এই সংবিধানে গণভোট নিয়ে কিছু নেই : খসরু

জামায়াতের আহ্বানে বিএনপি বসতে রাজি হয়নি, বিএনপি ডাকলে আমরা আলোচনায় প্রস্তুত, বললেন জামায়াত নেতা আজাদ

| রবিবার , ৯ নভেম্বর, ২০২৫ at ৪:২১ পূর্বাহ্ণ

বর্তমান সংবিধানে গণভোটের বিধান নেই; আগামী সংসদে বিধান যোগ করার পরেই কেবল গণভোট আয়োজন করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেছেন, বর্তমান সংবিধানের পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে। তারা এই সংবিধানের অধীনে শপথ নিয়েছেন। এই সংবিধানে গণভোট নিয়ে কিছু নেই। আগামীতে নির্বাচনে পাস করে সংসদে গিয়ে সংবিধানে গণভোট যুক্ত করার পর গণভোট আসতে পারে। গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘নির্বাচনি ইশতেহারে প্রযুক্তির ব্যবহার’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জামায়াত ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বুলবুল সিদ্দিকী, বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি সাদিক কায়েম ও বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক আবদুস সাত্তার দুলাল। খবর বিডিনিউজের।

আমীর খসরু তার বক্তব্যে আরও বলেন, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কেমন জানি একটা স্বৈরাচারী মনোভাব চলে আসছে। ঐকমত্যের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আমাদের ৩১ দফার অনেক কিছুই ঐকমত্যের মধ্যে আসেনি, তাই বলে কি আমি মাঠে নামব? আমি জনগণের কাছে যাব। কথায় কথায় আপনি দাবি নিয়ে রাস্তায় যাবেন, সেটা হবে না। আপনাদের দাবি নিয়ে মাঠে যাবেন, এর বিপরীতে যদি দেশের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক দল কর্মসূচি দেয়, তাহলে সংঘর্ষ বাঁধবে না?

তিনি বলেন, ঐক্যমতের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। চ্যাপ্টার ক্লোজড। আপনার চিন্তাভাবনা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। আপনি ক্ষমতায় আসেন, এরপরে আপনি পরিবর্তন করুন। নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র হিসেবে চট্টগ্রামে নির্বাচনি প্রচারণার খুনের ঘটনার মতো আরও ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে একটা হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সেখানে একটি দলের ছাত্র সংগঠনের সাবেক নেতাকর্মীদের অন্তর্কোন্দলের মাধ্যমে ঘটেছে। যারা নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা করছে, তারা ঘটিয়েছে কিনা, সেটা আমাদের সন্দেহ।

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটের দিণক্ষণ নিয়ে সমঝোতায় আসতে গেল মঙ্গলবার রাজনৈতিক দলগুলোকে এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দেয় সরকার। সেমিনারে এ বিষয়ে জামায়াত ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, বিএনপি ডাকলে তারা আলোচনায় বসতে রাজি আছে। জামায়াতের আহ্বানে বিএনপি বসতে রাজি হয়নি। আমরাও চাই না রাজনীতি আবার ফ্যাসিবাদী কালচারে ফিরে যাক। বিএনপি আহ্বান করলে আমরা আলোচনায় যেতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, জামায়াত আলোচনাতেই ছিল। একইসঙ্গে রাজপথে থাকা রাজনৈতিক সংস্কৃতি, গণতান্ত্রিক সৌন্দর্য। আমরা সহিংসতায় যাচ্ছি না, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আছি।

আযাদ বলেন, জামায়াত কোনো প্রেশার গ্রুপ নয়, বরং জনগণের মতামত ও প্রত্যাশা প্রতিফলিত করতে রাজপথে রয়েছে। আমরা মতভিন্নতা মেনে নিতে পারি, কিন্তু মতবিরোধ চাই না। নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবেুএমন প্রত্যাশা নিয়ে আমরা এগোচ্ছি। জনগণের অভিপ্রায় এখন একটি সুন্দর ও পরিবর্তিত বাংলাদেশ গড়া। সেই লক্ষ্যেই সংস্কারের মধ্য দিয়ে রাজনীতি এগিয়ে নিতে হবে।

জামায়াতের এই নেতা বলেন, আমরা কি আবার ফ্যাসিবাদী সময়ের মতো সনদকে অনিশ্চয়তার ফাঁদে ফেলছি? গণভোট আগে হলে প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের জন্য সেটি হবে আসল অ্যাসিড টেস্ট। তাহলে জাতীয় নির্বাচনে মানুষ আস্থার সঙ্গে যেতে পারবে।

নোট অব ডিসেন্টের সম্পর্কে তিনি বলেন, কিছু নোট অব ডিসেন্টসহ সনদ সই হয়েছে। বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সনদের বাইরের বিষয়। ফলে সেখানে নোট অব ডিসেন্ট নেই। বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পেশ করার পরই মতভিন্নতা তৈরি হয়েছে। অতীতে মানুষের আস্থা নষ্ট করা হয়েছে, এখন সেই আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। ২৭ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে, সেখানে জনস্বার্থে একদেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে গণভোট করা কোনো অপচয় নয়।

এর আগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘জনতার ইশতেহার’ ও ‘অনলাইন প্রমিজ ট্র্যাকার’র ওয়েবসাইট ও অ্যাপের উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে মডারেটর ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাহাব এনাম খান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলাইটারেজ জাহাজ সেক্টরে বিশৃঙ্খলা, সংকট
পরবর্তী নিবন্ধরিটার্নিং, সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও প্রার্থীসহ ৬০ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ