ করেন তারা।

জানা গেছে, ওমর আলী মাতব্বর লেইনের দুই পাশে রয়েছে প্রচুর আবাসিক ভবন ও দোকানপাট। আশেপাশের আবাসিক এলাকার বাসিন্দা, মসজিদের মুসল্লি, স্কুলকলেজের শিক্ষার্থী, কর্মজীবীসহ প্রতিদিন কয়েক লক্ষ লোক এ সড়ক ব্যবহার করে যাতায়াত করেন। সড়কটি ডুবে থাকায় সমস্যা হচ্ছে তাদের। এছাড়া কাদাপানিকে পুঁজি করে ওই সড়কে চলাচলকারী রিকশা ও সিএনজি চালকরা বাড়তি ভাড়া দাবি করছেন। এতে অতিরিক্ত খরচ যোগ হয়েছে স্থানীয়দের।

বৃষ্টি না হলেও সড়ক পানিতে ডুবে থাকার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, সড়কের পানি ড্রেন হয়ে বির্জা খাল হয়ে কর্ণফুলী নদীতে পড়ে। জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের আওতায় চলছে বির্জা খালের উন্নয়ন কাজ। কাজের সুবিধার্থে সেখানে দেওয়া হয়েছে একটি বাঁধ। ওই বাঁধের কারণেই মূলত আটকে আছে পানি। এমনটিই দাবি করেছেন স্থানীয়রা। বাঁধের বিষয়ে জানার জন্য মেগা প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মোবাইলে চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, কোনো বৃষ্টি নেই, এরপরও পানি কেন জমে থাকবে? নিশ্চয়ই পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ আছে। সেখানে মেগা প্রকল্পের জন্য খালে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। তাই পানি যেতে পারছে না। মানুষের বাসাবাড়ি ও স্যুয়ারেজের পানিও যেতে পারছে না। মানুষ চরম অসন্তুষ্ট। ব্যক্তিগতভাবে আমিও ক্ষোভ প্রকাশ করছি। সিডিএর প্রতি আহ্বান থাকবে, তারা যেন দ্রুত বাঁধ অপসারণ করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দেয়। অথবা আটকে থাকা পানি চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। মেয়র বলেন, প্রকল্প হচ্ছে মানুষের সুফল পাওয়ার জন্য। এখন উল্টো যদি কষ্ট পায় তা মেনে নেওয়ার মতো না।

স্থানীয় বাসিন্দা রুমন আজাদীকে বলেন, ওমর আলী মাতব্বর লেইনের হাজী অলি মিয়া সওদাগর মসজিদ থেকে শুরু হয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পানি জমে আছে। এতদিন পানির পরিমাণ বেশি ছিল। গত কয়েকদিনে একটু কমেছে। আজ (গতকাল) পানি মাড়িয়ে কষ্ট করে পরীক্ষা দিতে গেছে শিক্ষার্থীরা। মসজিদে যেতে দুর্ভোগ হচ্ছে মুসল্লিদের। সাধারণ পথচারীদেরও দুর্ভোগের শেষ নেই।

মো. আরিফ নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, পানি জমে থাকায় আমরা কষ্টের মধ্যে আছি। হাঁটাচলায় সমস্যা হচ্ছে। যারা দায়িত্বশীল আছেন তাদের কাছে অনুরোধ থাকবে পানি নিষ্কাশনে যেন দ্রুত ব্যবস্থা করে দেন।

রাশেদুল ইসলাম এক রিকশাযাত্রী বলেন, পানি নিষ্কাশনের জন্য সিডিএ কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। পানির জন্য ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না। সবসময় এখানে পানি জমে থাকে। মানুষের অনেক দুর্ভোগ হচ্ছে।

এহেছান চৌধুরী নামে এক ভবন মালিক বলেন, ১০১৫ দিন ধরে পানি জমে আছে। বৃষ্টি হওয়ায় পানির পরিমাণ বেড়ে গেছে। কাজের জন্য মনে হয় নালা বন্ধ রাখা হয়েছে। তাই পানি নামছে না। গত বছরও একই সমস্যা ছিল। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, এ বছরও সহজে পানি নামবে না। পানি জমে থাকায় সবার কষ্ট হচ্ছে। তার উপর ময়লা পানি হওয়ায় চর্মরোগের মতো সমস্যা হচ্ছে। আমার বাসার সিকিউরিটির শরীরে পাঁচড়া হয়ে গেছে। তাকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

স্থানীয় একটি ফার্মেসির মালিক বলেন, পানি জমে থাকায় যাতায়াতের পাশাপাশি ব্যবসাবাণিজ্যেরও সমস্যা হচ্ছে। দোকানদারি ঠিকমতো হচ্ছে না। আমার পায়ে ঘা হয়ে গেছে। পানি জমে থাকার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ওদিকে একটি খাল আছে। সেখান বাঁধ দিয়ে কাজ করায় সমস্যা হচ্ছে। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের প্রতি আহবান জানান তিনি।

সোলায়মান কাশেমী নামে এক পথচারী বলেন, এক সপ্তাহ ধরে পানি জমে আছে। ঝড়বৃষ্টি না হলেও এ সড়কে পানি জমে থাকে। গত কয়েকদিনে এক ফোঁটা পানিও সরেনি। এতে সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, দিনমজুরসহ সবাই ভীষণ কষ্টের মধ্যে আছে। রিকশা ভাড়ার পেছনে প্রতিদিন অতিরিক্ত ১০০ টাকা খরচ হচ্ছে আমাদের। তিনি বলেন, পাশের খালটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। যে বাঁধ আছে সেটা কেটে দিলে সমস্যা আর থাকবে না। সিটি কর্পোরেশন ও সিডিএ আন্তরিক হলে এ সমস্যা থাকবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপতেঙ্গায় চুরি হওয়া রপ্তানির পোশাক রেলওয়ে সুপার মার্কেট থেকে উদ্ধার, গ্রেপ্তার ১
পরবর্তী নিবন্ধবিপ্লব উদ্যানে নতুন করে সৌন্দর্যবর্ধন