শহরের পানি নিষ্কাশনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাক্তাই খালের মুখে ২০১৮ সালের ৬ জুন পাম্প হাউজসহ স্লুইচ গেইট নির্মাণ কাজের উদ্বোধন হয়েছিল। তিন বছর শেষে এ স্লুইচ গেটের মাত্র ‘স্ট্রাকচার’ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এখনো পাম্প ও গেইট বসানোর কাজ শুরু হয়নি। পাম্প ও গেট ইউরোপের একটি দেশ থেকে আসার কথা। করোনা পরিস্থিতির কারণে যা আগামী তিন-চার মাসেও আসা অনিশ্চিত। ফলে চলতি বর্ষায়ও স্লুইচ গেটের সুফল পাবে না নগরবাসী।
চাক্তাই খালের মুখে স্লুইচ গেট নির্মাণ করা হচ্ছে সিডিএর ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর চাক্তাই খাল থেকে কালুরঘাট সেতু পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’ র্শীষক প্রকল্পের আওতায়। একই প্রকল্পের আওতায় চাক্তাইসহ শহরের মোট ১২টি খালের মুখে স্লুইচ গেট নির্মাণ কাজ করা হবে। এর মধ্যে চাক্তাইসহ ৭টির ৮০ শতাংশ ও ৩টির ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি দুটির কাজ প্রাথমিক অবস্থায় আছে। স্লুইচ গেট ছাড়াও প্রকল্পটির আওতায় চাক্তাই খাল থেকে কালুরঘাট সেতু পর্যন্ত কর্ণফুলীর তীরবর্তী সড়কসহ অন্যান্য উন্নয়ন কাজ করা হবে।
সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, ২৩১ কোটি ২৪ লাখ ২০ হাজার টাকার প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল একনেকে অনুমোদন হয়। চলতি মাসে তথা ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। অথচ এখন পর্যন্ত মোট প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ। অবশ্য প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে সিডিএ। নগরের একাংশের জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত প্রকল্পটি আউটার রিং রোড প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়।
স্লুইচ গেট নির্মাণ : চাক্তাই খালের মুখে নির্মাণাধীন স্লুইচ গেইটের দৈর্ঘ্য ৬০ মিটার, প্রস্থ ১২ মিটার ও উচ্চতা হবে ৩০ ফুট। এখানে থাকবে পাম্প হাউজ, জেনারেটর ও সাব স্টেশন। বাকি ১১টি খালের মুখেও পাম্প হাউজ ও জেনারেটর থাকবে। প্রতিটি খালের মুখের ৮টি পয়েন্টে মাটি পরীক্ষা করে জল কপাটের নকশা করা হয়েছে। স্লুইচ গেইটগুলো চালু হলে চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, বঙিরহাট, বৃহত্তর বাকলিয়া, চান্দগাঁও ও কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে সহায়ক হবে।
সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, ১২টির মধ্যে ৭টির স্ট্রাকচার কাজ শেষে হয়েছে। খালগুলো হচ্ছে চাক্তাই, রাজাখালী খাল, রাজাখালী শাখা খাল-১ ও ২, বলিরহাট খাল ও বলিরহাট এলাকায় দুইটি শাখা খাল। একে খান ও ফরেস্ট খালের মুখে স্লুইচ গেইট নির্মাণ কাজ এখনো প্রাথমিক অবস্থায় আছে। এছাড়া ইস্পাহানি ও নোয়াখালসহ তিনটিতে স্ট্রাকচার নির্মাণ কাজ চলছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী রাজীব দাশ আজাদীকে বলেন, চাক্তাইসহ ৫টির মুখে স্ট্রাকচার কাজ শেষ হয়েছে। সেখানে এখন ইলেক্ট্রো-মেকানিক্যাল কাজ বাকি আছে। এর মধ্যে পাম্প ও গেইট আছে। এ দুটো আসবে ইউরোপ থেকে। কিন্তু চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে আসতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। তাই এবার বর্ষা মৌসুমে পাম্প ও গেইট বসানো যাবে না। আশা করছি, তিন থেকে চার মাস লাগবে প্রোডাকশন হয়ে আসতে। সব মিলিয়ে অপারেশনে যেতে আরো চার-পাঁচ মাস সময় লাগবে।
প্রকল্পের অন্যান্য কাজ : প্রকল্পের উন্নয়ন প্রস্তবনা (ডিপিপি) সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় চাক্তাই খাল থেকে কালুরঘাট সেতু পর্যন্ত কর্ণফুলীর তীরে ৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটারে চার লেনের সড়ক নির্মাণ করা হবে। যার উচ্চতা বিদ্যমান সড়কের চার থেকে ৯ দশমিক ৪ মিটার উঁচু হবে। সড়কের প্রস্থ হবে ২৪ দশমিক ৫০ মিটার। ২ লাখ ১২ হাজার ৫০০ বর্গমিটার রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করা হবে। তীর সংরক্ষণ এবং সড়ক নির্মাণের জন্য ৫৫ লাখ ঘন মিটার মাটি ভরাট করা হবে। সড়ক নির্মাণের জন্য ৮ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার সড়কের ২০০ মিটার পর পর সয়েল টেস্ট করে ডিজাইন তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া এলইডি বাতি স্থাপন, সিগন্যাল ও লাইন মার্কিং করা হবে।
প্রকল্পের অন্যান্য কাজের অগ্রগতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও রাজীব দাশ বলেন, মাটি ভরাট কাজ চলছে। মেগা প্রকল্প তো কাজ শেষ করতে একটু সময় লাগবে। আমরা দুই বছর মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছি। তবে আগামী বছরের মধ্যে রেগুলেটরগুলোর কাজ শেষ হয়ে যাবে। ‘স্লুইচ গেইটসহ পুরো প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি কত হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।












