কোরবানির ঈদের বাকি আছে আর দুইদিন। সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে জমে উঠতে শুরু করেছে নগরীর পশুর বাজারগুলো। গতকাল দিনভর পশুর বাজারে ক্রেতাদের লক্ষ্যণীয় ভিড় দেখা গেছে। পছন্দের গরু কিনতে ক্রেতারাও এক বাজার থেকে অন্য বাজারে হন্য হয়ে ছুটেছেন। বেপারিরা জানান, বাজারে গরুর সরবরাহ বেড়েছে। বেচাবিক্রিও বেড়েছে। এখনো গরুবাহী ট্রাক বাজারে প্রবেশ করছে। তবে গরুর সরবরাহ বাড়লেও ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর দাম এখনো চড়া রয়েছে।
গতকাল নগরীর বিবিরহাট ও কর্ণফুলী পশুর বাজার (নুর নগর হাউজিং এস্টেট মাঠ) ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের সরব উপস্থিতি ও বিক্রেতাদের হাঁকডাকে জমে উঠেছে পশুর বাজার। বিবিরহাট বাজারে আসা ক্রেতা ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, গত তিনদিন ধরে বাজারে ঘুরছি এখানে পছন্দের গরু মিলাতে পারছি না। মনে করেছিলাম, আজকে (গতকাল) হয়তো একটু দাম কমবে। কিন্তু গরু বেপারিরা এখনো বেশি দাম বলছেন। যদিও বড় গরুর দাম একটু কম আছে। কিন্তু সবাই তো আর বড় গরু কিনতে পারে না। একই কথা বলছেন বেসরকারি চাকরিজীবী ফরিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, বাজারে গরুর জন্য হাঁটা যাচ্ছে না। এমনকি এখনো ট্রাকে ট্রাকে গরু আসছে। তারপরেও বিক্রেতারা ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর দাম খুব বেশি হাঁকাচ্ছেন।
দামের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিবিরহাট বাজারে কুষ্টিয়া থেকে আসা বেপারি ইদ্রিস মিয়া দৈনিক আজাদীকে বলেন, গো খাদ্যসহ সব ধরণের পণ্যের দাম দিন দিন বেড়েই চলেছে। এছাড়া গরুর প্রতিপালন খরচও বাড়ছে। পরিবহন থেকে শুরু করে নিজেদের খরচ তো আছেই। তার ওপর গত দুইদিন আগে আমার এক লাখ টাকা দামের একটি গরু মারা গেছে। তাই আমরা কম দামে চাইলেও তাই গরু বিক্রি করতে পারি না।
কর্ণফুলী পশুর বাজারের (নুর নগর হাউজিং এস্টেট মাঠ) অন্যতম ইজারাদার এসএম মোরশেদুর রশিদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, কোরবানির বাকি আছে আর মাত্র দুইদিন। স্বাভাবিকভাবেই তাই বাজারে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। আজ (গতকাল) সারাদিন বেশ ভালো বিক্রি হয়েছে। আমাদের বাজারে পর্যাপ্ত গরুর সরবরাহ আছে।
কর্ণফুলী পশুর বাজারের এমএইচসি এগ্রো’র স্বত্বাধিকারী মুজিবুল হক চৌধুরী বলেন, বাজারে বিক্রি আগের চেয়ে বেড়েছে। আমি নিজস্ব খামারের ৬০টি গরু এনেছি। সবগুলো দেশী গরু। দেশীয় খামারীরা এখন গরু উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাজারে গরুর কোনো ঘাটতি নেই। গত তিন বছর ধরে আমি নিয়মিত গরু প্রতিপালন করছি।
এদিকে সাগরিকা পশুর বাজারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা গরু বেপারি আবদুর রহমান বলেন, এ বছর গরু এনেছি ৩৫টি। এখন পর্যন্ত বিক্রি করেছি ২৫টি। এর মধ্যে শুধু আজকে (গতকাল) বিক্রি করেছি ১০টি। এখন পর্যন্ত আমি ভালো মুনাফা করেছি। হালিশহর আই ব্লক থেকে থেকে আসা ক্রেতা সেলিম উদ্দিন বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর গরুর দাম একটু বেশিই মনে হচ্ছে। বাজারে প্রচুর গরু রয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত বিক্রেতারা দাম ধরে রেখেছেন। সাগরিকা বাজারে রাজশাহী থেকে আসা অপর গরু বেপারি শাহ আলম বলেন, সাগরিকা বাজারে সব সময় বড় গরুর চাহিদা বেশি থাকে। তাই সেই চিন্তা থেকে আমি এ বছর ২৫টি বড় গরু এনেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিক্রি করতে পেরেছি মাত্র পাঁচটা। ক্রেতারা যে দাম বলছেন, সেই দামে বিক্রি করাটা মোটেও সম্ভব না। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, এবার লোকসান গুণতে হবে। তারপরেও আশা করি আগামীকাল (আজ) সবগুলো গরু বিক্রি করতে পারবো।
উল্লেখ্য, নগরীতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় সাতটি পশুর হাট বসানো হয়। এর মধ্যে চারটি অস্থায়ী। এগুলো হচ্ছে- কর্ণফুলী পশুর বাজার (নুর নগর হাউজিং এস্টেট), সল্টগোলা রেলক্রসিং সংলগ্ন বাজার, পতেঙ্গা লিংক রোড সংলগ্ন খেজুরতলা মাঠ এবং ৪১নং ওয়ার্ডস্থ বাটারফ্লাই পার্কের পাশে। এছাড়া আছে তিনটি স্থায়ী পশুর হাট। হাটগুলো হচ্ছে- সাগরিকা পশুর বাজার, বিবিরহাট গরুর হাট ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার। এসব বাজারে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, সাতক্ষীরা, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লা, নাটোরসহ অন্যান্য জেলা থেকে গরু এনেছেন বেপারিরা। এছাড়া চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, আনোয়ারা ও বাঁশখালী থেকেও গরু আনা হয় বিক্রির জন্য।