শ্রমিক–কর্মচারীদের লভ্যাংশের অর্থ আত্মসাতের মামলায় আদালতে শুনানি শেষে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো নজির নেই যে, এক নোবেল বিজয়ীর বিরুদ্ধে আরেক নোবেল বিজয়ী মামলা করেছে। এটা আমাদের কপালে হয়েছে, এটা অভিশাপের একটা অংশ। এ অভিশাপ আমরা বহন করে যাচ্ছি।
গতকাল গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক–কর্মচারীদের লভ্যাংশের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির পর আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এ কথা বলেন। ঢাকার চার নম্বর বিশেষ জজ সৈয়দ আরাফাতের আদালতে এ শুনানি হয়, যার আদেশ হবে আগামী ১২ জুন। সেদিন জানা যাবে এ মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হবে কিনা। খবর বিডিনিউজের।
কাঠগড়া থেকে নেমে সাংবাদিকদের সামনে ইউনূস বলেন, মহাকাব্যে দেব–দেবীরা অভিশাপ দেয়। আমিও মনে হয় এ রকম মহাকাব্যের অংশ হয়ে গেছি। কোনো দেব–দেবী আমাকে অভিশাপ দিয়েছে। আমার ওপর অসন্তুষ্ট হয়েছে। অভিশাপের কারণেই আমরা দুদকের এখানে এসেছি। এই প্রথম লোহার খাঁচায় কাঠগড়াতে দাঁড়াতে হলো। এটা একটা দেখার মতো দৃশ্য। এটা আমার জীবনের একটা স্মরণীয় ঘটনা যে, লোহার খাঁচার ভেতরে দাঁড়িয়ে আছি আদালতের কাঠগড়ায়। এ হলো অভিশপ্ত জীবনের একটা অংশ।
গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে আলাদাভাবে তার নোবেল পুরস্কার পাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমার নোবেল পুরস্কারের কথা সবাই জানি। দুটো নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। একটা আমার নামে, আরেকটা গ্রামীণ ব্যাংকের নামে। দুটোরই সমান মর্যাদা। এটা যৌথভাবে দেওয়া হয়েছে তাও না, দুটোই ইনডিপেন্ডেন্ট (স্বতন্ত্র)। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো নজির নাই যে, এক নোবেল বিজয়ীর বিরুদ্ধে আরেক নোবেল বিজয়ী মামলা করেছে, দুদকে হাজির হয়েছে।
২০০৬ সালে ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক স্বতন্ত্র ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান হিসেবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পায়। পুরস্কার স্বতন্ত্র হলেও ব্যক্তি ইউনূসের কারণেই গড়ে ওঠা গ্রামীণ ব্যাংক এ মর্যাদা পায় বলে তিনি মনে করেন। এখন সেই প্রতিষ্ঠানই তার বিরুদ্ধে আদালতে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, বিষয়টা এমন হয়েছে যে, পিতা–পুত্রের সম্পর্কের মতো এখানে দুই নোবেল বিজয়ী। আমার কারণে যেটা (গ্রামীণ ব্যাংক) সৃষ্টি হয়েছে, নোবেল পুরস্কার পেয়েছে; সেটাও আমার সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে। কিন্তু তারা সেটাকে আমার বিরুদ্ধে এমনভাবে নিয়ে আসল, খুব কঠিন ভাষায়, রূঢ় ভাষায় আক্রমণ করল। অভিযোগ থাকতে পারে, কিন্তু রূঢ় ভাষায় আক্রমণ করে অভিযোগ করল, যে অভিযোগের ভিত্তি নেই। ঘটনার মধ্যে কোনো সত্যতা তো নেই, যে জিনিস দিয়ে দিয়েছিলাম, সেটার জন্যই আমাকে অভিযুক্ত করা হলো যে, অনেক টাকা মেরে দিয়েছি ইত্যাদি।
গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক–কর্মচারীদের লভ্যাংশের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইউনূসের বিরুদ্ধে এ মামলা করে দুদক। গতকাল এ মামলায় ১৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে সাড়ে ৩ ঘণ্টা ধরে শুনানি হয় ঢাকার চার নম্বর বিশেষ জজ আদালতে।