অনলাইন জিডি চালু হয়েছিল ২০১০ সালের প্রথম দিকে। কয়েক বছর না যেতেই মুখ থুবড়ে পড়েছিল সেই কার্যক্রম। এক যুগ পর আবারও চালু হলো এ সেবা। গত ২১ জুন নতুন করে অনলাইন জিডির কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, এখন ঘরে বসেই নাগরিকরা অনলাইনে জিডি করতে পারবেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশ জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে জনগণের আস্থা অর্জনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন, অনলাইনে জিডি চালুর পাশাপাশি ১২টি কার্যক্রম অনলাইনে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিটি থানায় এই কার্যক্রম চালুর জন্য ইতোমধ্যে পুলিশ সদর দফতর থেকে ইউনিট প্রধানদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিএমপির কয়েকটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, অনলাইনে জিডি সেবা চালু হলেও জিডির কপি প্রিন্ট করে সরকারি জিডি বইয়ে তুলে আগের মতোই সংরক্ষণ করতে হবে। এতে কাজের চাপ আগের মতোই থাকছে। তবে নাগরিকরা থানায় না এসে জিডি করতে পারছেন, এটা একটা ভালো দিক।
অনলাইনে জিডি কার্যক্রমের পাশাপাশি যে ১২টি কার্যক্রম অনলাইনে আনার প্রক্রিয়া চলছে তার মধ্যে থানায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ডিউটি বণ্টন থেকে শুরু করে লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড ডাটাবেজ, বিট পুলিশিং ও টহল দলের গতিবিধির লাইভ তদারকি, অটো সুরতহাল রিপোর্ট মেকার, এমপ্লয়িজ ডিজিটাল অ্যাটেনডেন্স উইথ লোকেশন ট্র্যাকিং অ্যান্ড ফটো ম্যাচিং মোবাইল অ্যাপস, ডিজিটাল ডিউটির ফলাফল মূল্যায়ন এবং লাশ শনাক্তে ফটোম্যাচিংয়ের মতো ডিজিটাল উদ্যোগ রয়েছে।
এছাড়া যেসব সেবার ডিজিটালাইজেশন হবে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে জিডি তদন্ত সংক্রান্ত অনুসন্ধান কার্যক্রম ও জিডি সংক্রান্ত ওবি প্রদান, থানায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ডিউটি বণ্টন, অনলাইন জিডি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ও অনলাইন জিডি মোবাইল অ্যাপস ফর সিটিজেনস, ছুটি ও সিসি ব্যবস্থাপনা, অ্যাপভিত্তিক যোগাযোগ, মামলা বা জিডি সংশ্লিষ্টদের আবাসস্থল চিহ্নিতকরণ ও সকল পুলিশ কর্মকর্তার জন্য একক ফোন বুক।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত জুনের প্রথম সপ্তাহে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পুলিশের সকল ইউনিট প্রধানসহ ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারদের কাছে পাঠানো হয়েছে। নতুন অনলাইন সেবাটিকে সিডিএমএস প্লাস নাম দেওয়া হয়েছে। থানা পর্যায়ে এ কার্যক্রম চালুর জন্য প্রতিটি ইউনিটকে নিজ উদ্যোগে দক্ষ জনবল তৈরি করতে বলা হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র আরো জানিয়েছে, কেন্দ্রীয়ভাবে প্রতিটি জেলা বা ইউনিটের এএসআই থেকে অ্যাডিশনাল এসপি পর্যায়ের ৩-৫ জন কর্মকর্তাকে টিওটি বা ট্রেইনার অব ট্রেনিং কোর্স করানো শুরু হয়েছে। তারা ইউনিটের অন্যান্য কার্যালয় ও থানা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেবেন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, থানায় ডিজিটাল কার্যক্রমে যারা যুক্ত থাকবেন তাদের ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি ইউনিট প্রধানদের মাধ্যমে একটি নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। এতে ইউনিট প্রধান তার কার্যালয়ে বসেই সব ডিজিটালি মনিটরিং করতে পারবেন। এজন্য সকল জেলার পুলিশ সুপার, বিভিন্ন ইউনিট প্রধান ও থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের অনলাইনে দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে ক্রিমিনাল ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (সিডিএমএস) আওতায় দেশের গ্রেপ্তার হওয়া সকল অপরাধীর তথ্য ও মামলা সংক্রান্ত বিষয় অনলাইনে সংরক্ষণ করছেন পুলিশের সদস্যরা। এতে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা অপরাধীর আগের যাবতীয় রেকর্ড চেক করতে পারছেন। এছাড়া দেশ জুড়ে অ্যাপস ছাড়াও জিডি ডট পুলিশ ডট গভ ডট বিডি ওয়েবসাইটে গিয়েও জিডি করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে আবেদনকারীকে অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র, মোবাইল নম্বর ও জন্মতারিখ দিতে হয়। মোবাইলে অটো ম্যাসেজ পদ্ধতিতে পরিচয় যাচাইয়ের পর জিডির কারণসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়। এর আগে অপরাধ ঠেকাতে ই-পুলিশিং, ট্রাফিক পুলিশের বডি ওন ক্যামেরা চালুর মতো নানা উপায়ে পুলিশের ডিজিটাল রূপান্তরে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়।