বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন উপলক্ষে গত মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত প্রস্তুতিমূলক সভায় সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন জানিয়েছেন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। এখন উদ্বোধনের অপেক্ষা। আগামী ২৮ অক্টোবর টানেল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী ইতোপূর্বে এই টানেল চালু হলে দেশের অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে আশা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি গত ২৬ নভেম্বর গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে টানেলের একটি টিউবের উদ্বোধন শেষে একথা বলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘মনটা পড়ে রয়েছে চট্টগ্রামে। বিরাট কাজ বলে মনে করি’। টানেল নির্মাণে যারা জড়িত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু টানেল চট্টগ্রামের গুরুত্ব বাড়ানোর পাশাপাশি বিশ্বে বাড়াবে বাংলাদেশের মর্যাদা। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় নানা পরামর্শ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, দেশের সমুদ্র সম্পদ আহরণসহ চট্টগ্রাম–কক্সবাজারকেন্দ্রিক আরো কিছু মেগা প্রকল্পের ভাবনা রয়েছে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে স্থাপিত টানেলের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নদীর তলদেশ থেকে টানেল বিদেশে দেখেছি। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় এটাই প্রথম। চট্টগ্রাম একসময় অবহেলিত ছিল। আমরা ক্ষমতায় আসার পর ব্যাপক কাজ করেছি। টানেল স্থাপনের ফলে চট্টগ্রামের গুরুত্ব আরও বেড়ে যাবে বলেও জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গে টানেলটি চালু হলে চট্টগ্রামসহ সারা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলেন, টানেলর কারণে মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বিনিয়োগের বিশাল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আবার টানেল ব্যবহার করে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ সারা দেশের কারখানার পণ্য কক্সবাজারের মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরে আনা নেওয়া করা যাবে দ্রুত সময়ে।
সেতু সচিব প্রস্তুতিমূলক সভায় বলেছেন, টানেলে কোন কোন গাড়ি চলবে তা সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। টোলও নির্ধারণ করা হয়েছে। আমাদের ডিজাইন অনুযায়ী, টানেলের ভিতর ৮০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চলবে। যেহেতু টানেল কনসেপ্ট আমাদের জন্য নতুন, সেজন্য কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। টানেল অন্য যেকোনো ব্রিজ বা সড়কের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হচ্ছে। সেই ধারণা থেকে এই মুহূর্তে বাইক ও থ্রি–হুইলার চালানো টানেলের জন্য নিরাপদ হবে না। এতে টানেলও নিরাপদ থাকবে এবং যারা টানেল ব্যবহার করবেন তারাও নিরাপদ থাকবেন। বঙ্গবন্ধু টানেলের মধ্যে সর্বসাধারণের জন্য নির্দেশনা থাকবে এবং সেখানে ৮টি রেডিও চ্যানেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দেশনাগুলো চলতে থাকবে। টানেলের ভেতর যে ফ্রিকুয়েন্সি থাকুক না কেন, গাড়ি যতক্ষণ টানেলে থাকবে ততক্ষণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে এ দিকনির্দেশনা চলবে। টানেলে কোন গাড়ি চলতে পারবে এবং কোনটি চলতে পারবে না সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। টোল হার নির্ধারণ হয়েছে।
বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে টানেল প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। চীনের এক্সিম ব্যাংক ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে এবং বাকি অর্থ দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। চীনের এক্সিম ব্যাংক দুই শতাংশ হার সুদে এই ঋণ দিয়েছে।
শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের কারণে চট্টগ্রাম অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাপকহারে বাড়বে। এর প্রভাব পড়বে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ছাড়াও পর্যটন নগর কক্সবাজার এবং পার্বত্য জেলা বান্দরবানের সেতুবন্ধ তৈরি করবে। তাঁরা বলেন, এই টানেল বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও জীবনমান উন্নয়ন, নগরায়ণ ও সমৃদ্ধির পথে যুক্ত করছে নতুন পালক। টানেলের কারণে চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক গুরুত্ব আরও বেড়ে যাবে। শুধু চট্টগ্রাম নয়, এই টানেলের কারণে বাংলাদেশও অনেক দূর এগিয়ে যাবে। মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর থেকে সহজেই সারা দেশে পণ্য আনা–নেওয়া যাবে। টেকনাফ থেকে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল পর্যন্ত শিল্পায়নের বিপ্লব ঘটবে। বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। টানেলের কারণে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগব্যবস্থাও উন্নত হবে।
বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন মানে মহা এক যজ্ঞের আয়োজন। নগরবাসী সেই মহাযজ্ঞের জন্য অধীর অপেক্ষায় আছেন।