এক যুগেও কাস্টমসে চালু হয়নি পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন

ফাইল নিয়ে ছোটাছুটি, পদে পদে ভোগান্তি

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৮ জুন, ২০২১ at ৬:৫৩ পূর্বাহ্ণ

এক যুগের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও চট্টগ্রাম কাস্টমসে এখনো চালু যায়নি পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন ব্যবস্থা। ফলে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের শুল্কায়নে এখনো আমদানিকারকদের এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে ধর্ণা দিতে হচ্ছে। এতে সময়ক্ষেপনের পাশাপাশি পণ্য খালাসেও দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাস্টমসের অনেক শীর্ষ কর্মকর্তারাই চান না, কাস্টমসে পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন চালু হোক। পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন হয়ে গেলে ৯০ শতাংশ ফাইল প্রথা উঠে যাবে। অর্থাৎ পেপারলেস ট্রেড শুরু হলে কাস্টমস কর্মকর্তাদের ফাইল জিম্মি করে উৎকোচ আদায়ও বন্ধ হয়ে যাবে। কাস্টমসের কয়েকজন স্টেকহোল্ডার বলছেন, বিভিন্ন সভা সেমিনারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনিবআর) কর্তাব্যক্তিরা কাস্টমসের পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন নিয়ে কথা বলেন। প্রায় সময় সেবাগ্রহীতাদের আশ্বস্ত করেন দ্রুত কাস্টমসের সকল কাজ পেপারলেস হয়ে যাবে। কিন্তু সেই সকল আশ্বাস কখনো বাস্তবে রূপ নেয় না। কেবল আশ্বাসের বাণী শুনে শুনে ব্যবসায়ীদের কেটে গেছে এক যুগেরও বেশি সময়। তারপরেও অবস্থা যেই লাউ, সেই কদু। এছাড়া কাস্টমসের অ্যাসাইকুডা সিস্টেম প্রায় সময় সার্ভারের কারণে স্লো থাকে। শুল্কায়নের যে কাজ এক মিনিটে হওয়ার কথা, সেখানে লাগছে ৫ মিনিট পর্যন্ত। পুরনো সার্ভারের কারণে প্রতিনিয়ত ভুগতে হচ্ছে সেবাগ্রহীতাদের। নতুন সার্ভার কেনার উদ্যোগ নেয়া হলেও সেটিও অনেক বছর ধরে ঝুলে আছে। কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম কাস্টমসে অটোমেশনের প্রক্রিয়া শুরু হয় মূলত সেই ১৯৯৪ সালে। সেই সময় নির্দিষ্ট কিছু তথ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। পরবর্তীতে গত ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ঢাকায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আধুনিক প্রযুক্তির অটোমেশন অ্যাসাইকুডা প্লাস সফটওয়্যার উদ্বোধন করা হয়। সফটওয়্যারের কিছু দুর্বলতা থাকায় গত ২০১৩ সালে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সফটওয়্যার চালু করা হয়। পরে ধাপে ধাপে কাস্টমসের সকল কার্যক্রম অটোমেশনের আওতায় নিয়ে আসার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমস সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানি রিগ্যান দৈনিক আজাদীকে বলেন, অটোমেশন মানে হলো পেপারলেস একটি ব্যবস্থা। যেখানে স্টেকহোল্ডাররা ঘরে বসে প্রয়োজনীয় নথি আপলোড করে কাজ করতে পারার কথা। এখন সেই জায়গাতে কাস্টমসের কর্মকর্তারা সবকিছু ফাইলে দেয়ার কথা বলেন। এতে যে উদ্দেশ্য নিয়ে অটোমেশন কার্যক্রম শুরু হয়, সেটি অন্ধকারেই রয়ে গেছে বলা যায়। আমরা অনেক আমদানি পণ্যের অনলাইনে বিএসটিআই’য়ের মান পরীক্ষার সনদ নিয়ে থাকি। অনলাইনে সনদ থাকার পরেও কাস্টমস কর্তারা সেটি ফাইলে দেখতে চান। এছাড়া বিভিন্ন টেবিলে টেবিলে ফাইল নিয়ে ভোগান্তি তো আছেই। কাস্টমসে পূর্ণাঙ্গ অটোমেশনের যে স্বপ্ন আমাদেরকে দেখানো হয়েছিল, আমি মনে করি সেটি ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়া অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে পরিকল্পনা মতো ব্যবহার হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) পরিচালক খায়রুল আলম সুজন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘পেপারলেস ট্রেড নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কেবল আলোচনাই চলছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ফলে কাস্টমসের স্টেকহোল্ডারদের পদে পদে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। তবে আগামী পহেলা জুলাই থেকে ব্যাংকিং সিস্টেমে বাধ্যতামূলক ই পেমেন্ট চালু হচ্ছে এটিকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। তবে এখনো আমাদের আইজিএম অ্যামেন্ডমেন্ট (সংশোধনী) এর জন্য কাস্টম হাউসে ছোটাছুটি করতে হয়। আমরা অফিসে বসে বিএলের বিপরীতে আইজিএম দাখিল করতে পারি, কিন্তু সংশোধনীর জন্য কাস্টমস কর্তারা সকল অর্জিনাল কাগজপত্র চান এবং অনেকে ঘুষও চেয়ে বসেন। আমরা চাই, আইজিএমের সংশোধনীটাও অনলাইনে হয়ে যাক।’
আমিন অ্যান্ড ব্রাদার্সের সত্ত্বাধিকারী এবং কাস্টমসের নিয়মিত বিডার ফজলুল আমিন বলেন, কাস্টমসে ই-অকশন (অনলাইন নিলাম) চালু হওয়ায় আমরা খুব খুশি হয়েছিলাম। ঘরে বসে দরপত্র জমা দেওয়া যাবে এতে ভোগান্তি কমবে এটিই মনে করেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেছে, দরপত্র জমা দেওয়া বাকি সব আগের মতোই। অর্থাৎ ফাইল নিয়ে দৌঁড়াদৌঁড়ি।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, কাস্টমসে পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি। এই করোনাকালে এটি খুব বেশি প্রয়োজন। অটোমেশন হয়ে গেলে ব্যবসায়ীরা ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাবেন এটি সহজে বলা যায়। খাতুনগঞ্জের একজন ব্যবসায়ীকে কাস্টমসে দৌঁড়াদৌড়ি করতে হলে তার কিন্তু পুরো দিন শেষ। অটোমেশন হয়ে গেলে ব্যবসায়ীদের কাজ কমে যায়।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফখরুল আলম বলেন, ধীরে ধীরে কাস্টমসে অনেক কাজই অটোমেশনের আওতায় চলে আসছে। আগামী জুলাই থেকে ই-পেমেন্ট চালু হচ্ছে। এছাড়া ই-অকশন চালু হয়েছে। কিছু কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি থাকতে পারে। পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন ব্যবস্থা করতে চালু করতে এনবিআর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিবিএ নেতা এয়াকুবের বিরুদ্ধে বিপিসির তদন্তের নির্দেশ
পরবর্তী নিবন্ধবোট ক্লাবের ঘটনা বলতে থানায় পরীমনি